• বুধবার , ৮ মে ২০২৪

২৮টি চার আর সাতটি ছক্কায় পাকিদের নাচাল তামিম-ইমরুল


প্রকাশিত: ১২:২৯ এএম, ২ মে ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪০ বার

 

tamim-emrul-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান.ঢাকা: ২৮টি চার আর সাতটি ছক্কায় পাকিদের নাচাল তামিম-ইমরুল। অথচ ব্যাট হাতে নেমেছিলেন পাহাড় সমান চাপ মাথায় নিয়ে। পাকিস্তানের বিশাল লিডের আকারটা নামিয়ে আনল মাত্র ২৩ রানে, সেটিও একটি উইকেট না হারিয়েও! ১৩৮ রানে অপরাজিত তামিম, ১৩২ রানে ইমরুল। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭৩ রান, যেকোনো জুটিতেই বাংলাদেশের পক্ষে নতুন রেকর্ড।

ফিল্ডিং করেছেন প্রায় ১৬৯ ওভার। বাকি সতীর্থরা সাজ ঘরের আরামদায়ক শীতলতায় কাটালেও এই দুজন মিনিট কয়েক বিরতির পরই আবার নেমেছেন ব্যাট হাতে। সেখানেও ব্যাট করে গেলেন ৬১ ওভার। প্রায় ২৩০ ওভার টানা খেলার ধকল। কিন্তু ​কী আশ্চর্য, সাজঘরে ফেরার সময় মরে যাওয়া রোদের তির্যক আলোতে উদ্ভাসিতই দেখাল তামিম ইকবাল আর ইমরুল কায়েসকে। তৃপ্তির সতেজ বাতাসে সব ক্লান্তি উধাও!

পাকিস্তানের ২৯৬ রানের লিড। ম্যাচের চতুর্থ দিন। প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া পাকিস্তানের স্পিনারদের হাত নিশ্চয়ই উশখুশ করছে! পাড়ি দিতে হবে পাঁচ-পাঁচটি দীর্ঘ সেশন।কী আশ্চর্য, সেই বাংলাদেশ পাঁচ সেশনের প্রথম দুটোতেই পাকিস্তানের বিশাল লিডের আকারটা নামিয়ে আনল মাত্র ২৩ রানে, সেটিও একটি উইকেট না হারিয়েও!

আগের টেস্টেও এই দুজন সেঞ্চুরি করেছিলেন, উদ্বোধনী জুটিতেtamim emrul-2-www.jatirkhantha.com.bd ২২৪ রান এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ মাস আগের সেই টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে, সেটি ছিল ম্যাচের প্রথম ইনিংসও।সব ক্লান্তির ধকল সামলে, চাপকে পাঁপড় ভাজার মতো মুচড়ে দিয়ে টেস্টেও নতুন বাংলাদেশের গান শোনাচ্ছে মুশফিকুর রহিমের দল, আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেই মুশফিকই ‘টেকনিক্যালি’ অধিনায়ক হিসেবে এখনো অনুপস্থিত! ফলাফল? মার খেতে খেতে ক্লান্ত পাকিস্তানিরা মাঠ ছাড়ল একেবারে নুয়ে পড়ে।

২৮টি চার আর সাতটি ছক্কা হজম করতে হয়েছে। তামিম-ইমরুল কখনো রিভার্স সুইপ কখনো ডাউন দ্য উইকেটে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন—অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স নীতি নিয়েই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। পুরো ইনিংসে পাকিস্তানের মেডেন ওভার মাত্র দুটি! ওভার প্রতি রান প্রায় সাড়ে চার!
এই খুলনায় গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম সেঞ্চুরি পেলেও সেটা ছিল এক মন্থর গতির ইনিংস। ৪৭৩ মিনিট উইকেটে থেকে ৩৩২ বলে করেছিলেন ১০৯ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেও ২৫ রান করলেন ৭৪ বল খেলে। সেই তামিম আজ স্বরূপে, স্বভাবসুলভ সেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের প্রতিচ্ছবি। কিছুক্ষণ পরপর চোখ জুড়ানো সব শটে একেকটা বাউন্ডারিতে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারি নাচিয়ে তুলছেন। তুলে নিয়েছেন সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম। টানা

তিন টেস্টে সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরিটা এলো ১২১ বলে। বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ৬২ রান। এখনো অপরাজিত ১৩৮ রানে।
তামিমের দিনে শুরুতে পার্শ্বনায়ক হয়ে ছিলেন ইমরুল। কিন্তু তিনিও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন দ্রুতই। তুলে নিয়েছেন তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। তামিম-ইমরুলের অবিচ্ছিন্ন উদ্বোধনী জুটিতে পেছনে ফেলেছে ২০১৩ সালে গল টেস্টে আশরাফুল-মুশফিকুর রহিমের পঞ্চম উইকেটে তোলা ২৬৭ রানের জুটিকে।

উইকেটের চরিত্র আসলে কী, সেটাই এক বিরাট ধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে খানিকটা বৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া আজ অবশিষ্ট ৫ উইকেটে ৯১ রান যোগ করে পাকিস্তান অলআউট হওয়ার পরও বাংলাদেশের এমন আক্রমণাত্মক শুরু! প্রথম ইনিংস আর দ্বিতীয় ইনিংসের বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে এমন পার্থক্য!

দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে উঠল ১৩৬ রান। রানরেট পাঁচের ওপর! রানের চাকা একই গতিতে ছুটেছে শেষ সেশনেও। শেষ সেশনে ১৩১। মোট রানের ১৫৪ এসেছে বাউন্ডারি থেকে। আক্রমণের চেয়ে বড় আত্মরক্ষা আর কিছু হয় না। পাকিস্তানের করা ৬২৮ রানটার কথা এরই মধ্যে ভুলে গেছে সবাই।

বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল পাঁচ সেশনে ধরে খেলা। শেষ হওয়া দুটি সেশনে বাংলাদেশ লেটার নম্বরসহ পাস করেছে! এখন বাকি শেষ দিনের তিনটি সেশন। স্বস্তির বিষয়, অবশিষ্ট সেশনগুলো রাঙিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চতুর্থ দিন শেষ করল বাংলাদেশ।