• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

হাবের অভ্যন্তরে ২২ খরগোস পাচারকারী-ধর্ম মন্ত্রণালয় ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি কার্যক্রম’ চালাচ্ছে


প্রকাশিত: ১:৪৯ পিএম, ৪ জুন ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২০৫ বার

HAAB-www.jatirkhantha.com---------------------শফিক আজিজ.ঢাকা:  হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ হাব এর অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা প্রভাবশালী মানবপাচারকারীরা এখনও বহাল তবিয়তে। এরা সরকারকে কলা দেখাানোর ফর্মূলা নিচ্ছে। খরগোস পাচারকারী চক্রটি মোটা অংকের টাকা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। হজ-ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ভাষায় ওমরাহ ও হজের সময় মানবপাচারকারীদের খরগোস পাচারকারী বলে অভিহিত করা হয়।
এই চক্রটির বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন আগে লিখিত অভিযোগ দিয়ে পত্র দিলেও বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে নিরব।তাঁরা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মত কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে ওমরা ভিসা বন্ধ হলেও মন্ত্রণালয় নিরব দর্শক ভূমিকা নিয়ে কচ্ছপ গতিতে এগুচ্ছে।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার বলেন, ‘যেসব হজ এজেন্সির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তাদের তালিকা বের করে সদস্যপদ বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’

এ প্রসঙ্গে সাবেক হাব সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, মন্ত্রণালয় জানে কারা কারা খরগোস পাচারের সঙ্গে জড়িত।এই মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দৃষ্ঠান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া না হলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে।

ওমরাহ্ ভিসায় গিয়ে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশির ফিরে না আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গত ২২ মার্চ থেকে বাংলাদেশিদের ওমরাহ্ ভিসা দেওয়া বন্ধ । ওমরাহ্ ভিসায় সৌদি আরবে গিয়ে মেয়াদ শেষে ফিরে না আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা এটিই সর্বোচ্চ।এই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে এবং তাঁদের সৌদি আরব পাঠানো ওমরাহ্ হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ অফিস। এ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাংলাদেশিদের ওমরাহ্ ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় উত্তরণে আজ বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরব যাচ্ছে।ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, পবিত্র ওমরাহ্ পালনে যেতে পুলিশি ভেরিফিকেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে না বলে কিছু হজ এজেন্সি ওমরাহ্ ভিসায় লোক পাঠাচ্ছে। ওমরাহ্ ভিসায় গেলেও তাঁরা যাচ্ছেন কাজের জন্য। এমন লোকজনই ফিরছেন না।

ওমরাহ্ ভিসায় গিয়ে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশির ফিরে না আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গত ২২ মার্চ থেকে বাংলাদেশিদের ওমরাহ্ ভিসা দেওয়া বন্ধ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদি আরবের স্থানীয় পাঁচটি হজ এজেন্সির কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের অভিযুক্ত ৩১টি এজেন্সির তালিকা পাঠানো হয়েছে।
জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যেসব এজেন্সি ওমরাহ্ ভিসায় মানব পাচার করেছে, সেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ্ পালনে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি ভিসা পাবেন না। ওমরাহ্ ভিসায় পাচার করা ব্যক্তিদের ফেরত আনার দায়িত্ব অভিযুক্ত বাংলাদেশের ওমরাহ্ এজেন্সিগুলোর। চিঠিতে ওই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে এসব এজেন্সিকে চাপ দিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, বর্তমান ওমরাহ্ মৌসুমে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯২৭ জন বাংলাদেশি ওমরাহ্ পালন শেষে দেশে ফেরেননি। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনায় সৌদি হজ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য ওমরাহ্ ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে ওমরাহ্ পরিচালনাকারী সৌদি হজ এজেন্সিগুলো জেদ্দা অফিসকে জানিয়েছে। স্থানীয় পাঁচটি এজেন্সির কার্যক্রম সৌদি সরকার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে এসব এজেন্সি অন্য কোনো দেশের ওমরাহ্ পালনকারীদেরও আনতে পারছে না।

জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি জরুরি চিঠি পাঠায়। এর একটিতে জানানো হয়, সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অনলাইন সিস্টেমে ভিসা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে; যা আগামী বছরগুলোতে ওমরাহ্ পালন এবং সুষ্ঠু¤হজ ব্যবস্থাপনাসহ দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান সোমবার সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ঈসা বিন মোহাম্মদ রাওয়াসকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি অভিযুক্ত ওমরাহ্ এজেন্সিগুলোর নাম-ঠিকানা দেওয়ার অনুরোধ জানান। চিঠিতে বলা হয়, ওমরাহ্ পালনে গিয়ে অবৈধভাবে সৌদি আরবে থেকে যাওয়া বাংলাদেশিদের যেসব এজেন্সি পাঠিয়েছে, সেগুলোর নাম-ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। যাতে ওই বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা যায় এবং দায়ী এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

ধর্মসচিব  বলেন, ‘ওমরাহ্ করতে যেতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয় না। এ বিষয়টি সরাসরি ওমরাহ্ এজেন্সি ও সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আবার পুলিশি ভেরিফিকেশনও লাগে না। এ জন্য আমরা এত দিন বলেছি, এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কিছু জানে না।’ তিনি বলেন, যেহেতু এখন জেদ্দা থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, সেহেতু মন্ত্রণালয় সৌদি হজ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে এবং এজেন্সিগুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে।

সৌদি আরবের হজ এজেন্সিগুলোর বোর্ডের চেয়ারম্যান খালেদ এ আলমোহদার বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সেলকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে অনেক টাকা নিয়ে অবৈধভাবে থাকার জন্য মানুষের কাছে ওমরাহ্ ভিসা বিক্রি করা বাংলাদেশের নয়টি ওমরাহ্ এজেন্সি ও মালিকের নাম-ঠিকানা-টেলিফোন নম্বর পাঠানো হয়। এগুলো হচ্ছে সিটি নিয়ন ট্রাভেল, মল্লিক ট্রাভেলস, অ্যাড মায়ার এয়ার ট্রাভেলস, ইজি ওয়ে ট্রাভেলস, পার্পল অ্যাভিয়েশন সিস্টেম, মাসুদ ট্রাভেলস, টপকন ওভারসিস লিমিটেড, এভারগ্রিন ট্রাভেলস ও টাইমস অ্যাভিয়েশন। এসব প্রতিষ্ঠানই ঢাকার।

এদিকে জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস থেকে অভিযুক্ত ২২টি এজেন্সির নাম ও ফেরত না আসা ওমরাহ্ যাত্রীদের সংখ্যা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী, এলাইট ট্রাভেলসের পাঠানো ৯৯২ জন, জেমিনি ট্রাভেলসের ৯৩৯, রওশন ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের ২৫৩ জন, থ্রি স্টার ট্রাভেলসের ২৪১, ফ্লাই হোমের ২১৫, আনজান এয়ার ট্রাভেলসের ১৮২, কে এস পি ট্রাভেলসের ১৮২, রয়েল এয়ার সার্ভিসেস সিস্টেমের ১৫৬, গালফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ১৪১, হাসিম ওভারসিজের ৯৪, খাদেম এয়ার সার্ভিসের ৮৬, লর্ড ট্রাভেলসের ৭৭, কুমিল্লা ট্রাভেলসের ৬৮, মদিনা এয়ার ট্রাভেলস লিমিটেডের ৬৩, ফারহান এভিয়েশন সার্ভিসের ৬০, ইস্টার্ন ট্রাভেলসের ৫৯, রাজশাহী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৩৭, শরিফ এয়ার সার্ভিস লিমিটেডের ৩৬, কানিজ ট্রাভেলসের ১৬, হাসিম এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ১৮, আল-হাজ্জ ট্রাভেলস ট্রেডের ৯ এবং মিমস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের পাঠানো তিনজন ফিরে আসেননি।
কার্যক্রম বন্ধ করা সৌদি আরবের পাঁচটি এজেন্সি হলো দাল্লাহ জেনারেল সার্ভিসেস কোম্পানি, নাজদ গ্রুপ কোম্পানি, শাগহাদিফ ট্রান্সপোর্ট কোং, আল মুসারি ফর ওমরাহ্ ইস্ট ও মোতলেক আল হারবি জয়েন্ট লায়াবেলিটি কোম্পানি।
হাব সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪০-৪৫ হাজার নাগরিক ওমরাহ্ পালন করতে যান। গড়ে এঁদের ভিসার মেয়াদ ছিল ১৪ থেকে ২৮ দিন।