• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

সুদাসল মেটাতে ভাগ্নে খুনী-ট্রিপল মার্ডারার পাকড়াও


প্রকাশিত: ১১:৪৩ পিএম, ৩১ জানুয়ারী ২৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৬ বার


তাড়াশ সংবাদদাতা : পাওনা টাকার চাপ দেয়ায় মামা বিকাশ চন্দ্র সরকার, মামি স্বর্ণা রানী সরকার ও তাদের মেয়ে তুষি সরকারকে গলা কেটে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রিপল মার্ডারের মূল হোতা রাজীব কুমার ভৌমিক। রাজীবের দাবি সুদাসল মেটাতে সে খুনী হয়েছে। বুধবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল। ৩৫ বছর বয়সী রাজীব উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, নিহত বিকাশ সরকার কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। হত্যাকারী রাজীবের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের পাশাপাশি তার ব্যবসায়িক সম্পর্কও ছিল। ঘটনার দিন বিকাশ তার ব্যক্তিগত কাজে তাড়াশ শহরের বাইরে কাটাগারি বাজারে ছিলেন। বাসায় তার একমাত্র সন্তান তুষি সরকার ও স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার ছিলেন।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে তার স্বজনরা তাদের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাড়াশ থানায় রিপোর্ট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পায়, গলাকাটা তিনটি মরদেহ পড়ে আছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিকাশ চন্দ্র সরকারের আত্মীয় সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন
। এরপর ঘটনার তদন্তে একটি টিম গঠন করে জেলা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিকে গ্রেপ্তার ও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করতে সক্ষম হয় ওই বিশেষ টিম।

পুলিশ সুপার বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর ভাগ্নে রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন মামা বিকাশ। ব্যবসা চলমান থাকাকালে হত্যাকারী রাজীব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ এ পর্যন্ত ২৬ লাখ টাকা ফেরত দিলেও চলতি বছর রাজীবের কাছে সুদসহ আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন বিকাশ।

গত ২২ জানুয়ারি দাবিকৃত টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে দেয়ার জন্য রাজীবকে চাপ প্রয়োগ করেন বিকাশ। এ নিয়ে রাজীবের মাকেও অনেক কথা শোনান তিনি। টাকার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে মামার পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রাজীব।

তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বিকাশকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেন তিনি। কিন্তু তিনি বাইরে থাকায় তাড়াশে মামার বাসায় এসে মামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের বাসাতেই থাকতে বলেন রাজীব। এ সময় তিনি কফি খেতে চাইলে মামি বাসার নিচে দোকানে কফি আনতে যান। সুযোগ বুঝে রাজীব মামাতো বোন তুষির মাথায় লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন এবং তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসুয়া দিয়ে তার গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, এর মধ্যে মামি কফি নিয়ে বাসায় ফিরলে তাকেও একইভাবে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন রাজীব। মামি ও মামাতো বোনকে হত্যার কিছুক্ষণের মধ্যে তার মামা বাসায় ঢুকলে তারও স্ত্রী-কন্যার মতো পরিণতি হয়।

তিনি আরও বলেন, তিন হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহগুলো টেনে বেডরুমে রেখে রুমে তালা দিয়ে উল্লাপাড়া ফিরে যান রাজীব। যাওয়ার পথে তিনি লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যান এবং রক্ত মাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সামিউল আলম, উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার অমৃত সুত্রধর, তাড়াশ থানার ওসি নজরুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি জুলহাস উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।