• বুধবার , ১ মে ২০২৪

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা কত?


প্রকাশিত: ১:৩৫ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ১৭ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৮২ বার

 

এস রহমান  :  আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। কিন্তু শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা কত তা কেউ জানেনা। 14 December-www.jatirkhantha.com.bdএনিয়ে কোন অনুসন্ধান হয়নি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আজ একটি ভয়াল দিন।একই সাথে স্মরণীয় দিন’ও। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধনের স্মৃতিঘেরা বেদনাবিধুর দিন আজ। বাঙালির মেধা-মনন-মনীষা শক্তি হারানোর দিন আজ।

একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিত্সক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন উদয়ের পথে দাঁড়িয়ে, ঠি ক সেই সময়ই রাতের আঁধারে পরাজয়ের গ্লানিমাখা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে।

বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে এদিনে দেশকে মেধাশূন্য করার পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ দেশের বরেণ্য ও কৃতী সন্তানদের।

জাতির এসব উজ্জ্বল নক্ষত্র হত্যার মাধ্যমে হানাদাররা আমাদের মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল লড়াকু বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করলেও যেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু, দুর্বল ও দিক-নির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। মেধা ও নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না— এমন নীল-নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই হায়েনারা বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল এই দিনে।

একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। ঠিক কতজন নিহত হয়েছিল তা নিয়েও কোন গবেষনা হয়নি। তবে যাদের নাম জানা গেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন, ড. জি সি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দীন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমেদ লাডু ভাই, খন্দকার আবু তালেব, আনম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, নূতন চন্দ্র সিংহ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহি, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীন, সায়ীদুল হাসানসহ আরো অনেকে।

বিজয়ের প্রাক্কালে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে খুঁজে খুঁজে সেরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার ঘটনায় বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন কয়েকজন ঘাতক। তার মধ্যে কারও ফাঁসি হয়েছে। আবার কাগজে কলমে দু’জন রয়েছেন পলাতকও।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সেই কলঙ্কিত ঘটনার কিছু চিত্র উঠে এসেছে সংবাদপত্র কিংবা কোনো লেখকের লেখায়। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদের রায়ে এসব লেখা বা সংবাদ স্থান পেয়েছে। ওই রায়ে মোজাহিদের ফাঁসির দণ্ড হয়েছে। যেটি উচ্চ আদালতে বহাল থাকার পর কার্যকর করা হয়েছে।

রায়ে “৭১ এর দশমাস” বইয়ের একটি অংশ উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে বলা হয়,  “পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী চরম দক্ষিণপন্থী উগ্র সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট গেস্টাপো আল-বদর বাহিনীর ঘাতকের ঢাকা শহরে যুদ্ধ ও কারফিউর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে খুঁজে খুঁজে সেরা বাংগালী অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সহিত্যিকদের রায়েরবাজার ও মীরপুর অবাংগালী অধ্যুষিত এলাকায় নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

উল্লেখ্য পাক সামরিক অফিসারদের আদেশে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হলেও এ হত্যার পরিকল্পনা তালিকা প্রণয়ন, আত্মগোপনকারী বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করা, তাদের ধরে নিয়ে নৃশংস অত্যাচারের মধ্য দিয়ে হত্যা করার কাজটি আল-বদর ও রাজাকার বাহিনীর বাংগালী সদস্য ও তাদের নেতাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়।”

“একাত্তরের ঘাতক দাললরা কে কোথায়” বইটির কিছু অংশ থেকে বলা হয়, “সেই অতি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করার জন্য আলবদররা ব্যাপকভাবে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করা শুরু করে ১০ ডিসেম্বর থেকে। কার্ফু এবং ব্লাক আউটের মধ্যে জীপে করে আলবদররা দিন রাত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ী বাড়ী যেয়ে তাদেরকে প্রথমে সারা গায়ে কাদা মাখা একটি বাসে তোলে। এরপর বাস বোঝাই বুদ্ধিজীবী সহ নানা স্তরের বন্দীকে প্রথম মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের আলবদর হেডকোয়ার্টারে নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।