• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

রাষ্ট্রপতির শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন


প্রকাশিত: ২:৫৯ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাকে শপথ পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় নতুন রাষ্ট্রপতির পাশেই ছিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, প্রধান বিচারপতি, নতুন ও বিদায়ী রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্যরা, উচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও ব্যবস্থাপকরা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাসহ প্রায় হাজারখানেক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের মঞ্চের তিনটি চেয়ায়ের মধ্যে মাঝের চেয়ারে বসেন আবদুল হামিদ। বিদায়ী রাষ্ট্রপতির ডান পাশে বসেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, বাঁ পাশে বসেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শপথে স্পিকারের সঙ্গে মো. সাহাবুদ্দিন পড়েন, ‘সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইন-অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি-পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব; আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব; এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিব।’
শপথ পাঠ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি নতুন রাষ্ট্রপতিকে করমর্দন করেন এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রাষ্ট্রপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে টানা দুই বারের মেয়াদ শেষ হল আবদুল হামিদের। বাংলাদেশে ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব করা একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান তিনি। ৪১ দিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে টানা দুই মেয়াদে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আবদুল হামিদ। ৭৩ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র রাজনীতি থেকে আইন পেশা, এরপর বিচারক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়িত্ব পালনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার রয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতির।

মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা।তিনি ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সাহাবুদ্দিন ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তার অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

সাহাবুদ্দিন পরপর দু’বার বিসিএস (বিচার) অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে উঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন। সাবেক এই ছাত্রনেতা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।