• রোববার , ৫ মে ২০২৪

‘যোগাযোগ মন্ত্রী সত্য বলেননি-ঈদে মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট’


প্রকাশিত: ৩:৫৫ পিএম, ১৭ জুলাই ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪৬ বার

eid janjot-www.jatirkhantha.com.bdলাবণ্য চৌধুরী.ঢাকা: ঢাকা থেকে রংপুরে যেতে জানজটে নাকাল হয়ে এস এম খলিল বাবু জাতিরকন্ঠে  ফোন করে জানালেন,  ‘ঈদের আগে যোগাযোগমন্ত্রী বলেছিলেন, মহাসড়কে যানজট থাকবে না। কই, তাঁর কথা তো সত্যি হলো না।লালমনিরহাটে যাবেন সৌরভ। যানজটে ক্ষুব্ধ তিনি। তাঁর কথা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা থেকে আজ শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত তীব্র যানজট । দুপুর ২টার দিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে যানবাহন চলছে। মহাসড়কে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে চন্দ্রা হয়ে কালিয়াকৈর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে চন্দ্রা থেকে জিরানী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট রয়েছে। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

eid janjot-2-www.jatirkhantha.com.bdশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের কুর্নি পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার এলাকায় চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গোড়াই, ধেরুয়া রেলক্রসিং, দেওহাটা, মির্জাপুর, শুভুল্যা, কদিম ধল্যা, পাকুল্যা, নাটিয়াপাড়া ও করটিয়া বাসস্টেশনে থেমে থেমে যানবাহন চলছে।

যানজটে আটকা পড়া ঢাকা থেকে বগুড়াগামী বাসের চালক মহর আলী (৩৫) বলেন, ‘গতকাল রাত আটটার দিকে ঢাকার মিরপুর থেকে রওনা হন। সকাল আটটায় চন্দ্রা পৌঁছান। এত দীর্ঘসময় তাঁরা যানজটেই ছিলেন।’

ঠাকুরগাঁওগামী হানিফ পরিবহনের চালক আব্দুল মন্নাফ বলেন, গাবতলী থেকে বাস ছেড়েছিল গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায়। গোটা রাস্তায় ছিল ছাড়া ছাড়া যানজট। রাত তিনটার দিকে গাড়িটি সাভারের নবীনগরের বড়াইবাড়ি এলাকায় এসে থেমে যায়। সেখানেই সকাল নয়টা পর্যন্ত তীব্র যানজট চলছে। তিনি বলেন, ‘গাড়ি আগায় না, পুরা রাস্তা জ্যাম।’

ঢাকা থেকে বুড়িমারীগামী বাস শুভ বসুন্ধরার চালক মোহাম্মদ সোলেমান বলেন, তিনিও গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে গাবতলী থেকে বাস ছেড়েছিলেন। স্বাভাবিক নিয়মে বাস চললে আজ ভোর পাঁচটার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছার কথা। যানজটের কারণে সকাল আটটা পর্যন্ত চন্দ্রায়ই বসে আছেন।

তীব্র যানজটের কারণে স্থবির হয়ে আছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। মাঝে-মধ্যে গাড়ি চললেও তা চলছে ধীর গতিতে। বৃষ্টি আর কাদাপানিতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। চালকেরা বলছেন, কাদাপানিতে সড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ায় গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হচ্ছে।

গরমে অতিষ্ঠ অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে। পোশাকশ্রমিক আবু যাবেন গাইবান্ধায়। যানজটে হতাশ তিনি। সকাল নয়টার দিকে তিনি বলেন, ‘ঈদের পরদিন চইলা আসতে হইব। রাস্তায়ই যদি একদিন থাকা লাগে, তাইলে কখন যামু আর কখন আসমু।’

মির্জাপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘পোশাক কারখানা ছুটির পর শ্রমিকেরা বাড়ির দিকে রওনা হওয়াতে যানবাহনের চাপ বাড়ে। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে যানবাহন বিকল হওয়ার পাশাপাশি চালকেরা এলোপাতাড়ি যানবাহন চালানোর কারণে যানজট লাগে। আজ সকাল থেকে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল শুরু হয়েছে।’

গাজীপুরের কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু দাউদের ভাষ্য, বৃষ্টির কারণে রাস্তা কর্দমাক্ত হওয়ায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। এতে থেমে থেমে যানজট লাগছে।

গরিবের ভরসা ট্রাক বা সিটিং সার্ভিস বাস-

পরনে সস্তা শার্ট বা সালোয়ার কামিজ। হাতে ব্যাগ। ব্যাগটি সযত্নে দুই হাতে আগলে রাখা। প্রিয়জনের জন্য অনেক কষ্টের টাকায় কেনা উপহার আছে এতে। ঈদে বাড়ি যেতে হবে। গতকাল হাড়ভাঙা খাটুনির পর ছুটি মিলেছে। তাই আজ সাতসকালেই ছুটেছেন ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে। বাসের টিকিটের অনেক দাম। তাই গরিবের ভরসা ট্রাক বা সিটিং সার্ভিস বাস। অল্প টাকায় যাওয়া যায়। কিন্তু দেখা মিলছে না।

ঢাকার গাবতলী, আশুলিয়া, সাভারের আমিনবাজার, নবীনগর এলাকায় গাড়ির অপেক্ষায় মানুষের ভিড়। ব্যাগ হাতে ছুটোছুটি করছে মানুষ। যে কয়টি ট্রাক বা সিটিং সার্ভিস বাস আসছে, হুড়োহুড়ি পড়ে যাচ্ছে। যারা উঠতে পারছেন, তাঁদের চোখেমুখে যুদ্ধজয়ের আনন্দ। যারা পারছেন না, তাঁরা আবারও অপেক্ষায়।

আজ শুক্রবার সকাল সাতটায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে হাজারো মানুষের ভিড় দেখা যায়। ভিড় শুধু গাবতলী নয়। সাভারের আমিনবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়ও। সেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রাক। ট্রাকের খোলা জায়গার ওপরে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। গরিবের জন্য এটাই অনেক। অন্তত ভিজে যেতে হবে না। যাত্রীরা এটুকু সুবিধা পেয়েই খুশি। ছোট পিকআপভ্যানও নিয়ে যাচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো ঈদে দূরপাল্লার যাত্রীদের নিয়ে যায়। তাই এসব যানবাহনেও বাড়ি যাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

গাড়ির চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে ট্রাকে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলেন হাসান নামে এক পোশাকশ্রমিক। জানালেন, গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গতকালই ছুটি পেয়েছেন। তাই আজ সকাল থেকেই ট্রাকে ওঠার চেষ্টা করছেন। বাড়ি রংপুর। সেখানেই সবার সঙ্গে ঈদ করবেন।

পোশাকশ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান যাবেন গাইবান্ধায়। অনেক ঠেলাঠেলি করে একটি ট্রাকে উঠলেন তিনি। সেখানেও তিল ধারণের জায়গা নেই। তবু তাঁর মুখে হাসি। বললেন, যত কষ্টই হোক। বাড়ি ফিরতে হবে।

এত কষ্ট করে গাড়িতে উঠেও শান্তি নেই। আছে যানজটের দুর্ভোগ। রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর থেকে সাভারের নবীনগর পর্যন্ত যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগছে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী বাস হানিফ পরিবহনের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাতটার দিকে তিনি রওনা হয়েছেন। নবীনগর পৌঁছেছেন সকাল নয়টায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি হওয়াতেই এমন যানজট বলে মনে করেন তিনি। পুলিশও গাড়ির চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানান তিনি।