• শুক্রবার , ১৭ মে ২০২৪

‘যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ায় খালেদা জিয়ারও বিচার হবে’


প্রকাশিত: ১২:৩৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৯ বার

khaladanijamiস্টাফ রিপোর্টার:    ‘যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ায় খালেদা জিয়ারও বিচার হবে’ । মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের মদদ ও মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার দায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বিচার হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ও ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, খালেদা জিয়া সেই যুদ্ধাপরাধীদেরই মন্ত্রী বানিয়ে সম্মান দিয়েছিলেন। আজ জাতির কাছে কী জবাব দেবেন খালেদা জিয়া? এদের মদদ ও মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার দায়-দায়িত্ব খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে। আর এর বিচারও অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতেই হবে।’

আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের বিচারের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। এভাবে মামলা-মামলা বলে চিৎকার করে লাভ নেই। কেননা এই মামলা হয়েছে মানুষ হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও করার জন্য। তারা মানুষ মারবে আর জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করবে, অথচ বিচার হবে না- এটা হতে পারে না। কাজেই এদেরও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশ অভিশাপমুক্ত হতে শুরু করেছে। যতই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, ততই দেশ অভিশাপমুক্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অভিশাপমুক্ত হচ্ছে বলেই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথেও অনেক বাধা! সেই বাধা অতিক্রম করেই আমরা দেশকে উন্নত করছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ও এই বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। ব্যর্থ আমরা হতে দেব না। এটি আমাদের জীবনপণ, লাল-সবুজের পতাকা সবার ঊর্ধ্বে থাকবে। রক্ত দিয়ে হলেও এর মর্যাদা রক্ষা করবো।’

বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে দেশকে গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের মর্যাদা নষ্ট হতে দেব না। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। স্বাধীনতার জন্য যে ত্যাগ, উন্নতির জন্যও তেমনই ত্যাগ চাই। এ দেশকে নিয়ে অনেক কথা, অনেকে খেলা। কিন্তু এই দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি। এই স্বাধীনতা ও দেশের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।’

তিনি বলেন, ‘একুশটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে। আর একটি দিন, একটি ঘণ্টা সময়ও আমরা নষ্ট করতে চাই না। বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে। আর কাউকে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। সবাইকে সেভাবেই কাজ করতে হবে। এদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। সেই দেশকে রক্ষা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।’

পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ গণতন্ত্রের কথা কাদের মুখে শুনি! অবৈধ সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে অবৈধভাবে যাদের জন্ম, তাদের মুখেই গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। তারা কোন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল গঠন করেছিল? তারা গণতন্ত্রের সংজ্ঞা জানে কি-না, গণতন্ত্র বানান করতে পারবে কি-না সন্দেহ আছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের ‘দুঃশাসন ও সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের’ বিবরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘তারা মানুষ খুন করেছে, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে, মানি লন্ডারিং করেছে। কত খেলা দেখিয়েছে। আর তাদের মুখ থেকে আজ গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। খুনি তো খুনিই। তাদের বিচারও বাংলার মাটিতে হবেই।’

এ প্রসঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাস অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘যারা এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, যারা পরিকল্পনা ক,রেছে, যারা অর্থ দিয়েছে, যারা মদদ দিয়েছে- তাদের প্রত্যেকের বি,চার হবেই। কাউকে ছাড়া হবে না।’

এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুঃখ হয়, স্বাধীনতাবিরোধী আর পাকিস্তানের দোসররা এখনও তাদের পরাজয় ভুলতে পারেনি। দেশে কিছু মানুষ আছে, যারা থাকে বাংলাদেশে, কিন্তু স্বপ্ন দেখে পাকিস্তানের। তাদের অন্তরে ‘পেয়ারে পাকিস্তান’। এটি বাংলাদেশ। এদেশে তারা আর পরাজিত শক্তির দালালি করতে পারবে না। এদের এই ‘পেয়ারে পাকিস্তান’ও ভুলিয়ে ছাড়তে হবে।”

এবার সাড়ম্বরে বিজয় দিবস উদযাপনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছরের বিজয় দিবস একটি নতুন চেতনা ও নতুন উদ্দীপনা নিয়ে উদযাপিত হয়েছে। এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে। যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দিয়েছিল, মিত্র হিসেবে সেসব দেশের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা স্বাধীনতার মিত্রশক্তিকে সম্মাননা দিয়েছে।’

২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ে তোলার আকাঙ্খা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গকেবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি থাকতে পারেননি, ঘাতকের বুলেটে তাকে আমরা হারিয়েছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বু ধারণ আমরা এগিয়ে চলেছি। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই। বাঙালি সব রকম অসাধ্যই সাধন করতে পারে। তারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, দেশকে গড়েও তুলতে পারবে। বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবোই।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও একেএম এনামুল হক শামীম।সভা পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল।