• শুক্রবার , ১৭ মে ২০২৪

মীর কাশেমকে ফাঁসিতে ঝুলাতে জল্লাদদের মহড়া


প্রকাশিত: ১:১৭ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৯ বার

কাশিমপুর থেকে মোস্তফা কামাল প্রধান :  রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে মীর কাশেম যখন নানা ছল ছুতায় কারক্ষেপন mir-kasem.--www.jatirkhantha.com.bdকরছেন তখন তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলানোর মহড়া দিচ্ছে  জল্লাদরা।কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক এতথ্য জানান।তিনি জাতিরকন্ঠকে বলেন, সরকারের আদেশ পেলে আমরা রায় কার্যকর করব। এজন্য আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি আছে।

জেল সুপার আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মীর কাসেম আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা। তিনি (কাসেম) চিন্তা করার জন্য আরও সময় চেয়েছেন। তবে সেই সময়টা মীর কাসেম আলীকে কত দিন দেয়া হবে তার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন,  আমাদের আইনে যত নিয়ম-কানুন আছে, সব নিয়ম-কানুন মেনে আমরা এই রায় কার্যকর করব। কোনো নিয়ম বাদ দেয়া হবে না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান  বলেন, ‘আমরা সবকিছু আইন অনুযায়ী করতে চাই। এক্ষেত্রে তাকে রায় শোনানোর দিন থেকে তিনি সাত দিন সময় পাবেন। তবে এজন্য যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে হবে। এর আগেই যদি তিনি প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

কারাসূত্র জানায়, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ আছে একটি। মঞ্চটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। মোম মাখানো দড়িতে বালুর বস্তা দিয়ে প্রাথমিক মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জল্লাদ শাহজাহান, রাজু, পল্টুসহ কয়েকজনকে।

এই জল্লাদ দল ইতিপূর্বে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত আসামি মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করেছিল। এখন সরকারের সিদ্ধান্ত পেলেই দণ্ড বাস্তবায়ন করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ একটি ব্যতিক্রমী ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কারাগার। সেখানে বন্দিদের থাকার জন্য রয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট ৬টি ভবন। প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে ২১টি করে ওয়ার্ড। এই কারাগারে ফাঁসির আসামিদের জন্য আছে ৪০টি কনডেম সেল, যার একটিতে রয়েছেন মীর কাসেম আলী।

এমনিতেই কারাগারটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বয়ে নিরাপত্তা বেষ্টিত। এরপরও যেহেতু এখানে কোনো যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড প্রথমবারের মতো কার্যকর হতে যাচ্ছে, তাই কারাগারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। এমনিতেই এই কারাগার এলাকা সম্পূর্ণভাবে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতাধীন, তারপরও নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বাড়তি কিছু সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

জেলার নাসির আহমদ জানান, মীর কাসেম আলীকে ৪০নং কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। কারাগারের চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেও তার কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি আগের মতোই সময় চেয়েছেন।

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের সময় যাতে কোনো মহল নাশকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েছে। কারাগারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল ও তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে বুধবার রাতে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি, প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য যৌক্তিক সময় পাবেন।

যৌক্তিক সময় কতটুকু এ প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, এটা নির্ভর করবে উনি যখন যে উত্তর দিচ্ছেন, সেটার ওপর। উনাকে আর কতটুকু সময় দেয়া উচিত। উনি যখন সময় চাইবেন এর পেছনে উনার একটা যুক্তি থাকতে হবে। যদি আমরা মনে করি সেটা যুক্তিসঙ্গত। সেটা সমস্যা সমাধানের জন্য কতটুকু দরকার। আমরা তখন নির্ণয় করব।

বুধবার বিকালে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন কারাগারে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করার পর কারা ফটকে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন- তার স্বামী মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের জন্য তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান)-এর জন্য অপেক্ষা করছেন। তার ছেলে ২৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে।

এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার ছেলে নিখোঁজ বলে পরিবার দাবি করেছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করেননি।

৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী ২০১২ সালে গ্রেফতারের পর থেকে এ কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের আগে তিনি এ কারাগারে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির কনডেম সেলে পাঠানো হয়।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আটটি অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৮ মার্চ আপিল বিভাগ শুধু কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে (১১ নম্বর অভিযোগ) ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।

এছাড়া আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাভোগের সাজা বহাল রাখেন।

গত ৬ জুন আপিল বিভাগ মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল রেখে ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।

মীর কাসেম ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি উত্থাপন করে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চান তিনি। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।

পরে ২৮ আগস্ট শুনানি গ্রহণ শেষ করে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজের রায় ঘোষণা করেন।