• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ


প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল এ মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। এসময় দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি, দালানকোঠা কেঁপে ওঠে।

এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার অনেক মানুষ বাড়ির বাইরে সড়কে বের হয়ে আসেন। কুমিল্লার একটি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে ৮০ জন আহত হওয়া এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি আবাসিক হলসহ বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের কয়েকটি কক্ষের পলেস্তরা খসে পড়া, দরজার কাঠ ভেঙে যাওয়া এবং আতঙ্কিত হয়ে কয়েকজন ছাত্রের ছাদ থেকে লাফ দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এই ভূমিকম্পের কারণে ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্প হাবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইউরোপীয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) ও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা- ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা থেকে ৪৬ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে এবং লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কি.মি.। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৫।

ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ। ঢাকার আগারগাঁও ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৬। আবহাওয়া অফিস বলছে এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের সময় বাড়িতেই ছিলেন নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে হঠাৎ তার চারতলা ভবন কাঁপতে থাকে। এ সময় তিনি ও পরিবারের সদস্যরা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তারা বাসার বাইরে এসে সড়কে অবস্থান নেন। তবে ভূমিকম্পে ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরপাতা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তিনি গ্রামের একটি দোকানে বসেছিলেন। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়। তিনি রাস্তায় বের হয়ে আসেন। পাশের পুকুরে দেখতে পান, পানি কাঁপছে। গ্রামের মানুষজন এখন ভূমিকম্প নিয়েই আলোচনা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, তিনি যে ভবনে অবস্থান করছিলে তার ওপরের তলাগুলোতে কারখানা রয়েছে। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে মানুষের কোলাহল শুরু হয়। কিছু পোশাকশ্রমিককে দেখা যায়, তারা পাগলের মতো ওপরতলা থেকে ভবনের নিচে নামছেন। তারা ভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।

ভূমিকম্পে কুবির হলে ফাটল

আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ফলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি আবাসিক হলসহ বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে এবং নিচে নেমে আসে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পাঁচতলার দক্ষিণ পাশের ব্লকের ৫০৪ নম্বর রুমের সামনের করিডরের মেঝের দু’টি টাইলস উঠে গেছে। একই তলায় নতুন ও পুরাতন ব্লকের সংযোগস্থলের করিডরে ফাটল দেখা গেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ ২০৪ ও ২০৫নং রুমের মাঝের সংযোগস্থলে পুরো পাঁচতলায় ফাটল তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ২০৯নং রুমেও ফাটল দেখা যায়।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের দ্বিতীয় তলার ২০৭ নম্বর রুমের দেয়ালে, টিভি রুমের সামনের পিলারের সংযোগস্থলে ফাটল দেখা দিয়েছে। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের পাচঁ তলার ৫০০১নং রুমের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের পাঁচতলার ৫১১ নম্বর রুমে, ৫০৩ নম্বর রুমে ফাটল ও চারতলার ৪০৩ নম্বর রুমের সামনের করিডরে ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া শেখ হাসিনা হল, ক্যাফেটেরিয়াসহ বিভিন্ন হলের দেয়ালের রঙের আস্তরণ উঠে গেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের পরও দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে ভবন নির্মাণের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হওয়া সত্ত্বেও এত দ্রুত ফাটল সৃষ্টি হয় কিভাবে। ভূমিকম্প যদি আরও তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে ভবনগুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে অনেকের আশঙ্কা।

প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ঘটনার পর প্রকৌশলীদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রকৌশলীরা ঘুরে ঘুরে দেয়ালগুলো দেখেছেন। তারা জানিয়েছেন এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কিছু নয়। শুধু দেওয়ালের জয়েন্টগুলোতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এরপরও তারা পর্যবেক্ষণে রাখছে ফাটল হওয়া স্থানগুলো।

আতঙ্কে লাফ দিয়ে আহত ঢাবি শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের রিডিং রুমের দরজা, ভঙ্গুর রেলিং এবং বিভিন্ন রুমের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়েছে। এসময় আতঙ্কিত হয়ে হলটির কিছু শিক্ষার্থী লাফ দেন। ভূমিকম্পের সরেজমিনে দেখা যায়, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের রিডিং রুমের দরজার ফ্রেম ভেঙে পড়েছে। ৩৫১, ২৪৪, ২৪৮, ৩৪৮, ৩৪৪ সহ আরো কিছু রুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পূর্বেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এমন অবস্থায় ভূমিকম্প হওয়ায় ভঙ্গুর এসব স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করে। ফলে ভূমিকম্পের সময়ে পুরো হলের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কিছু শিক্ষার্থী ভূমিকম্পের আতঙ্কে হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে লাফিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। তবে ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ গুরুতর আহত হয়নি।

নোয়াখালীতে আতংকে শহরবাসী

নোয়াখালি প্রতিনিধি জানান, সারা দেশের মতো শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯.৩৫ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে নোয়াখালী শহর। এতে ভয় পেয়ে অনেকে বাসাবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। একই সাথে আতংকেও ছিলেন তারা। তবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা কোনো ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেনি।
মোজাম্মেল হোসেন নামে একজন বলেন, সকালের নাস্তা করছিলাম টেবিলে। হঠাৎ পুরো বাসা ও দরজা জানালা কেঁপে উঠলো। প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে অনুমান করতে পারলাম ভূমিকম্প। মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়িত্ব ছিলো। তবে ভয় পেয়েছিলাম।নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পে জেলার কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সব কিছু স্বাভাবিক আছে।

কুমিল্লায় পদদলিত হয়ে আহত শতাধিক শ্রমিক

কুমিল্লায় কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে শতাধিক জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে জেলার চৌদ্দগ্রামে আমির শার্টস গার্মেন্টসে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, হঠাৎ ভূমিকম্পে ভবন কেঁপে উঠলে আমির শার্টস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ভবনটি ধসে পড়েছে। এতে অন্য শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক শ্রমিক আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

আমির শার্টস গার্মেন্টসের এইচআর কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমি নিজেই মাইকিং করছিলাম কেউ যেন আতঙ্কিত না হয়। এ সময় কেউ একজন বলে উঠলো ভবনে ফাটল ধরেছে। এ সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২০-২৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। আমরা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, আমির শার্টস গার্মেন্টসের ঘটনায় মোট ৮০ জন শ্রমিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭৭ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন।

বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার লক্ষণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আখতার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গবেষণায় আমরা ১২ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছি। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সাবডাকশন জোন সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হাওর হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে গেছে। এই রেখা ভারতের প্লেট, যেটা পশ্চিমে অবস্থিত, সেটি পুবের যে পাহাড়ি অঞ্চল, তার নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। এই জোনে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে। এতে ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চলটিতে সব সময় এমন ভূমিকম্প হয় না। কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি, এখানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বলক্ষণ। সাবডাকশন জোনে যে ভূমিকম্প হবেই, তার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, যে পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে, তা একদিন না একদিন বের হবেই। সেটি আজ হোক, কাল হোক বা ৭০ বছর পরে হোক। তা যদি হয় তবে তা হবে মারাত্মক ধরনের ভূমিকম্প। আর ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয়।

তিনি বলেন, ভূমিকম্পের উৎপত্তি ভূগর্ভের যত কম গভীরে হবে, তা তত বিপজ্জনক। ৫-১০ কিলোমিটার বা ২০ কিলোমিটার গভীরতা বিপজ্জনক। এখন এ ভূমিকম্প ঢাকার জন্য কতটা ঝুঁকির, সেটা সেভাবে বলা মুশকিল। বড় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হলো সিলেট থেকে কক্সবাজার জোনের যেকোনো জায়গায়।

চলতি বছরের ভূমিকম্প-

চলতি বছর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। এতে জানমালের তেমন ক্ষতি না হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলাও। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে জানমালের তেমন ক্ষতি হয়নি।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার জোড়া ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।

চট্টগ্রামে গত ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। রাজধানীর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর দূরত্ব ছিল ৪০০ কিলোমিটার।

গত ৫ মে রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে। গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে।

গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ, মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫।

গত ১৪ আগস্ট সিলেটে ফের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায়ও এটি অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের মেঘালয়, গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২২৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে।

ঠিক ১৬ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৯ আগস্ট সিলেট মহানগরীর আশপাশে ফের মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তাপুরে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসামে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলাও। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের আসামের কাছাড়ে।

১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল সদরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর অবস্থান।