• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

বঙ্গবাজারের ঈদ স্বপ্ন ছাই-আড়াই হাজারের বেশী ব্যবসায়ী পথের ফকির


প্রকাশিত: ৫:২০ পিএম, ৪ এপ্রিল ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

স্টাফ রিপোর্টার : আগুন ঝুঁকির নিষেধাজ্ঞা থাকাসত্বেও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা তা গ্রাহ্য করেনি। ফলে আগুনের লেলিহান শিখায় চারটি মার্কেটের সব পুড়ে ছাই। ঈদের জন্য কেনা সব নতুন কাপড়-চোপড় শাড়ি লেলিহান আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। এর আগে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়েছিল বঙ্গবাজার। পরে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। এরপরও ২০১৮ সালের আগুনে গুলিস্তান ইউনিটের বেশকিছু দোকান পুড়ে যায়। তারপরও বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের সম্বিত ফিরেনি। যার পরিণতিতে প্রায় আড়াই হাজার ব্যবসায়ীর ঈদ স্বপ্ন ছাই হয়ে গেছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের টানা ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।এর আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের সঙ্গে কাজ করছে সেনা, নৌ, বিজিবি ও বিমান বাহিনী। এছাড়াও আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ফায়ার সর্ভিস। তবে ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের কোনও খবরও পাওয়া যায়নি।

আগুনের ভয়াবহতার পর ভুঁইয়া ফ্যাশনের মালিক মোশাররফ কামাল ভুঁইয়া বলেন, দোকানে ঈদের আগে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার পোশাক তুলেছিলাম। আগুন লাগার পর ধোঁয়ার কারণে দোকানে ঢুকতে না পারায় একটি পণ্যও বের করতে পারিনি। ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কামাল ভুঁইয়ার জীবিকার সম্বল। কামালের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া ঘাগরা গ্রামে, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ম্যানেজার জাহাঙ্গীর ও কয়েকজন স্টাফকে নিয়ে দোকান চালাতেন কামাল। দোকানের ১৫-২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কামাল ভূঁইয়ার মত আরও অনেকে ব্যবসায়ীর দোকান, গুদাম সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে ভয়াবহ এই আগুনে।। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস মিনিট দুইয়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও বাতাসের মধ্যে ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের এনেক্সকো টাওয়ার এবং আরও কিছু ভবন।ব্যবসায়ী কামাল বলেন, ভোরে ম্যানেজার তাকে জানায় বঙ্গবাজারের কোনো এক মার্কেটের উপরের কোথাও আগুন লেগেছে, ভেতরে ঢোকা যাচ্ছে না। কোনো মালামালই সরাতে পারেনি কর্মচারীরা। কামাল বলেন, অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা এ দোকান ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল, আগুনে সব শেষ হয়ে গেলরে ভাই।
এভাবে প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ীর ঈদের নতুন কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদ সামনে রেখে বঙ্গবাজার ও আশপাশের মার্কেটের সব দোকানেই প্রচুর নতুন পণ্য তোলা হয়েছিল। কীভাবে সেখানে আগুন লাগল তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সকালে আগুন লাগার পর ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের কাউকে কাউকে মরিয়া হয়ে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অসহায়ভাবে কাঁদছিলেন অনেকে।বঙ্গবাজারের উল্টো দিকে বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স মার্কেটের ফ্যাশন ওয়্যার হাউজের মালিক মোহাম্মদ শুক্কুর আলী বলেন, মূল বঙ্গবাজারে ছয়টা মার্কেটে ছিল। এখন আর নেই, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি জানান, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স ও পাশে আরও তিনটা মার্কেটও অগ্নিকাণ্ডে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আমাদের মার্কেটের ছয় তলায় শার্টের কাপড়ের গুডাউন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাশের মার্কেটের নিচ তলায় আমাদের শো রুম। যা ছিল তাও শেষ। এখানে ১২-১৩ লাখ টাকার মালামাল ছিল।

ওদিকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা দাউদাউ করে জ্বলার পর রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের লেলিহান শিখা নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের অর্ধশতাধিক ইউনিট নিরলস কাজ করে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ হতে সময় লাগবে।আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটানো হয়।

সকাল ৯টার পর থেকে বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। তারা হাতিরঝিল থেকে পানি নিয়ে সেখানে ব্যবহার করছেন।বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশেই পুলিশ সদরদপ্তর। কিছু দূরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন। আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, এতে পুলিশ সদরদপ্তরের একটি চারতলা ব্যারাক পুড়ে গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ আহত আটজন হাসপাতালে:

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তিন সদস্যসহ আটজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) বার্ন ইনস্টিটিউটে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।আহতরা হলেন- ফায়ার সার্ভিস কর্মী রবিউল ইসলাম অন্তর, আতিকুর রহমান রাজন এবং মেহেদি হাসান। বাকিরা হলেন; নিলয়, শাহিন, রিপন, রুবেল এবং দুলাল মিয়া। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী মেহেদি হাসান।