• শনিবার , ১৮ মে ২০২৪

ফারুকী হত্যায় জামায়াত শিবির মাজার বিরোধী চক্র


প্রকাশিত: ১:১৫ পিএম, ২৮ আগস্ট ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৩ বার

 

faruki-2বিশেষ প্রতিবেদক নিজামুল হাসান শফিক,ঢাকা:

নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকান্ডে জড়িত কাউকে পুলিশ গত ১৪ ঘন্টায়ও গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার নেপথ্যে জামায়াত শিবিরবে সন্দেহ করা হচ্ছে। মোহাম্মদপুর তৈয়বিয়া কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জাতিরকন্ঠকে জানান, ফারুকী হত্যায় জামায়াত শিবির জড়িত।

ওদিকে নিহতের স্বজনরা ঘাতকদের দুই জনকে চিনতে পেরেছেন বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন।একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঘটনার নেপথ্যে আহলে সুন্নাত ও মাজার বিরোধী চক্র জড়িত থাকতে পারে।কর্নেল জিয়াউল আহসান ও ডিবি পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম  বলেন, তদন্তের পর হত্যার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তেজগাঁও থানা পুলিশ তিন প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।বৃহস্পতিবার সকালে তাদের থানায় নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।থানার ডিউটি অফিসার জানান,

রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় গতকাল বুধবার রাতে খুন হয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শাইখ নূরুল ইসলাম ফারুকী (৬০)। দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে হাত-পা বেঁধে তাঁকে গলা কেটে খুন করে।শাইখ নূরুল ইসলাম ফারুকী
ফারুকী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মতিন) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আহলে সুন্নাতের নেতা ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ইসলামিক মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। এই হত্যার প্রতিবাদে রাত নয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ফারুকীর ভাড়া বাসার সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে মোহাম্মদপুরের তৈয়বিয়া কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার কয়েক শ শিক্ষার্থী। তারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে স্লোগান দেয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ফারুকীর দুই স্ত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি পূর্ব রাজাবাজারের একটি বাড়ির তিনতলায় ভাড়া থাকতেন। প্রথম স্ত্রী ও তাঁর সন্তানেরা থাকেন মালিবাগে।
ফারুকীর ব্যক্তিগত সহকারী মারুফ হোসেনের বরাত দিয়ে ছোট ছেলে মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আহমেদ নূরী  বলেন, রাত আটটার দিকে প্রথমে দুই ব্যক্তি এসে কলবেল বাজায়। ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে বলা হয়, তারা হজে যাবে, এ জন্য হুজুরের কাছে এসেছে। দরজা খুলে তাদের বসার ঘরে বসানো হয়। ফারুকী বাইরে যাবেন জানিয়ে যা বলার দ্রুত বলতে বলেন।

যুবকেরা জানায়, তাদের লোকজন হজে যাবে, তারা বাইরে আছে। তারা ফোন করে সাত-আটজনকে ডেকে আনে। একপর্যায়ে তারা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে মারুফের হাত-পা বেঁধে ফেলে। তিনজন ফারুকীর গলায় চাপাতি ঠেকিয়ে টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে তারা ফারুকীর হাত বেঁধে তাঁকে খাবার ঘরে নিয়ে যায়। তারা পাশের ঘরে ফারুকীর দ্বিতীয় স্ত্রী, শাশুড়ি, গৃহকর্মীসহ অন্যদের হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে।
আহমেদ নূরী বলেন, রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বড় ভাই ফয়সাল দরজা খোলা পেয়ে বাসায় ঢুকে প্রথমে বসার ঘরে থাকা মারুফের বাঁধন খুলে দেন। পরে খাবার ঘরে গিয়ে তাঁদের বাবাকে গলা কাটা ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
খুনিরা ওই বাসায় থাকা অবস্থায় সেখানে যান ময়মনসিংহ থেকে আসা মাওলানা শফিকউল্লাহসহ তিনজন। শফিকউল্লাহ জানান, তাঁরা দরজায় টোকা দিলে দুই ব্যক্তি দরজা খুলে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে তাঁদের বসার ঘরে নিয়ে বেঁধে ফেলে ও মুখে কাপড়ের টুকরো গুঁজে দেয়। তখন ফারুকী পাশের ঘর থেকে আর্তনাদ করে বলছিলেন, তাঁর কাছে নগদ টাকা নেই, ব্যাংকে আছে।

তখন দুর্বৃত্তদের একজন বলে, তাহলে পাঁচ লাখ টাকা থাকার খবর কি ভুল? এরপর তিনি পাশের ঘর থেকে আর কোনো শব্দ পাননি। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা তাঁদের তিনজনের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকার মতো নিয়ে চলে যায়। পরে ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ঢুকে তাঁদের বাঁধন খুলে দেন।
ফারুকীর ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, আহলে সুন্নাত ও মাজার মতাদর্শের বিরোধীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
রাত ১০টার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র্যা বের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল আলামত সংগ্রহ করে। এ সময় সাংবাদিকদের খাবার ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।