• শনিবার , ১৮ মে ২০২৪

প্রিমিয়ার ব্যাংকে ডা. ইকবালদের মামাবাড়ির রাজত্ব! আইন লংঘন


প্রকাশিত: ৩:২৯ এএম, ২৬ নভেম্বর ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪১ বার

এস রহমান  :  আইন লংঘন করে প্রিমিয়ার ব্যাংকে ডা. ইকবালদের মামাবাড়ির রাজত্ব চলছে! ব্যাংক কোম্পানি আইনের ikbal-dudok-www-jatirkhantha-com-bd১৫(৬) লংঘন করে ডা. ইকবালরা মামাবাড়ির মত ব্যাংকটি চালাচ্ছেন।দন্ডিত হয়েও ডা. ইকবালের স্বজনরা হয়েছেন ব্যাংকটির পরিচালক’ও।অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দুদক জানায়, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। পুরো পরিবারটি বরং বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) এর সহযোগীতা  নিয়ে ব্যাংকটিকে চালাচ্ছে মামাবাড়ির রাজত্বের মত।

সূত্র জানায়, এইচ বি এম ইকবাল বেiসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে এই ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে আছেন তাঁর ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল। আরেক ছেলে মঈন ইকবাল এবং মেয়ে নওরীন ইকবালও একইভাবে ব্যাংকটির পরিচালক হয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫(৬) ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।’ দণ্ডিত কেউ পরিচালক হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁকে অপসারণ করতে পারে, কিন্তু ডা. ইকবাল পরিবারের ক্ষেত্রে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

দুদকের মামলায় ২০০৮ সালে এইচ বি এম ইকবাল, তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমসহ দুই ছেলে ও এক মেয়েকে সাজা দেন বিশেষ আদালত। এইচ বি এম ইকবাল নিম্ন আদালতে ২০১০ সালে আত্মসমর্পণ করেন এবং পরের বছর হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করেও দুদক ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি কখনো।

হাইকোর্টে তাঁদের সাজার কার্যকারিতা স্থগিত হয়, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১০ সালের নভেম্বরে। এরপর ছয় বছর চুপচাপ থেকে নতুন করে স্থগিতাদেশ চাইলে গত ১৮ অক্টোবর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ সাজা আরও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। রহস্যজনক কারণে শুনানির সময় দুদকের কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

এ অবস্থায় বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গা ঝাঁড়া দিয়ে উঠেছেন। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ওই চারজনের সাজার ওপর সর্বশেষ স্থগিতাদেশ স্থগিত চেয়ে ১৫ নভেম্বর আদালতে আবেদন করে দুদক। ১৬ নভেম্বর চেম্বার জজ আদালত ১৮ অক্টোবরের স্থগিতাদেশটি স্থগিত করেন। এ বিষয়ে ২৭ নভেম্বর (কাল রোববার) পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

সূত্র জানায়,  চলতি বছরের ২৮ জুন সোহাগ তালুকদার নামের এক ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে ইমরান ইকবালের বৈধতার প্রশ্নে রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের প্রতি রুল জারি করেন আদালত। রুলের জবাব দিতে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হলেও কেউ জবাব দেয়নি।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, রুলের জবাব তৈরির কাজ চলছে। অন্য বিষয়ে কিছু বলা কঠিন।

দুদক সূত্র জানায়, এইচ বি এম ইকবাল পরিবারকে দুদক সম্পত্তির বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, আর মামলা করে ২৭ মে। বিশেষ জজ আদালত মামলার রায় দেন ২০০৮ সালের ১১ মার্চ। রায়ে এইচ বি এম ইকবালকে অসাধু উপায়ে সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর, মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিলের কারণে আরও ৩ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে ৩ বছর করে কারাদণ্ড দেন এবং প্রত্যেককে জরিমানা করেন ১ লাখ টাকা।

দুদকের মামলা হওয়ার পর অনেক দিন আত্মগোপনে ছিলেন এইচ বি এম ইকবালসহ এই পাঁচজন। রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এইচ বি এম ইকবালের পক্ষে হাইকোর্টে আপিল করেন তাঁর ভাই এইচ বি এম শোয়েব রহমান। তখন জানানো হয়, এইচ বি এম ইকবাল চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন। হাইকোর্ট ওই দিন রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি এইচ বি এম ইকবালের পক্ষে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এর বিরোধিতা করে বলেন, আত্মসমর্পণ ছাড়া জামিন চাওয়া বেআইনি।

পরে জামিন পান এইচ বি এম ইকবাল। তিনি মামলাটি নথিভুক্ত করার আবেদন করলে ২০০৯ সালের ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট গ্রহণ করেন।ওই আবেদন গ্রহণের আদেশ বাতিল চেয়ে ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি দুদক আপিল করে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ ২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করেন। আদালতের নির্দেশে এইচ বি এম ইকবাল ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। নিম্ন আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।