• শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পার পেয়ে গেল ডলার কারসাজি’র ব্যাংকাররা


প্রকাশিত: ১১:২৮ পিএম, ১৯ মার্চ ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫১ বার

শাস্তি মওকুফ হওয়া ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : অবশেষে পার পেয়ে গেল ডলার কারসাজি’র ব্যাংকাররা। ডলার কারসাজির দায়ে শাস্তি প্রাপ্ত ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের জরিমানা মওকুফ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে পরবর্তীতে একই ধরণের অপরাধ না করার শর্ত উল্লেখ পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৩৩তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র বলছে, শাস্তি মওকুফ হওয়া ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।গত ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানিয়ে প্রথম চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বেশি দামে ডলার বেচাকেনার দায় ট্রেজারি প্রধানেরা এড়াতে পারেন এবং ব্যাংকগুলোর ‘ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়নি’ বলে প্রত্যেক ব্যাংকের ১০ জন ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পঞ্চম সভার জন্য ১৬টি পূর্বনির্ধারিত বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় করোনার সময় সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় আনসার বিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের অনুকুলে কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ খাতে ৫০০ কোটি টাকার ঋণের অনাদায়ী ৪০০ কোটি টাকার ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি ও দণ্ড সুদ মওকুফের বিষয়ে আলোচনা হয়।

এরপর বিবিধ ইস্যুতে এ বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করলে গভর্নরের সম্মতিতে ১০ ব্যাংকের প্রত্যেক ট্রেজারি প্রধানকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা মওকুফ করা হয়। তবে কেউ যেন এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটায় এবং ডলার বাজারকে অস্থিতিশীল না করে সে বিষয়ে কড়া সতর্কতা জারির কথা জানায় সভার সদস্যরা। এর আগেরও ছয় বাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে মাফ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শাস্তি প্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, বেশির ভাগ ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তাদের ব্যাংক আমদানিকারকদের কাছে বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। তবে দু-একজন ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত দামে প্রবাসী আয় কিনেছে।

এসব তো একা ট্রেজানি প্রধান করতে পারে না। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা উচ্চ পদস্থ কর্মকতা জড়িত। তাদের কিছু হয় না, অথচ ট্রেজারি বিভাগের প্রধানের শাস্তি হয়। এটা ইনসাফ না। ট্রেজারি বিভাগের প্রধান তো লেনদেন করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে। এটা নীতি নির্ধারকদের বিবেচনায় আনতে হবে। ওদিকে শাস্তি ও মওকুফের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারেননি তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ডলারের দাম নির্ধারণ করছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক একটি গ্রুপ সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আমদানি ব্যয় উল্লেখ করে একগুচ্ছ নথিপত্র জমা দেয়। এসব নথি পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক দল অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর শাখা ও প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে।

ট্রেজারি প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা মিশনের মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে জোর করে সেই দামে ডলার বেচাকেনার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বেঁধে দেওয়া দামে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় আনতে পারছে না। কারণ, ব্যাংকের বাইরে ডলারের দাম বেশি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের পদক্ষেপ নৈতিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে ভাবতে হবে।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী জরিমানা করেছে বাংলাদেশ বাংক। জরিমানার অর্থ শাস্তি ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। দশটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।