• শনিবার , ১৮ মে ২০২৪

দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রকাশিত: ৯:৩৫ পিএম, ১৫ অক্টোবর ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৮ বার

hasina kurigram-www.jatirkhantha.com.bd বিশেষ প্রতিবেদক.কুড়িগ্রাম:   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ কার্যক্রম সহ্য করা হবে না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশে থাকতে ১৫০ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছেন। এখন বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। বিদেশি মানুষগুলো এদেশে শান্তিতে থাকুক উনি তা চান না। যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করুক আওয়ামী লীগ ২০২১ সালে দেশকে ক্ষুধামুক্ত,দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ করবে।বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় তিনি একথা বলেন।

জনসভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুরো শহরে মানুষের ঢল নামে। বেলা আড়াইটার জনসভার মাঠ দুপুর ১২টার মধ্যেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। হাজার হাজার মানুষকে মাঠের পাশে বিভিন্ন ভবনের ছাদে, গাছে চড়ে এবং আশপাশের সব রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে দেখা গেছে। এদিকে সকাল ৯টার পর থেকে জেলা শহরের শাপলা চত্বর থেকে সভাস্থল পর্যন্ত সব সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মণ্ডল মঞ্জুর সভাপতিত্বে বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে বক্তৃতা দিতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা এনেছে। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য আমাদের বলতে হবে না। কোনো দাবি জানানোর দরকার নেই। কোনো কিছু চাওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ করে দেয়। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন নীতিমালা আছে। আমরা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবো।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে-উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ করছে,করবে। দেশের ৭৫ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। আমরা প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো।
তিনি বলেন, আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের আগেই নিম্ন মধ্যম নয় বরং উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে। দেশ হবে দারিদ্রমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত,জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। পৃথিবীর কোনো দেশে কেউ এটি দেয় না।এসময় তিনি বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচির মধ্যেও বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে প্রায় ৩৩ কোটি বই তুলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের জন্য যা দরকার আওয়ামী লীগ সরকার তাই করবে। শুধু আপনাদের দোয়া চাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকা মার্কায় দেশের উন্নয়ন হয়। নৌকা মার্কা দেশে স্বাধীনতা এনেছে। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনবে। বাংলাদেশের মানুষের উন্নত ও সুখী সৃমদ্ধ জীবনই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় কুড়িগ্রাম ছিল মঙ্গা কবলিত, দরিদ্র এলাকা। আমাদের করুণার পাত্র বানাতো অন্যরা। ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর আর কেউ এই অঞ্চলের উন্নয়ন করেনি। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া সরকার এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের কথা চিন্তাও করেনি। ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর করা উদ্যোগ নেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ছিটমহলের ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান করেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া এই বঞ্চনা আর কেউ দূর করতে পারেনি। ছিটমহল বলে এখন আর কিছু নেই। ছিটমহলের মানুষগুলো এখন বাংলাদেশের নাগরিক। আশপাশে যারা আছেন আপনারা তাদের আপন করে নেবেন। তারা আমাদের আপনজন।

এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প কারখানার জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হবে। জেলা প্রশাসককে জমি দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। নদীগুলো খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। তৈরি করা হবে দ্বিতীয় ধরলা সেতু। এই জেলায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হবে। যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল কলেজ নেই সেখানে স্কুল কলেজ করে দেওয়া হবে। লালমনিরহাট থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের উন্নয়ন করা হবে।

এ সময় তিনি প্রত্যেক উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠের বাইরে একটি স্বতন্ত্র মিনি স্টেডিয়াম করার ঘোষণা দেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার সরকার দেশের বাজেট চারগুণ করেছে। এখন আর দেশে কোনো খাদ্যাভাব নেই। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে দেশের মানুষকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ৩০ প্রকার ওষুধও বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে মাতৃত্বকালিন ছুটি ও ভাতার পরিমাণ। দেশের নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করতে ইতিমধ্যে সরকার কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু করেছে। শিগগিরই স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষ আরও উন্নতি করুক। সবাই মিলে দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলুক। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেন তরুণরা ঘরে বসে আউট সোর্সিংরে মাধ্যমে আয় করতে পারে। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে মানুষ সেবা নিচ্ছে। স্বাবলম্বী হচ্ছে। বেকারত্ব দূর করে কাজে যুক্ত হচ্ছে।

জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌহিফ-ই-এলাহী চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১২টি ছিটমহল। এর মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত দাসিয়ারছড়া সবচেয়ে বড়। এক হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর আয়তনের এই জনপদে ১ হাজার ৩৬৪টি পরিবারে জনসংখ্যা ৬ হাজার ৬০৮ জন।