• মঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪

তামিম বলছিলেন-‘ঘাবড়ানোর কিছু নেই এখনো সম্ভব’


প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ৮ মে ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

98459f084372ac1b3b1b8c02545f0617-Match-reportঅনলাইন ডেস্ক : তামিম বলছিলেন, ‘ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এখনো সম্ভব।’ কী সম্ভব? ম্যাচ ড্র করা? নাকি পরাজয়? দুঃসাহসিক হলে বলতে পারেন, জয়-ই বা নয় কেন! ম্যাচের ১৮০ ওভার বাকি। জয়ের জন্য দরকার ৪৮৭ রান। ওভারে ২.৭ করে তুললেই তো…। থামুন! কল্পনার ঘোড়াটিকে লাগাম দিন। বাংলাদেশ এই ম্যাচ জিতে গেলে সেটাকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলেও বোঝানো যাবে না। বহু ব্যবহারে ‘অবিশ্বাস্য’ শব্দটা ওজন হারিয়েছে। বাংলাদেশ এই ম্যাচ ড্র করলেও সেটি অবিশ্বাস্যের চেয়ে কম কিছু হবে না। ড্র করতে হলেও বাংলাদেশকে প্রায় ২০০ ওভারের মতো ব্যাটিং করতে হবে। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে ২০০ ওভার ব্যাটিং করার কীর্তি একটা দলেরই আছে—ইংল্যান্ডের, সেটিও ১৯৩৯ সালের ঘটনা। ড্র করার​ চেয়ে জয়টাকেই তো মনে হচ্ছে তুলনামূলক ‘সহজ’! ৫৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ১ উইকেটে ৬৩ রান নিয়ে। ওভারে সাড়ে চার করে রান তুলছে। তাতে ৩২ রানে অপরাজিত তামিমই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আক্রমণটাকেই রক্ষণের সেরা অস্ত্র মনে করেন তামিম। ঠুকে ঠুকে খেলে কেউ ২০০ ওভার টিকতে পারে না—এটাই তামিমের দর্শন। খুলনা টেস্টে পাল্টা আক্রমণ করেই চাপ পাকিস্তানের ওপর ঠেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে বাস্তবতা ভিন্ন। টেস্ট ক্রিকেটের এত দীর্ঘ ইতিহাসে ৫৫০ তো দূরের কথা, টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে কেউ ৪৫০ তাড়া করেও জেতেনি। সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করার রেকর্ডটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কাজেই ম্যাচের আগে মুশফিকুর রহিম ‘জয়ের জন্য’ খেলার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাস্তবতার বিচারে তা ভুলে যাওয়াই ভালো। কেন চতুর্থ ইনিংসে এত রান তাড়া করে জেতা সম্ভব নয়, সেটি বোঝাতে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে ইমরুলের আউটটি। খুলনা টেস্টে পাল্টা আক্রমণে ​রেকর্ড জুটি গড়া ইমরুল-তামিম আজও ৪৮ রান তুলে ফেলেছিলেন মাত্র ১১ ওভারে। কিন্তু ইয়াসির শাহর করা দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড ইমরুল। ফুল লেংথ বলটা প্রায় ৬০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে ঢুকে গেল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে। ব্যাটসম্যান তো বটেই, ধারাভাষ্য দিতে আসা অভিজ্ঞ আমির সোহেল পর্যন্ত প্রথমে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বল ব্যাটের ভে​তরের কানায় লেগে স্টাম্পে গেছে। ইয়াসির বল ফেলেছিলেন ফুটমার্কে। উইকেটে এমন অনেক ‘ক্ষত’ আছে যেগুলো ব্যাটসম্যানদের জন্য মাইনফিল্ড। তা ছাড়া মাইন হয়ে দেখা দিতে পারে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তিও। সেই ক্লান্তিতে ফেলার জন্যই সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশকে ফলোঅন করাননি মিসবাহ-উল-হক। প্রথম ইনিংসে ৩৫৪ রানে এগিয়ে থেকেও আবার ব্যাটিং করেছে পাকিস্তান। হয়তো বোলারদের কিছুটা ‘বিশ্রাম’ দিতেই টানা দ্বিতীয়বার ফিল্ডিং করতে চাননি মিসবাহ। এমন নয় বোলাররা খেটেখুটে ক্লান্ত। বাংলাদেশের ইনিংসের আয়ু ৫০ ওভারও টেকেনি। আর আজ তো মাত্র ২০ ওভারের মতো বোলিং করেছে পাকিস্তান। মিসবাহ জানতেন, চতুর্থ ইনিংসে এই উইকেটে ব্যাট করা হবে আরও কঠিন। পাকিস্তানের লিডের আকার বাড়তে বাড়তে অনেক দূর পৌঁছে গেল। তবুও ইনিংস ঘোষণার লক্ষণ নেই। পরে বোঝা গেল, নিজের সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করছেন মিসবাহ। ৭২ বলে ৮২ করে মাহমুদউল্লার বলে আউট হতেই এসে গেল ইনিংস ঘোষণা। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ৬ উইকেটে ১৯৫। হিসাব একদম পরিষ্কার, জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ৫৫০। পাকিস্তানকে নিতে হবে ৯ উইকেট। শাহাদাতের দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট করার সম্ভাবনা নেই। ম্যাচ বাঁচানোর জন্য শেষ দুই দিনের ছয়টি সেশন থাকছে। খুলনায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায় ৫ সেশন ব্যাটিং করেছিল। তখনো হাতে ছিল ৪ উইকেট। অবশ্য খুলনার উইকেট শেষ দিনেও ব্যাটিং করার জন্য ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু শুভাগতই আজ যেভাবে বলে টার্ন করিয়ে আসাদ শফিককে ফেরালেন, পাকিস্তানের স্পিনারদের মুখের হাসিটা তখনই চওড়া হয়ে গেছে। পিসিবি সভাপতি শাহরিয়ার খানকেও বেশ খুশিই দেখাল টিভি পর্দায়! পাকিস্তানের পেসাররাও কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের নয় উইকেটের (শাহাদাত ব্যাটিংয়েও অনুপস্থিত) ৫টিই নিয়েছেন পেসাররা। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে মোহাম্মদ শহীদও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ২৫ রানে পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি। আরেক পেসার সৌম্য সরকার রানটা একটু বেশি দিয়ে ফেললেও প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান আজহার আলীকে ২৫ রানে ফিরিয়ে পেয়েছেন প্রথম টেস্ট উইকেট। পেতে পারতেন ইউনিস খানের উইকেটটিও। তাইজুল ইসলাম কঠিন ক্যাচটা হাতে জমাতে পারেননি। পরে তাইজুলই ফিরতি ক্যাচে ফিরিয়েছেন ইউনিসকে। ৪৯ রানে বাংলাদেশ ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তানের ৩ উইকেট। মিসবাহ-ইউনিস জুটির প্রতিরোধও ভাঙল দলীয় ১০৭ রানে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে শুভাগতর সেই দুর্দান্ত টার্নে পরাস্ত হয়ে ফেরেন শফিকও। ১৪০ রানে নেই পাকিস্তানের ৫ উইকেট। কিন্তু তাতেও ম্যাচের লাগাম পাকিস্তানের হাত থেকে এতটুকু খসে যায়নি। পরে মাহমুদউল্লাহর শিকার মিসবাহ। প্রথম ইনিংসে ১৩৬ রান দিয়ে মাত্র ১ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। তবুও মনে হচ্ছে, মিসবাহর উইকেটটা সাকিব পেলে সেটাই হতো ন্যায়বিচার। খুলনায় নিজের ইচ্ছাতেই সেঞ্চুরিটা করেননি। আর আজ নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে সঙ্গীর অভাবে সাকিব অপরাজিত থাকলেন ৮৯ রানে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভাবনায় এখন ম্যাচ বাঁচানো। কিন্তু সেটা করতে হলে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ বন্ধুর পথ। খুলনা টেস্টের সঙ্গে এ টেস্ট মেলানো ঠিক হবে না হয়তো। পরিস্থিতি, উইকেটের চরিত্র সবই আলাদা। আজ এক দিনেই যেমন পড়েছে ১১ উইকেট। তবুও খুলনাই আশা, খুলনাই ভরসা!