• শুক্রবার , ১৭ মে ২০২৪

ডেথ ওয়ারেন্ট-সাকা-মুজাহিদের-রিভিউ খারিজ হলে ফাঁসি


প্রকাশিত: ৩:৫৪ পিএম, ১ অক্টোবর ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

saka-mugahid-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান:   একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানা (ডেথ ওয়ারেন্ট) জারি হয়েছে।বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শহীদুল আলম ঝিনুক এ দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।এর আগে ওই দুই মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন সম্প্রতি পুনর্গঠিত একমাত্র ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক এবং বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী।

saka-Muzahid deth warent-www.jatirkhantha.com.bd-2ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শহীদুল আলম ঝিনুক জাতিরকন্ঠকে জানান, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা মৃত্যু পরোয়ানারয় সই করেছেন। মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর তা লাল কাপড়ে মুড়িয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এটি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছেও পাঠানো হবে। কারাগারে আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হবে।

৬৭ বছর বয়সী মুজাহিদ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, আর ৬৬ বছর বয়সী সাকা চৌধুরী রয়েছেন কাশিমপুর কারাগারে। এ পরোয়ানার ভিত্তিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

এর আগে বুধবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার বিকেলে ওই রায়ে সই করেন।

এরপর বুধবার সন্ধ্যায় সাকা চৌধুরীর ২১৭ পৃষ্ঠার ও মুজাহিদের ১৯১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে  শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হলো।এর ফলে চট্টগ্রামে গণহত্যা এবং ঢাকায় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে ফাঁসির মঞ্চে যেতে হচ্ছে। রায় কার্যকর করতে আরও দুটি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে গত ১৬ জুন একাত্তরে আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদ ও চট্টগ্রামের ত্রাস হিসেবে পরিচিত সাকা চৌধুরীর ফাঁসি (মৃত্যুদণ্ড) বহাল রেখে ২৯ জুলাই আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেছিলেন আপিল বিভাগ।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য (রিভিউ) আবেদন করার কথা জানায় আসামিপক্ষ। সেক্ষেত্রে চলতি অক্টোবর মাসে আপিল বিভাগে ওই রিভিউ আবেদন করা হলে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে নভেম্বরের প্রথম দিকে শুনানি হতে পারে।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলছে। সেক্ষেত্রে ছুটির পর যদি রিভিউ আবেদন খারিজ হয়, তাহলে বিধি অনুসারে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে।রায়ের অনুলিপি প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিধি অনুসারে সাকা ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা নেই। তবে আসামি পক্ষ রিভিউ করলে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে।

অন্যদিকে দুই আসামির প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর তারা রিভিউ করবেন।বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শহীদুল আলম ঝিনুক রায়টি গ্রহণ করেন। ওই মৃত্যু পরোয়ানার ভিত্তিতেই সরকারের তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে।

রায় কার্যকর প্রসঙ্গে আইনজ্ঞরা জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে আপিল বিভাগে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপিল বিভাগে ওই রিভিউ আবেদনের শুনানি হবে। যদি কোনো পক্ষ এই সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করেন, তাহলে ১৫ দিন পর যে কোনো সময় সরকার রায় কার্যকর করতে পারবে। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লার রায় রিভিউ চেয়ে করা পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। ওই সিদ্ধান্ত এই দুই আসামির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে এ নিয়ে পাঁচজনের আপিলের নিষ্পত্তি শেষে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর রায় কার্যকর করা হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের আরেক নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরে ২০১৪ সালে আপিলের তৃতীয় রায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আজও প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।
ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা ১৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার মধ্যে আটটি শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। বাকি দুটি আপিল শুনানি অকার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে ৯০ বছরের কারাদ প্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল আলীম মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হবে না।

মুজাহিদ:
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দলের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্যতম। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন।একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যাসহ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়।

সাকা চৌধুরী:
একাত্তরে চট্টগ্রামের ত্রাস যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। একাত্তরে গণহত্যা ও হত্যার দায়ে সেই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড হয়।
রাজনীতির মাঠে সাকা চৌধুরী তার স্বভাবসুলভ গোয়ার্তুমি ও নানা কর্মকাণ্ডের কারণে বরাবরই সমালোচিত নাম। কোনো কিছুতেই তিনি তোয়াক্কা করতেন না। তিনি ছিলেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাম্ভিকতার প্রতীক। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা (পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা) ছিলেন।