• রোববার , ৫ মে ২০২৪

জামাই বউয়ের রাজনীতিতে কালোমেঘ-হাসিনার গোস্বা’র খেসারত দিচ্ছে এরশাদ


প্রকাশিত: ৭:৩৬ পিএম, ২৪ জুলাই ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৪৩ বার

hasina earshad with rawshan-www.jatirkhantha.com.bdলাবণ্য চৌধুরী ঢাকা: জামাই বউয়ের রাজনীতিতে কালোমেঘের ঘনঘটা চলছে। অনাহুত সরকার বিরোধীতায় শেখ হাসিনা গোস্বা করেছন ভাই এরশোদের ওপর।যার খেসারত দিচ্ছেন এরশাদ।প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েও কাজ পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরশাদকে কাজ’ই দেয়া হচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড নাখোশ এরশাদের ওপর।জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জুলাই শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পাওয়ার দেড় বছর পার হবে। কিন্তু নিজের পদের তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারেননি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি এখনও।

hasina-ershad-cartoon-www.jatirkhantha.com.bd০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় বিশেষ দূতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। আর এ কারণে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও গ্রহণ করছেন তিনি। যদিও এই দায়িত্ব নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি জাপা চেয়ারম্যান।

গত বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এরশাদ। এরপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে জাপার বিভিন্ন সমাবেশে সরকারবিরোধী বক্তব্য রাখেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার এই দ্বিমুখী অবস্থানে নারাজ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে পদ দেওয়া হলেও দায়িত্ববঞ্চিত রাখা হয় এরশাদকে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে বিদেশে সফর কিংবা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের এক্ষেত্রেও তাকে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। দায়িত্ব পাওয়ার পর চীন, ভারত, মালয়েশিয়া সফর করলেও কোনোটিই এ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ছিল না।

এরশাদ ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব দিয়ে মূলত এরশাদের লাগামহীন মন্তব্যকে আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় বিরোধিতা করে নৈতিকভাবে কোনো অবস্থান তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে এরশাদের জন্য। এ ব্যাপারে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিক কী কারণে আমাকে দায়িত্ববঞ্চিত রাখা হয়েছে, সেটি বলতে চাই না।

কার্যক্রম শুরু হলে সরকার আপনার কাছ থেকে নেতিবাচক কিছু আশঙ্কা করে কী না– এমন প্রশ্নের উত্তরে এরশাদ বলেন, ‘হতে পারে। আমি কিছু বলব না। বলতে চাই না।’ তাহলে কি পদ ছাড়ছেন কী না, এমন প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোনলাইন কেটে দেন।

জানা যায়, দায়িত্ব পাওয়ার পরে দেশের বাইরে এরশাদের প্রথম সফর ছিল চীনে। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রণে গত বছরের ২০ জুলাই তিনি সেখানে যান। দুই মাস পরে ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো বিদেশ সফরে যান এরশাদ। ভারতে ছয়দিনের এ সফর এরশাদের ব্যক্তিগত সফর বলে জানা যায়। তার ছেলে এরিখের স্কুল ভর্তি ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েই সে সফরটি ছিল। তবে গত বছরের অক্টোবরে দায়িত্ব সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না। মাত্র তো সরকার গঠন হলো। দেখা যাক, কী হয়।’

ওই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে বিদেশ সফর করবেন। সেটা তার প্রয়োজন অনুযায়ী। তিনি চাইলে যে কোনো সময় বিদেশ সফর করতে পারেন।ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তিনি তার মতো করে কাজ করছেন। তার দপ্তরের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি যখন যেটা চাইছেন, সেটা দেওয়া হচ্ছে।’

তবে এরশাদের ঘনিষ্ঠ সাবেক এক কর্মকর্তা জানান, রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরে এরশাদের জন্য সম্মানজনক আর কোনো পদ বাকি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এরশাদকে তার সঙ্গে ভিড়িয়ে রাখতেই এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন।

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে এরশাদ কয়েকটি দেশের ভিসার জন্য আবেদন করলেও সেগুলো নাকচ করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীন সফরের কথা থাকলেও তাকে ওই সফরে নেওয়া হয়নি। এমনকি গত বছরের ২৭ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতে সফরে সরকারের একাধিক এমপি ও মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকলেও এরশাদকে রাখা হয়নি। এজন্য এরশাদ খানিকটা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানায়, এরশাদের সঙ্গে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। এরশাদ নিজেও এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কন্নোয়ন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যায়নি। দায়িত্ব পালনের সুযোগ এরশাদ কখন পাবেন এ বিষয়ে কিছুদিন আগেও তার দলীয় লোকজন আশাবাদ প্রকাশ করলে এখন তারা কোনো কথা বলতে আর রাজি নয়। জাপার এক প্রেসিডিয়ামের সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এরশাদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পাওয়ার পর ১২ মার্চ হঠাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে তিনি কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে।এসব বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপিকে কয়েকদিনে অসংখ্যবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।