• রোববার , ৫ মে ২০২৪

ছাত্রলীগের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত শিশুটির আর্তনাদ-মূল পান্ডারা ধরাছোঁয়ার বাইরে-


প্রকাশিত: ৮:৩৩ পিএম, ২৯ জুলাই ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭ বার

    লাবণ্য চৌধুরী.ঢাকা:  মাগুরায় ছাত্রলীগের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত শিশুটি আর্তনাদ করে কাঁদছে- ।মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করে শিশুটিকে বাঁচানো panda chatroleage--2-www.jatirkhantha.com.bdগেলেও ছাত্রলীগের মূল পান্ডারা রয়েছে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ দুই বর্বর ছাত্রলীগারকে পাকরাও করেছে। কিন্তু ধরা যায়নি মূল ক্রিমিনালকে।

জেলা এসপির সহযোগীতায় আল্লাহর রহমতে চিকিৎসকদের অবিরাম চেষ্ঠায় ফুলের মত পবিত্র শিশুটি শেষমেষ প্রাণে বেঁচে আছে।তবে একটি মূল্যবান চোখ নষ্ঠ হবার শংকা রয়েছে। চিকিৎসতরা জাতিরকন্ঠকে বলেছেন, বাচ্চাটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। হাতে-গলায় জখম। চোখটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ডান চোখের ভেতরে রক্ত জমাট রয়েছে। চোখটা খুলছে না।

জন্ম নেওয়ার সময় হতে আরও ছয় সপ্তাহ বাকি ছিল। এর আগেই তুলতুলে নরম শরীরে সইতে হলো ছাত্রলীগের বুলেটের আঘাত। গর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুটির শরীরে গুলি লাগায় তার মায়ের জীবন রক্ষা পেয়েছে। এমন তথ্য জানালেন মাগুরার শহরের দোয়ারপাড়ার কারিগরপাড়ায় গুলিবিদ্ধ মায়ের অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক।

cccccccccccccগুলিবিদ্ধ মা নাজমা খাতুনের অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক শফিউর রহমান বলেন, গর্ভে থাকা শিশুটি মায়ের জন্য আশীর্বাদ। শিশুটি পেটে না থাকলে গুলির আঘাতে মায়ের জীবন বিপন্ন হতো। গুলিটি শিশুটির শরীর ভেদ করায় সেটি আর মায়ের খাদ্যনালী ও নাড়িভূঁড়ির বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেনি। তেমনটি না হলে মায়ের মারা যাওয়ার শঙ্কা থাকত। শিশুটিই মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। প্রথমদিকে মা সংকটাপন্ন থাকলেও এখন তিনি আশঙ্কামুক্ত।

ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রোপচারের পর দেখা যায় মায়ের পেটের মাংসপেশির ভেতর বুলেটটি আটকে আছে। সেখানে আটকে যাওয়ার আগে বুলেটটি মায়ের পেটে থাকা শিশুটির পিঠ দিয়ে ঢুকে বুকের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। এরপর সেটি আবার গলার নিচ দিয়ে ঢুকে ডান চোখের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এ কারণে বুলেটটি খুবই দুর্বলভাবে মায়ের মাংসপেশিতে আঘাত করেছে। অস্ত্রোপচারের আগে-পরে মা ও নবজাতক সংকটাপন্ন থাকায় তাঁদের ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। দুই দিন পর শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হলেও মাকে কেন নেওয়া হলো না, তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানালেন। এত ধকলের পরও শিশুটির বেঁচে থাকা ‘মিরাকল’, মন্তব্য তাঁর।

আজ বুধবার সকালে মাগুরা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ মা নাজমা খাতুন যন্ত্রণায় শুতে পারছেন না। তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।মা নাজমা বলেন, ‘আমার মা-মণি পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বুক পেতে আমার জীবন বাঁচাল। জন্মের পর ওর মুখটাও আমি দেখতে পারলাম না। যারা আমার মণির কচি বুক ঝাঁজরা করল, আপনারা তাদের ধরে ফাঁসি দেন।’ এর সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমার মণিকে ঢাকায় নিয়ে গেছে, তাও আমি পরে শুনছি। আমারে কেউ বলেনি। আমারে নিয়েও যায়নি। জানি না আমার সোনামণি কেমন আছে?’

মাগুরা সদর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘অস্ত্রোপচারে গুলিবিদ্ধ শিশুটি জন্ম নেওয়ার পরই আমরা মা ও নবজাতককে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেছি। পরে শিশুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলেও মাকে কেন নেওয়া হলো না, তা আমরা বলতে পারব না। ওই দায়িত্ব তাদের পরিবারের।’

গাইনি ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ সেবিকা প্রভাতি রায় বলেন, ‘আমরা প্রসূতিকে ঢাকায় পাঠানোর সব কাগজপত্র প্রস্তুত রেখেছিলাম। কিন্তু পরে আর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।’গুলিবিদ্ধ শিশুটির বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলির সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন। ভয়ে ঘরের দরজা খুলে দৌড়ে সরে যান। কিন্তু স্ত্রী নাজমা খাতুন অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাঁকে সরানো যায়নি। ঘরের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় বাচ্চুর চাচা মমিন ভূঁইয়াও গুলি ও বোমার আঘাতে আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সদর হাসপাতালে মারা যান।

বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নাই। এসপি সাহেব আমাকে বলেছেন, বাচ্চাটাকে এখানে রেখে মেরে ফেলবেন?’ পরে তিনি বাচ্চা ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বাচ্চার মাকে কেন নেওয়া হয়নি, তা আমি জানি না।’সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যাপারে পুলিশ সুপারের (এসপি) ওপর চাপ ছিল বলে তাঁরা শুনেছেন।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ মমিন মারা যাওয়া পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও নবজাতক মারা গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এমন আশঙ্কা ও চাপের মুখে শিশুটিকে তিনি ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেন। ঢাকায় পাঠানোর গাড়ি ভাড়ারও তিনি বহন করেছেন।এ ব্যাপারে মাগুরার এসপি এ কে এম এহ্সান উল্লাহ বলেন, ‘আমি শিশুটিকে ঢাকায় পাঠিয়েছে। তবে মায়ের অবস্থা ভালো বলে তাঁকে পাঠানো হয়নি।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক কানিজ হাসিনা বলেন, ‘বাচ্চাটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। হাতে-গলায় জখম। চোখটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ডান চোখের ভেতরে রক্ত জমাট রয়েছে। চোখটা খুলছে না। স্থায়ী ক্ষতির ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত না।’

শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক বলেন, পরিবার বলছে নাজমা খাতুন ৩৪ সপ্তাহের গর্ভবর্তী ছিলেন। শিশুটি প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে জন্মেছে। ওজন দুই কেজি। স্বাভাবিকের চেয়ে এই ওজন ৫০০ গ্রাম কম। শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কিন্তু অপরিণত ও কম ওজন হওয়ায় ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, শিশুটি এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে। একটু একটু করে খাচ্ছে। কাঁদছে। এক চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে।

এর আগে মাগুরা শহরের কারিগরপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নাজমা খাতুন (৩৫) গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর দিন মমিন ভূঁইয়া মারা যাওয়ার ঘটনায় তাঁর ছেলে রুবেল ভূঁইয়া ১৬ জনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সেন সুমনকে (৩২) প্রধান আসামি করা হয়। সেন সুমন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলামের আস্থাভাজন হিসেবে হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া আজিব্বর শেখ, মুহম্মদ আলীসহ মামলার অন্য আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী। সংগঠনের পদ-পদবিতে না থাকলেও এরা বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকেন। পুলিশ মামলা হওয়ার আগের দিন ও পরদিন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সুমন ও সুবহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।