• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

গ্রেফতারের আদেশ সেই তিন র‌্যাবকে


প্রকাশিত: ৪:০৩ এএম, ১২ মে ১৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮১ বার

 বিশেষ প্রতিবেদক: ঢাকা ১১ মে ২০১৪:

 

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাবের সেই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ আদেশে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধি বা বিশেষ কোনো আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে৷
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর রুল জারির পাশাপাশি পুিলশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতি এ আদেশ দেন৷
তবে উচ্চ আদালতের এই আদেশ গতকাল রোববার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরে পেৌছানো ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা  বলেন, আদালতের আদেশ শোনার পর তাঁরা যোগাযোগ করেছেন৷ কিন্তু রাত পর্যন্ত কোনো আদেশ তাঁদের হাতে আসেনি৷ আদালতের আদেশ পেলেই তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন৷
এদিকে রাত ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফ্যাক্সযোগে আদেশের কপি আইজিপি বরাবরে পাঠানো হয়েছে৷
রাতে আবারও পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি৷
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর সেনাবাহিনীর দুজন ও নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ এই তিন কর্মকর্তাকেই হাইকোর্ট গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন৷ তাঁরা হলেন র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানা৷ সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন ও নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়৷
তিন কর্মকর্তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তাকে অকালীন অবসর দেওয়া হয়েছে৷ নিয়ম অনুসারে তাঁরা চাকরি যাওয়ার পর এক বছর (প্রাক-অবসরকালীন ছুটি—পিআরএল) সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন৷ তাঁরা এক বছর সেনানিবাসের বাসাও ব্যবহার করতে পারবেন৷ এতে ধরে নেওয়া হয়েছে, দুই কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর বাসাতেই আছেন৷ তবে নৌ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, চাকরি হারানো কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম এম রানা নৌবাহিনীর বাসায় নেই৷ বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার পর তিনি কাগজপত্র নিয়ে চলে গেছেন৷ এখন তিনি কোথায় আছেন, তা নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানেন না৷
আদালত সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে নিহত সাতজনের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে বিবাদীদের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে নিহত চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন গতকাল একটি রিট করেন৷ এতে তদন্তের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়৷
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন৷ সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী ও রমজান আলী সিকদার৷ রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আল আমিন সরকার উপস্থিত ছিলেন৷ রুলে সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৬, ৪২ ও ৪৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিদ্যমান আইন সংশোধন, হালনাগাদ করার বিষয়টি কেন সক্রিয় বিবেচনায় নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে৷ সেই সঙ্গে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আইনের দুর্বলতা সংশোধনে দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়৷ দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ বিবাদীদের জবাব দিতে বলা হয়৷শুনানিতে কামাল হোসেন বলেন, ‘বেঁচে থাকার অধিকার মানুষের সবচেয়ে বড় মৌলিক অধিকার৷ সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এসব অধিকার কার্যকরে দেশের যেকোনো নাগরিকের হাইকোর্টে আসার অধিকার আছে৷ দেশে একের পর এক গুম, অপহরণ, হত্যার ঘটনা ঘটছে৷ এই অবস্থায় আমরা অসহায় হতে পারি না৷’
কামাল হোসেন বলেন, ‘এর আগে এ বি সিদ্দিককে অপহরণ করা হয়েছিল৷ সৌভাগ্যবশত তাঁকে আমরা ফেরত পেয়েছি৷ চন্দন সরকার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির একজন আইনজীবী৷ তাঁকে প্রকাশ্য অপহরণ করা হয়৷ তিন দিন পর শীতলক্ষ্যায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়৷ শুনানিতে কামাল হোসেন বলেন, শুধু ২৭ এপ্রিলের ঘটনাই নয়, এর আগেও বিনা বিচারে হত্যা, খুন ও গুমের ঘটনা ঘটেছে৷ অনেকের লাশ পাওয়া গেছে, অনেকের যায়নি৷ নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে সংবিধান নিশ্চয়তা দিয়েছে৷ সংবিধান অনুযায়ী, কারও লাগামহীন ক্ষমতা নেই৷
শুনানিকালে আদালত আইনজীবীকে আবেদনের প্রার্থনার অংশ স্পষ্ট করতে বলেন৷ পরে আইনজীবী আবেদন সংশোধন করে দেন৷ রিট আবেদনের ওপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুনানি হয়৷ শুনানি শেষে একটার দিকে আদালত রুলসহ আদেশ দেন৷ আদেশের পর আদালত বলেন, নিশ্চয়ই কোনো ইনডিকেশন (ইঙ্গিত) পাওয়া গেছে৷ তা না হলে তাঁদের অবসরে পাঠানো হতো না৷ হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন৷ সে সময় তাঁদের সামনে হয়তো এ বিষয়টি ছিল না৷ না হলে ওই বেঞ্চ গ্রেপ্তারের আদেশ দিতেন৷ আদালত বলেন, স্বতঃপ্রণোদিত আদেশের সঙ্গে এই রিটের শুনানি হবে৷
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন৷ এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ভেসে ওঠে সাতজনের মরদেহ৷ এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার৷ ৪ মে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন৷
৫ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন৷ এতে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো গাফিলতি আছে কি না, এটিসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এ ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা আছে কি না, সে বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে র্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এ ছাড়া এ ঘটনায় করা মামলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি সিআইডিকে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়৷
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান  বলেন, গোয়েন্দা বিভাগের পাশাপাশি সিআইডিকে মামলা তদন্তের নির্দেশনার বিষয়টি স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷ এতে জটিলতা হতে পারে৷ চেম্বার বিচারপতি আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন৷
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলতে বললেন প্রধানমন্ত্রী : ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের রুল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ গতকাল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আসাদুজ্জামান৷ এ সময় তাঁকে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী৷