• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাসিনো এনু রুপনের গডফাদার শহিদুল-সাবুকে কে ধরবে?


প্রকাশিত: ৭:৩৬ পিএম, ১৩ জানুয়ারী ২০ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩০ বার

ক্যাসিনো এনু রুপনের গডফাদার দুলাভাই ইনসেটে শাহাবুদ্দিন সাবু

শফিক রহমান : ক্যাসিনো কান্ডের অন্যতম সেরা চাঁই এনামুল ও রূপন অবশেষে সিআইডির জালে পাকরাও হলেও এদের গডফাদার ওয়ান্ডার্স ক্লাবের জুয়ার লিডার শহিদুল ও সাবু এখনও ধরা পড়েনি। এই দুই নায়ক পুলিশ মাস্তান ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কে মাসোহারা দিয়ে জুয়ার রাজত্ব কায়েম করে চলছিল বছরের পর বছর। ক্লাব পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ান্ডার্স ক্লাবের জুয়ার লিডার শহিদুল ও সাবু এখনও ঢাকাতেই আছে। এরা ক্লাব পাড়ায় জুয়ার সর্দার হলেও সব সময়ই ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ক্যাসিনোকান্ডে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হানা দেয়ার পর থেকে এরা আত্মগোপনে চলে যায়। এদের হদিস এনামুল ও রূপন জানতে পারে বলে দাবি করেছেন ক্লাব পাড়ার একাধিক ক্লাবের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।

যাহোক ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত আলোচিত দুই ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। এরআগে ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও অর্থ জব্দের পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৯টি মানিলন্ডারিং আইনে দায়ের হওয়া মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ৯টির মধ্যে চারটি এজাহারে এই দুই জনের নাম রয়েছে। মামলার তদন্ত করে আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করি এবং সকালে কেরানীগঞ্জে তাদের এক সহযোগীর বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সিআইডির তদন্ত ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সম্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুইজনের মোট ২২টি জমি ও বাড়ি রয়েছে, যার অধিকাংশই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। এছাড়া সারাদেশে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৯১টি অ্যাকাউন্টে তাদের মোট ১৯ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ব্যক্তিগত পাঁচটি গাড়িও রয়েছে তাদের।তাদের বাড়িতে অভিযানের সময় পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো ব্ল্যাকমানি। দেশের বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে তারা সেগুলো রেখেছিল। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলেও তিনি জানান।

এনামুল ও রূপনের থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ, মোবাইলফোন এবং পাসপোর্ট তাদের অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যখন তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয় (সেপ্টেম্বর ২০১৯) তারা সেখান থেকে পালিয়ে কক্সবাজার চলে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বোটে অবৈধভাবে মিয়ানমার হয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানোর। তবে সেখানে যেতে ব্যর্থ হয়ে নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। এজন্য তারা ঢাকায় এসে কেরানীগঞ্জে মোস্তফা নামের এক সহযোগীর বাড়িতে অবস্থান করছিল। সেখান থেকে বেনামি পাসপোর্ট তৈরি করে ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা। তারা বেনামি পাসপোর্ট ও ভারত হয়ে নেপাল যাওয়ার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকা সঙ্গে রেখেছিল। তাদের গ্রেফতারের সময় ওই ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইলফোনও উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা জেনেছি এই দুইজনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ক্যাসিনো ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়। নেপালিদের মাধ্যমে তারা ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বাংলাদেশে এনেছিল। এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্যাসিনো ক্লাবের পরিচালক ছিলেন।সম্প্রতি দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেশকিছু নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের পরপরই ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে রদবদল আসে। এর তিন দিন পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এরপর ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ উত্তরা, গুলশান, তেজগাঁওয়ের বেশকিছু ক্লাবে একই ধরনের অভিযান চালায় পুলিশ ও র‌্যাব। এসব অভিযানে ক্যাসিনো সামগ্রীসহ প্রচুর পরিমাণে মদ ও অবৈধ অর্থ উদ্ধার করা হয়। অভিযানগুলোতে যুবলীগের কয়েকজন নেতাসহ বেশকিছু ক্লাবের সংগঠককে ক্যাসিনোতে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।