• মঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আর্জেন্টিনা’য় কোন্দল ব্যক্তিত্বের সংঘাত-


প্রকাশিত: ১:০৮ পিএম, ২৩ জুন ১৮ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৫ বার

 

 

স্পোর্টস রিপোর্টার :   ৬০ বছর পর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে সবচেয়ে বড় হার। বিদায়ের আশঙ্কা। দুয়োধ্বনি, টীকা-টিপ্পনী, aaammmঅন্তর্জালের জগতে ট্রল। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলের হার হঠাৎ করে যেন পৃথিবীটাকেই নরক বানিয়ে ফেলেছে আর্জেন্টিনা দলের জন্য। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের দলকে বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচে দেখা গেছে নিজের ছায়ার চেয়েও দুর্বল চেহারায়! অথচ বার্সেলোনার জার্সিটা গায়ে থাকলেই লিওনেল মেসি হয়ে ওঠেন অদম্য। সের্হিও আগুয়েরো, গনসালো হিগুয়েইনরা নিজ নিজ ক্লাবের হয়ে ঘরোয়া লিগ জিতে আসা ফুটবলার। তাহলে কেন এই বেহাল?

আর্জেন্টাইন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসছে একের পর এক মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো খবর! হোর্হে সাম্পাওলিকে সরিয়ে দিয়ে হোর্হে বুরুচাগাকে কোচ করার জন্য ইচ্ছা করে খারাপ খেলার অভিযোগ যেমন আছে সেরা খেলোয়াড়দের দিকে, তেমনি দলের ভেতর কোন্দল ও ব্যক্তিত্বের সংঘাতের খবরও আসছে আলোচনায়।

বিদায়ী ক্লাব মৌসুমে ইন্টার মিলানের হয়ে ২৯ গোল করা সর্বোচ্চ গোলদাতা মাউরো ইকার্দিকে বিশ্বকাপের দলেই রাখেননি হোর্হে সাম্পাওলি। যেখানে একই লিগে ২২ গোল করা পাউলো দিবালা ও ১৬ গোল করা গনসালো হিগুয়েইন ডাক পেয়েছেন এবং খেলছেন! খেলোয়াড়রাই দলে চান না ইকার্দিকে, যার পেছনে আছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোন্দল। ইকার্দির স্ত্রী হচ্ছেন আর্জেন্টিনার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ফুটবল এজেন্ট ওয়ান্ডা নারা।

তাঁর সঙ্গেই একটা সময় সংসার ছিল আরেক আর্জেন্টাইন ফুটবলার ম্যাক্সি লোপেজের। কখনো জাতীয় দলে খেলা না হলেও লোপেজ বার্সেলোনায় খেলেছেন বছর দুয়েক, তার আগে রিভার প্লেটে। ফলে মেসি এবং মাসচেরানোর সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে লোপেজের। ইকার্দি লোপেজের ঘর ভাঙার কারণে তাঁকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয় আর্জেন্টিনার ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোতে। তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলেন ম্যারাডোনা, উল্টো ইকার্দিও দু’কথা শুনিয়ে দেন ‘আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর’কে।

এসব কারণেই তাঁকে দলে চাইছিলেন না মেসি ও মাসচেরানোসহ অনেকেই। ব্যক্তিগত এই রেষারেষির কারণেই ইকার্দি বিদায়ী ক্লাব মৌসুমে সিরি ‘এ’র সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েও নেই বিশ্বকাপ দলে। অথচ একই লিগে তাঁর চেয়ে কম গোল করা দুজন ঠিকই আছেন! ঠিক যেভাবে ২০১০ সালে ইন্টার মিলানে খেলা সেসময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী দলের অধিনায়ক হাভিয়ের জানেত্তিকে দলে নেননি কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনা।

দলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে মেসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেই পারেন, কিন্তু দলটাকে তিনি ঠিক নিজের দল করে তুলতে পারেননি। না সেটা হয়েছে সাম্পাওলির দল! আর্জেন্টিনার ‘ওলে’ পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘আর্জেন্টিনা দল মাঠে নেমে যেভাবে খেলেছে, তাতে মনে হয়েছে তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হচ্ছে হতাশা ও একাকিত্ব।

এই দলটা মনের দিক দিয়ে দুর্বল, তাদের চোয়াল ঝুলে গেছে।’ সাম্পাওলি দলটাকে মেসির দল হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত না হয়েছে মেসির দল, না হয়েছে সাম্পাওলির ঘরানার। চিলির কোচ হিসেবে ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্পেনকে হারানোর কৃতিত্ব আছে সাম্পাওলির, চিলিকেই পরের বছর করেছেন কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন।

সেই আক্রমণাত্মক ফুটবল, সেই গতিশীল ফুটবল তিনি খেলাতে পারেননি এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি বয়সী দলকে। ক্রমশ বড় হয়েছে ফাটল, যেটা প্রকাশ্য হয়েছে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে। সের্হিও আগুয়োরো মাইক্রোফোনের সামনেই স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘যা বলার সাম্পাওলি এসেই বলুক’। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সাম্পাওলির মন্তব্যের জের ধরে। আর্জেন্টিনার কোচ মিক্সড জোনে বলেছিলেন, খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হচ্ছে বলেই তাঁর পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে। জবাবেই আগুয়েরোর এমন ‘ফ্রি কিক’!

২০১০ বিশ্বকাপে কোচ রেমন্ড ডমেনেখের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল ফ্রান্স দল। আর্জেন্টিনা দলেও এমন কিছুরই আভাস। শোনা যাচ্ছে, ফুটবলাররা নাকি বৈঠক করে সাম্পাওলিকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানোর ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আর্জেন্টিনায় নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ, রেসিং ক্লাব, এস্তুদিয়ান্তেসের মতো ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন রিকার্দো লোমবার্দি। আর্জেন্টাইন ঘরোয়া ফুটবলে দীর্ঘদিন কোচিং করানো লোমবার্দি মনে করেন, লিওনেল মেসিও ইচ্ছা করে খারাপ খেলেছেন, ‘জাতীয় সংগীতের সময় কখনো মেসিকে মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাতে দেখা যায়নি।

মেসিকে আজকের (বৃহস্পতিবার) মতো খেলতে আমি কখনো দেখিনি। মেসিকে আমি হাঁটতে দেখেছি, যেটা কখনো দেখিনি। সে আজকে তার মতো খেলেনি।’ লোমবার্দির কথার প্রমাণ আছে ফিফার অফিশিয়াল ম্যাচ পরিসংখ্যানে। এমন বাঁচা-মরার ম্যাচে মেসির গোলমুখী শট মাত্র একটি! গোটা ম্যাচে বল নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার পেনাল্টি বক্সে ঢুকেছেন মাত্র একবার। দলের সবাই যেখানে গড়ে ৯৬১২ মিটার দৌড়েছেন গোটা ম্যাচে, মেসি তাদের চেয়ে প্রায় ২০০০ মিটার পিছিয়ে দৌড়েছেন ৭৬২৪ মিটার। মেসির পাসগুলোও ছিল না নিখুঁত।

এই ম্যাচের আগে হোর্হে ভালদানো বলেছিলেন, ‘দলটাই হচ্ছে সমস্যা, মেসি হচ্ছে সমাধান।’ সেই সমাধান হয়ে উঠতে পারেননি মেসি। হয়তো দলের সঙ্গেই গা ভাসিয়েছেন ঘটনাপ্রবাহে। লোমবার্দি টিওয়াইসি চ্যানেলে বলেছেন, ‘কোচ দোষী নয়, দোষ খেলোয়াড়দেরই।’ তিনি জানিয়েছেন, সাম্পাওলিকে তাড়িয়ে বুরুচাগাকে কোচ করতেই ইচ্ছা করে খারাপ খেলতে জোট বেঁধেছেন খেলোয়াড়রা।

ক্রোয়েশিয়ার কাছে হার খুলে দিয়েছে অর্গল, বেরিয়ে আসছে একের পর এক বিম্ফোরক তথ্য। এর সবগুলো হয়তো শতভাগ সত্যি নাও হতে পারে, তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আর্জেন্টিনার খেলার ধরন, সাইডলাইনে সাম্পাওলির ব্যর্থ আস্ফাালন আর আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের খবর, সব মিলিয়ে আকাশি-নীলে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে স্পষ্টই। আর ধোঁয়া থাকলে, আগুনও থাকবে!