• শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আমেরিকার বোয়িংয়ে ভেজাল!


প্রকাশিত: ১২:৪১ এএম, ২২ জানুয়ারী ২৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৮ বার


০০ একাধিক এয়ারক্রাফটের উইন্ডশিল্ড ফেটেছিল
০০ বিমানের রহস্যজনক পদক্ষেপহীনতা

 

 

শফিক রহমান : মাঝ আকাশে ককপিটের কাঁচে ফাটল দেখা দেয়া বাংলাদেশ বিমানে নতুন কিছু নয়। এর আগেও একাধিকবার ককপিটের কাচে (উইন্ডশিল্ড) ফাটল দেখা দিয়েছিল। রহস্যের বিষয় হচ্ছে উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দেয়া বিমানগুলো সবগুলোই ছিল আমেরিকার তৈরী বিমান। মডেলে ভিন্নতা থাকলেও এয়ারক্রাফটগুলোর প্রস্তুতকারক আমেরিকার বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানি।
বিমান বিক্রি করতে গিয়ে বোয়িং কোম্পানি তার খ্যাতি ছড়িয়ে দিতে প্রতিবার বিশাল বহরকে মাল্টিপল ভিসা দিয়ে আমেরিকা ভ্রমণ করিয়ে আনে। বাংলাদেশ বিমানে ইতিমধ্যে এসব সুযোগ সুবিধা নিয়ে একাধিক সংবাদকর্মীকেও ভ্রমণ সঙ্গী করে আমেরিকা ঘুরিয়ে এনেছে।

ফলে বোয়িং এর নির্মাণ শৈলীতে ভেজাল নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনা এবং সংবাদ তো প্রকাশ করার চেষ্ঠাও করেনা। ফলে বাংলাদেশে বিক্রি করা একাধিক বোয়িংয়ের এয়ারক্রাফট মেয়াদপূর্তির আগেই উইন্ডশিল্ডের ফাটল দেখা দিলেও সে রহস্য দ্রুত ধামাচাপা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ বিমানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বোয়িংয়ের তৈরী বেশ কয়েকটি এয়ারক্রাফ্টটের উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এরমধ্যে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ এর একটি বোয়িং ৭৮৭ এর উইন্ডশিল্ডে ক্র্যাক হয়েছিল। একই বছরের আগস্টে দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আরেকটি বোয়িং ড্রিমলাইনার মাঝ আকাশে একই সমস্যার পড়ে। এসব ক্ষেত্রে আমেরিকান বোয়িং এর নির্মাণশৈলীতে যে ভেজাল তা প্রকাশ্য হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর কোনো প্রতিবাদ করেনি রহস্যজনক কারণে। এসব ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে বিমানের নতজানু মনোভাবের নেপথ্যে কি কিছু আছে? যার কারণে বিমান কর্তৃপক্ষ বরাবরই নিরব থাকছে-এ প্রশ্ন দেশবাসীর!

সর্বশেষ সৌদি আরবের পথে রওনা হওয়ার পর ককপিটের কাচে (উইন্ডশিল্ড) ফাটল দেখা দেওয়ায় ২ ঘণ্টা বাদে ২৯৭ আরোহী নিয়ে শাহজালাল বিমান বন্দরে ফিরেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। শনিবার বিকালে বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি দাম্মাম যাচ্ছিল। ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন তানিয়া রেজা, যিনি সংসদ সদস্য ও অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের স্ত্রী।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান, ককপিটের কাচে ফাটল দেখা দেওয়ার পর ক্যাপ্টেন সেটিকে ঢাকায় ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফ্লাইটের যাত্রী ও ক্রু সবাই নিরাপদে আছেন।
বিমানের কর্মকর্তারা জানান, ফ্লাইটে ২৮৫ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু ছিল। ঢাকা থেকে ওড়ার পর ফ্লাইট ক্যাপ্টেন ককপিটের কাচে ফাটল দেখতে পেয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের আকাশসীমা থেকে আবার ঢাকার পথ ধরেন।

এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ এর ককপিটের কাচ ফেটে গেলে সেটিকে মালয়েশিয়ায় গ্রাউন্ডেড করা হয়। একই বছরের অগাস্টে দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আরেকটি বোয়িং ড্রিমলাইনার মাঝ আকাশে একই সমস্যার মুখোমুখি হলে সেটিকে ভারতের আকাশসীমা থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়।

বিমানের প্রকৌশল ও উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিদপ্তরের পরিচালক এয়ার কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ওড়ার পর আকাশে উইনশিল্ডে ক্র্যাক দেখা দেয়। চার বছরের মাথায় সাধারণত এমন ঘটনা হওয়ার কথা না। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, এটা ম্যানুফাকচারিং ফল্ট, না অন্য কোনো কারণে হয়েছে- সেটাও আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা চলছে।

উইন্ডশিল্ডে ফাটল কি এভিয়েশন খাতের সাধারণ ঘটনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে বিমানের এই পরিচালক বলেন, খুব যে কমন তা বলব না। এর আগেও আমাদের একটি বোয়িং ৭৮৭ এর উইন্ডশিল্ডে ক্র্যাক হয়েছিল। আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি।

উইন্ডশিল্ড ভেঙে গেলে উড়োজাহাজের ভেতরে চাপ কমে গিয়ে সেটি ভারসাম্যহীন হয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে। গত ১৩ জানুয়ারি জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজের (এএনএ) অভ্যন্তরীণ রুটের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ওড়ার পর মাঝ আকাশে পাইলট উইন্ডশিল্ডে ফাটল দেখতে পাওয়ায় সেটি আবার হানেদা এয়ারপোর্টে ফেরত আসে। ফ্লাইটটির ৫৯ যাত্রী ও ৬ জন ক্রুর সবাই অক্ষত ও নিরাপদে ফেরেন।

এর আগে ২০১৯ সালের মে মাসে চীনের সিচুয়ান এয়ারলাইন্সের একটি একটি এয়ারবাস- এ ৩১৯ উড়োজাহাজ ৩২ হাজার ফুট উপরে ওড়ার সময় এর উইন্ডশিল্ড ভেঙে যায়। বাতাসের প্রচণ্ড চাপে কো-পাইলট উড়োজাহাজের বাইরে অর্ধেক বেরিয়ে গিয়েছিলেন।পরে উড়োজাহাজটিকে চেংদু বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করাতে সক্ষম হন পাইলট। সেই যাত্রায় ১১৯ যাত্রীর কেউ আহত হননি।