• শনিবার , ৪ মে ২০২৪

আওয়ামী লীগ বিএনপির পাল্টপাল্টি এক দফা’য় জাহাঙ্গীরের খিঁচুড়ি


প্রকাশিত: ৭:২৬ পিএম, ১২ জুলাই ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩১ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, এটাই আওয়ামী লীগের একদফা।বিএনপির সমাবেশের পাল্টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের সড়কে বুধবার (১২ জুলাই) আয়োজিত আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে এ কথা ওবায়দুল কাদের।
ওদিকে –
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একদফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত ‘যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফা যৌথ ঘোষণার সমাবেশ’-এ এই দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে-
সমাবেশের ব্যতিক্রম বিষয় ছিল-ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ যোগ দিতে যাওয়া কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে এসেছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

নির্বাচন পর্যন্ত ঢাকার রাজপথ
দখলে রাখব-মেয়র তাপসের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ঢাকার রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না। আজ থেকে ঢাকার রাজপথ আমাদের দখলে থাকবে। নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো।বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের সড়কে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মেয়র তাপস এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে নগর ভবন পর্যন্ত লোকারণ্য। আমরা বিএনপির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাঠে আছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাঠে থাকবো।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জানুয়ারি মাসে দেখিয়ে দেব, সুষ্ঠু নির্বাচন কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী। শেখ হাসিনাকে দেশের একমাত্র কান্ডারি দাবি করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে যেভাবে বলেছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। ঠিক সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশ বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায়। সে জন্য তারা সরকার পতনের এক দফা দিচ্ছে। আমরা তাদের অতীতের মতো মোকাবিলা করবো। আজ কয়েক ঘণ্টার নোটিশে কয়েক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছে। আমাদের এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির সরকার পতনের একদফা ঘরে ফিরে যাবে। জনগণকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করবে। শেখ হাসিনা বাঁচলে দেশ বাঁচবে, শেখ হাসিনা এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে।

খিচুড়ির ড্যাগসহ নেতাকর্মীর বহর
নিয়ে শান্তি সমাবেশে জাহাঙ্গীর

ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ যোগ দিতে যাওয়া কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকদের জন্য খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে এলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। বুধবার (১২ জুলাই) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে। জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী-সমর্থকরা জানায়, গাজীপুর থেকে ২৫০ গাড়ির বহরে কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক নিয়ে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের গেটের সামনে শান্তি সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম।
দুপুরে তার কর্মী সমর্থকদের খাওয়ানোর জন্য সকালে গাজীপুরে জাগাঙ্গীর আলমের নিজ বাড়িতে কয়েক মণ চালের খিচুড়ি রান্না করা হয়। পরে ১৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ওইসব খিচুড়ি গাড়িতে নিয়ে সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন সাবেক মেয়র। ঢাকায় আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ যোগ দিতে রওনা হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলটির সমাবেশে যোগ দিতে জাহাঙ্গীর আলম ৩০০টি বাস, ৭০টি মাইক্রোবাসে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। বুধবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে এসব তথ্য জানানো হয়।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ কিংবা কোন পদ পদবী না থাকলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে এর আগেই ঘোষণা দেন।

আওয়ামী লীগের সমাবেশে চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি-

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১২ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে এ ঘটনা ঘটে।জানাগেছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সমর্থকদের মধ্যে এই মারামারি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের একে অপরের ওপর চেয়ার ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় মঞ্চ থেকে সবাইকে বসে পড়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা।মাইক হাতে নিয়ে এক নেতা বলেন, আমাদের মহানগরের নেতাকর্মীরা যারা সামনে আছেন, সবাই চেয়ারে বসে পড়ুন। আপনারা বিশৃঙ্খলা করবেন না।মঞ্চ থেকে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি নিজ সমর্থকদের বলেন, এই তোমরা বসে পড়, কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ড্রোন ক্যামেরা আছে। যারা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ বিকেল ৩টায় শুরু হয়, চলবে ৫টা পর্যন্ত। এতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা অংশ নিয়েছেন।

বিএনপির এক দফার পর পদযাত্রা
কর্মসূচি ১৮ জুলাই সারা দেশে-

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একদফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি আয়োজিত ‘যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফা যৌথ ঘোষণার সমাবেশ’-এ এই দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় তিনি সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বলেন, এখনও সময় আছে এই ঘোষণার পরপরই পদত্যাগ করুন। অন্যথায় পালাবার পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না।‘যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফার যৌথ ঘোষণা’ শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ১ দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড় তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছে।’ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।

একদফা ঘোষণার বক্তব্যের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকের ঘোষণা আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হিসেবে দিচ্ছি না, এই ঘোষণা নির্বাসিত নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎভাবে অবৈধ সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এই ঘোষণা ঐতিহাসিক। জাতিকে মুক্ত করবার আহ্বান। জাতিকে তার হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান।বক্তব্যের শুরুতে তিনি স্মরণ করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নিহত কর্মীদের প্রতি। তাদের নাম উল্লেখ করে শ্রদ্ধা জানান ফখরুল।

ঘোষণার আগে ফখরুল আরও বলেন,‘এই সংগ্রাম অস্তিত্বের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম ১৮ কোটি মানুষের সংগ্রাম। ভোট দিতে চাই। যাকে খুশি তাকে দেবো। সব রাজনৈতিক দল, যারা যৌথভাবে আন্দোলন করছি, সর্বসম্মতভাবে আমরা যৌথ ঘোষণা দেবো যার যার জায়গা থেকে। প্রায় ৩৪টির মতো দল ও জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছি সর্বসম্মতভাবে। আসুন, দুর্ভেদ্য উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লুটেরা ফ্যাসিবাদী সরকার সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র নির্মাণ করি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতি এ কথা বলেন ফখরুল।

কর্মসূচি-
প্রাথমিক কর্মসূচি উল্লেখ করে ফখরুল জানান, ১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৮ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা; ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা (গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী) এবং ১৯ জুলাই বুধবার, ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা (উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক) পর্যন্ত পদযাত্রা। এ কর্মসূচিকে একেবারেই শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।