• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

অপরাধী যে দলের’ই হোক শাস্তি পেতেই হবে-হাসিনা


প্রকাশিত: ৫:১৪ এএম, ৭ অক্টোবর ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫২ বার

সংসদ রিপোর্টার  : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হবেই। অপরাধীদের 12দল হিসেবে আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি না। অপরাধী অপরাধীই, সে যে দলেরই হোক। যে অপরাধী তাকে শাস্তি পেতেই হবে। কোনো রেহাই নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যারা আন্দোলনের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছে তারা কেউ-ই রেহাই পাবে না। তাদের বিচার অবশ্যই হবে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে, তাদেরও বিচার এই বাংলার মাটিতে অবশ্যই একদিন হবে।

সিলেটের ছাত্রী খাদিজাকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের অত্যন্ত অবাক করে দেয়। একটি মেয়েকে জনসম্মুখে কোপানো হয়েছে, মানুষ দাঁড়িয়ে তা দেখেছে, কেউ ভিডিও করছে, মোবাইল ফোনে ছবি তুলছে, কেউ মেয়েটাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। কেউ কি মেয়েটাকে রক্ষা করতে পারত না? ওই ঘটনার সময় সেখানে অনেক লোক উপস্থিত থাকলেও কেউ কেন এগিয়ে যায়নি?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীকে ধরা হয়েছে। যারাই অপরাধী, যে অপরাধই করুক, সে শাস্তি পাবেই। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো পত্রিকায় এসেছে ওই ছেলেটি অমুক দল, তমুক দল করে। এখানে কোনো দলীয় কোন্দলের বিষয় ছিল না বা দল হিসেবে তাকে কেউ হত্যা করতে যায়নি। পত্রিকায় এসেছে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সে খাদিজাকে হত্যা করতে গেছে। এজন্য একটা মানুষকে হত্যা করতে হবে? পত্রিকা এবং কিছু লোক এটাকে দলীয় হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে দলীয় হিসেবে তাদের কেউ প্রশ্রয় দিচ্ছে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অনেক নেতা এ ব্যাপারে অনেক কথা বলছেন। তারা যখন জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, সে কথা কি তারা ভুলে যাচ্ছে। পুলিশকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তাও আমরা দেখেছি। এভাবে প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করা বিএনপি-জামায়াতই শিখিয়েছে। এরাই পথ দেখিয়েছে। এই নৃশংসতা করে মানুষের ভেতরে একটা পশুত্বের জন্ম দিয়েছে। তাদের দেখানো অমানবিকতার ঘটনার রেশ তো এখনও চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, কে কোন দল করে তা বিবেচ্য বিষয় নয়, অপরাধ যে করবে তার বিচার হবেই।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি সৃষ্ট উত্তেজনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকুক এটাই আমরা চাই। কোনো রকম সংঘাত বা উত্তেজনা হোক এটা আমরা চাই না। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের মধ্যে সংঘাত হলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত ও পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি উভয় দেশকে আহ্বান জানাবো তারা যেন সংযত আচরণ করে, কোনো উত্তেজনা যেন সৃষ্টি না হয়।

নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে পুনর্বাসন করে। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যেসব যুদ্ধাপরাধী সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডিত হয়েছে, দণ্ড কার্যকর হয়েছে, সেসব যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার পাশাপাশি সকল অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই নিজের ছেলে-মেয়ে ও ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে খেয়াল রাখুন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়ন ও সফলতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ সবদিক থেকে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তা প্রমাণিত। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্ববরেণ্য অনেক নেতাও বাংলাদেশের ভূয়শী প্রশংসা করেছেন। উন্নয়নে বিষ্ময় প্রকাশ করে অনেকে কী ম্যাজিকে এটা সম্ভব হলো তাও জানতে চেয়েছেন। আমি তাদের বলেছি- কোন ম্যাজিক নয় বরং দেশের মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের চিন্তা নিয়ে কাজ করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এবারে জাতিসংঘে প্রাপ্ত দুটি পুরস্কারও দেশের জনগণের প্রতি উত্সর্গ করে বলেন, দেশের জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দিয়েছিল বলেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি, দেশের জন্য সুনাম ও পুরস্কার অর্জন করতে পারছি।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার শিক্ষা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের চিন্তা আমি জয়ের কাছ থেকেই পেয়েছি। তার মতামত, পরামর্শ ও সহযোগিতায় আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি। এ কারণে এবার সজীব ওয়াজেদ জয়ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।  তিনি বলেন, আমরা কেউ অটিজমে সচেতন ছিলাম না।

আমার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন করেছে। তার পরামর্শেই আমরা অটিজম ফাউন্ডেশন গঠন করেছি। সায়মা হোসেন এখন জাতিসংঘে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। তার একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের রেজুলেশনে পাস হয়েছে। আমি প্রতিটি ঈদ, পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা কার্ড অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি করি। যে শিশুর ছবি স্থান পায়, তাকে এক লাখ টাকা দিয়ে উত্সাহিত করি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির কারণে ছেলে-মেয়েকে তেমন সময় দিতে পারিনি। হোস্টেলে থেকে তাদের পড়াশুনা শিখতে হয়েছে। কষ্ট করেও তারা বিশ্বের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করছে। এজন্য মা হিসেবে আমি গর্বিত। শুধু জয়-পুতুলই নয়, শেখ রেহানার তিন সন্তানও একেকটা সোনার টুকরো। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁদের জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে তার ৫০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে অধিবেশনে চমক আনেন। কারণ এমপিরা জানতেনই না স্পিকারের জন্মদিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার।

উন্নত যোগাযোগের ওপর এ অঞ্চলের ভবিষ্যত্ প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে উন্নত যোগাযোগের ওপর অঞ্চলটির ভবিষ্যত্ প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনাম টি রাবগে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত্ করলে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের সরকার ও জনগণের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান প্রথম বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দুদেশের মধ্যকার বিদ্যমান চমত্কার সম্পর্কের উল্লেখ করে ভুটানের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুদেশের উচ্চপর্যায়ে সফর বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়েছে।