• মঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

লকডাউন ভোগান্তি পুলিশ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ঘরমুখো মানুষ


প্রকাশিত: ১:৪৮ এএম, ১৩ এপ্রিল ২১ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১৮ বার

বিশেষ প্রতিনিধি/ ডেস্ক রিপোর্টার : লকডাউনের মাঝে ভোগান্তি আর পুলিশ চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ঘরমুখো মানুষ। কি সিএনজি, কি প্রাইভেট কার, কি মোটরসাইকেল কেউ’ই টাকা দেয়া ছাড়া পার পাননি। রোববার-সোমবার রাতে ও অজ মঙ্গলবার হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়ার প্রাক্কালে এসব অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকায় থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে তাই এত কষ্ট সহ্য করেও বাড়ি যাওয়া। এই সুযোগে অসাধু মোটরসাইকেল, সিএনজি ও ছোট ছোট যানবাহনগুলো কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। কাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এ কারণে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা চাড়ছে।

চলমান ঢিলেঢালা লকডাউনে সবকিছু খোলা থাকলেও দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ। এতে করে বিপাকে পড়েছে ঘরমুখি মানুষ। সামর্থবানরা প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে বাড়ি ফিরলেও যাদের সামর্থ নেই তারা সিএনজি অটোরিকশা, ট্রেম্পু বা পিকাপভ্যানে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছে। মালবাহী ট্রাকেও ফিরছে মানুষ। এমতবস্থায় পথে পথে টেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে পুলিশ। প্রাইভেটকারের যাত্রীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নামে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকেই ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য রওনা করছে মানুষ। সেখানে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

করোনার সংক্রমণ রোধে আগামীকাল ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। লকডাউনের খবরে রাজধানীসহ এর আশপাশের এলাকা সাভার, ধামরাই, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছেন। গাড়ির চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। রোববার টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ছিল দীর্ঘ যানজট। এদিকে, পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ ছিল বেশি। একই অবস্থা শিমুলিয়া ফেরিঘাটেও। যাত্রীদের অভিযোগ, ফেরিঘাটে প্রবেশের আগে পুলিশ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশা আটকিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করেছে।

জানা গেছে, ঘরমুখো মানুষের চাপে গতকাল সোমবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ভোর থেকে গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শহীদনগর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ভুক্তভোগিরা জানান, লকডাউনের ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই হাজার হাজার বাড়ির পথে রওনা করেন ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা ট্রাক, পিকআপে করে। মহাসড়কে পুলিশের তল্লাশির কারণে এবং গাড়ির চাপে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। মনোহরগঞ্জর উপজেলার কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমাস জানান, সকাল ছয়টায় যাত্রাবাড়ি থেকে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি দাউদকান্দির গৌরীপুরে পৌঁছেন।

৫০ কিলোমিটার পথ যেখানে এক ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া যায়, সেখানে সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগেছে। তিনি বলেন, পথিমধ্যে পুলিশ বিনাকারণে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একেকটা গাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যদি ৩ মিনিটও সময় লাগে তাহলে শত শত গাড়ি থামালে কি অবস্থা হয় বোঝেন। মহাসড়কে চলাচলকারি ট্রাকচালক শের আলী ও আব্দুৃর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়ক যেতে এক ঘণ্টার বদলে সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা লেগেছে। প্রাইভেটকার বা ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরেও পুলিশই যানজট সৃষ্টি করে ভোগান্তি বাড়িয়েছে।

এদিকে, রাজধানীর গাবতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, অটোরিকশা, পিকাপভ্যান ও ট্রাকে করে মানুষ বাড়ি ফিরছে। গাবতলী টার্মিনাল থেকে এসব গাড়ি ছেড়ে গেলেও পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। অথচ আমিনবাজার ব্রিজের ওপাড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। এতে করে আমিনবাজারে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচন্ড গরমে উন্মুক্ত যানে হাজার হাজার যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ভুক্তভোগিরা বলেন, লকডাউন এড়াতে মানুষ বাড়ি ফিরবে এটাই স্বাভাবিক। এ সময়ে পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি না করলেও পারতো। কয়েকজন চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, টার্মিনালের ভেতরে বা বাইরে থেকে পিকাপভ্যান বা প্রাইভেট কারে যাত্রী তোলার জন্য পুলিশকে ৫০ থেকে একশ’ টাকা করে দিতে হচ্ছে। মাওয়া ফেরিঘাটে প্রাইভেট কারের চালক আল আমীন বলেন, ফেরিতে ওঠার আগে ট্রাফিক পুলিশ নানা প্রশ্ন করে প্রাইভেট কার আটকে রাখছে। একশ টাকা করে দেয়ার পর তারা গাড়ি ছাড়ছে। এভাবে প্রতিটি গাড়ি থেকে টাকা তুলছে পুলিশ।

শুধু গাড়িতে নয়, অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের পথে রওনা করছেন। যশোরগামী বিল্লাহ হোসেন বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়ায় আসার জন্য একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করি। তাতে চালকসহ দুই যাত্রীর ভাড়া দিয়েছি এক হাজার টাকা। যেখানে বাসের ভাড়া দেড়শ টাকা।ধামরাই এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন ফারুক মোল্লা। ঘাট এলাকায় তিনি বলেন, দুদিন পরই লকডাউন শুরু। তাই গ্রামের বাড়ি মাগুরায় যাচ্ছি। সামনে আবার ঈদ। লকডাউনের সময় তো যেতে পারব না। তাই আগেই চলে যাচ্ছি। সাভারের পোশাকশ্রমিক মাহির আলী বলেন, অনেক কষ্টে ধামরাই থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এসেছি।

বিআইডবিøউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জিল্লুর রহমান জাতিরকন্ঠ কে বলেন, লকডাউনের খবরে রোববার সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে দেশের প্রায় ২১ জেলার যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়। করোনার পরিস্থিতি মোবাবিলার জন্য সরকার লকডাউন দিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার যাত্রী আর যানবাহন পারাপার করতে হয় আমাদের।

এক ভুক্তভোগী বলেন, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেছি প্রাইভেটকারে। ভাড়া দিয়েছি ৫০০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজিতে আরও ৫০০ টাকা দিয়ে পাটুরিয়ায় আসলাম। যেখানে ধামরাই থেকে পাটুরিয়া আসতে আগে লাগতো মাত্র ১০০ টাকা। ঢাকামুখী আবুল করিম বলেন, তিনদিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে গিয়েছিলাম। আজ ঢাকায় ফিরছি। লকডাউনে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তাই করোনার ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছি। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি।