• বুধবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৫

রবি’র ১৪৯০ কোটি লুটপাটে তোলপাড়


প্রকাশিত: ৮:০১ পিএম, ১৭ জানুয়ারী ১৮ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০০ বার

এস রহমান  :  এবার মোবাইল কোম্পানি রবি’র ১৪৯০ কোটি লুটপাটে তোলপাড় চলছে।অতি সংগোপনে সংশ্লিষ্ঠদের ম্যানেজ করে এই লুটপাট করে রবি। ঘটনার সঙ্গে কয়েক robi-axiata-airtel-350x200রাঘববোয়ালও জড়িত। অডিট রিপোর্টে এই লুটপাটের ঘটনা ফাঁস হলে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। বিটিআরসি সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়, ১৮ বছরে সরকারকে বড় অংকের কর ফাঁকি দিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর রবি অ্যাক্সিয়াটা লিমিটেড।

এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাতিরকন্ঠ’কে জানান, যদি অপরাধ করে থাকে তবে তাদের তো শাস্তি’তো পেতেই হবে। আমি এখনো বিষয়টি ভালভাবে জানিনা। তবে সব কিছু’র খোঁজখবর নিচ্ছি, দোষী হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা।

বিটিআরসি সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ১হাজার ৪৯০ কোটি টাকার কর ও অন্যান্য প্রদেয় ফাঁকি দিয়েছে।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত চালানো এক rr====অডিটে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।ওই অডিট প্রতিবেদন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) জমা দেওয়া হয়েছে।বিটিআরসি ওই অডিটটি নিরীক্ষা করে দেখছে।সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, কর প্রতিবেদনে রবি তাদের গ্রাহকের সংখ্যা ইচ্ছা করে কমিয়েছে। এমনকি সরকারকে কর প্রদান এড়ানোর জন্য তাদের খতিয়ানও গরমিল করেছে।

মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ বার্হাড, ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড অব ইন্ডিয়া এবং এনটিটি ডোকোমো ইনক অব জাপানের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রবি আজিয়াটা লিমিটেড। রবির ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব আজিয়াটার, ২৫ শতাংশ ভারতীর আর বাকি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এনটিটি ডোকোমো অব জাপানের।অনুসন্ধান অনুযায়ী নির্ধারিত ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের বেশি স্পেকট্রাম ব্যবহার করে সরকারকে ৩৫০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে রবি।

অডিট কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, কেউ ভাবতেও পারবে না রবি ১৮ বছর ধরে কী করে আসছে।আমরা প্রতিটি পদক্ষেপে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি।কোম্পানিটি সরকারের কাছে তাদের নেটওয়ার্ক টাওয়ার ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্যও গোপন করেছে। যা অবশ্যই একটি অপরাধ। জানা গেছে, রবি আজিয়াটাকে অডিটের খসড়া প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে কেন এমন অনিয়ম হলো।

এদিকে রবি এর উত্তর দেওয়ার জন্য কিছু সময় চেয়েছে বলে জাতিরকন্ঠকে বিটিআরসি মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এমডি মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।এর আগে ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিদেশে অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে ফোন কল স্থানান্তরের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির অপরাধে রবি কোম্পানিকে  ১৪৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।ওদিকে কর ফাঁকির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রবি কর্তৃপক্ষ।

বিটিআরসি ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ অডিট ফার্ম মাসিহ মুকিত হক অ্যান্ড কোম্পানীকে রবির খতিয়ান পর্যালোচনা করার জন্য একটি চুক্তি সই করে। পরে ওই ফার্মটি বিদেশি সহযোগী পিকেএফ শ্রীধর অ্যান্ড সান্তানাম এলএলপির সঙ্গে একযোগে কাজ করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৪, ভারতীয় অপারেটর এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত রবির ব্যবসার গতিবিধির অডিট করে ফার্মটি।

অডিটের খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রবি (পূর্ব নাম একটেল) আসল সংখ্যা ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ কম গ্রাহক দেখায় শুধুমাত্র সরকারকে ২০০ কোটি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য। ওই খসড়া অনুযায়ী ২০০৪ ও ২০০৫ সালে রবিকে (তৎকালীন একটেল) একটি হ্যান্ডসেট বিক্রির জন্য ১১০০ টাকা কর নির্ধারণ করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তারা ওই বিক্রি হওয়া হ্যান্ডসেটের তথ্যও গোপন করে।

এছাড়া এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) মূল্য সংযোজন কর শাখা ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে ৯০০ কোটি কর ফাঁকির তথ্য পায়। ওই সময় রবি ৫৩৩ দশমিক ৬১ কোটি টাকা ভ্যাট ও ১৫৮ দশমিক ২০ কোটি টাকার উৎস কর জমা দেয়নি। এমনকি একীভূতকরণ ফি ও স্পেকট্রাম চার্জ সবমিলিয়ে ২১৩ দশমিক ১৯ কোটি জমা দেয়নি রবি।২০১৪ সালে বিটিআরসি ৪০ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সকল মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের হিসাব অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্সের নিয়মকানুন মেনে চলা, ট্যাক্স ও অন্যান্য ফি সময়মতো জমা দেওয়া ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অন্যান্য এজেন্সির সঙ্গে  রাজস্ব ভাগ করা নির্ণয় করতে এই অডিট পরিচালনা করা হয়।