‘বেফাঁস’ ফাঁদে জাহাঙ্গীর ফাঁদকারীরা বহাল!
বিশেষ প্রতিনিধি/গাজীপুর প্রতিনিধি : ‘বেফাঁস’ ফাঁদে আটকা পরে জিসিসি মেয়র জাহাঙ্গীর নিজে কাঁদলেন এবং কাঁদালেন কর্মী সমর্থকদের। কিন্তু ফাঁদকারীরা বহাল তবিয়তে থেকে শুধু তালিয়া বাজাচ্ছে না রীতিমত পটকা ফুটাচ্ছে আতশবাজি জালাচ্ছে ! ফ্রি মিষ্ঠি খাচ্ছে খাওয়াচ্ছে!ওদিকে না বুঝে ফাঁন্দে আটকা পড়ে সব হারিয়ে মান-সম্মান ইজ্জত রক্ষায় ত্রাহি অবস্থা জাহাঙ্গীরের। যেন ফান্দে পরিয়া বগা কান্দেরে..। বলছেন, আওয়ামী ঘরের সন্তান আমি, কোথায় যাবো, অন্য ঘরে তো যেতে পারবো না, আমার মা আমার অবিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করেছে। যারা ঘরে ঢুকে চুপি চুপি অডিও ভিডিও করে তাদের বিচার হয়নি মা, আপনি আবার তদন্ত করেন মা জননী..।
এলাকাবাসী জানান, ইতিপূর্বে বহু বেফাঁস কথা বলে আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা, জাতীয় নির্বাচন, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন, সংসদ সদস্য, সরকার ব্যবস্থাসহ নানামুখী বেফাঁস মন্তব্য করেও পার পেয়ে গেছেন, বসুরহাটের আলোচিত মেয়র আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরর ভাই আবদুল কাদের মির্জা। পৃথিবীতেও বেফাঁস মন্তব্য করে অনেকে ফেঁসে গেছেন আবার অনেকে পার পেয়েছেন।রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেফাঁস হচ্ছে উত্তমবস্তুর অপব্যবহার, বেফাঁস কথা বলাটা যেমন অনুচিত তেমনি বলাবলি’তে হিথে বিপরীতটাই ঘটে এবং ঘটানো হয় পরিকল্পিতভাবে। কিন্তু যারা এই ফাঁদটা পাতেন তারা সব সময়ই আড়ালে থেকে যান এবং পার পেয়ে যান। তেমনি বেফাঁসের ফাঁদে আটকে গেছেন গাজীপুর মেয়র জাহাঙ্গীর। তার ফাঁদকারীরা সবাই রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
এ অবস্থায় ‘বেফাঁস’ জাহাঙ্গীর কাঁদলেন-কাঁদালেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক জাহাঙ্গীরের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্বও পেয়েছিলেন তিনি। এলাকাবাসী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে তাকে বেফাঁসে ফেলে অবলিলায় বলানো হয়েছে। সহজ সরল জাহাঙ্গীর রাজনীতির সুক্ষ কূট চাল ঘূণাক্ষরে বুঝে ওঠার আগে ফাঁদে আটকে যান। পরে এটাতেই ফেঁসে যান জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর আর্শিবাদ’ও খোয়ান। যা নিয়ে তোলপাড় আলোচনা চলছে।
একটি ঘরোয়া আলোচনার রেকর্ড ফেসবুকে ফাঁস হওযায় বহিস্কার হলেন তিনি। কিন্তু যারা এই ফাঁদটা বানালেন তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু মহৎ না। এরা হচ্ছে রাজনীতির মিরজাফর। এদেরও চিহ্নিত করাও জরুরী। কারণ, তা না হলে প্রকৃত পক্ষে থলের বেড়াল বেরুবে না। ডালমে কুচ কালা থেকেই যাবে! যা দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জানাও জরুরী। কারণ, তাঁকেই ট্রাস্ট শুধু করা যায়। যারা তদন্ত করেন তাদেরও কিন্তু কেনা যায়! তাই থলের বেড়াল বের করাটাও জরুরী বলে গাজীপুর বাসীর দাবি তুলেছেন।
যাহো্ক, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও পুনর্বিবেচনা করতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ সদস্য পদ হারানোর পর শনিবার সকালে বোর্ডবাজার হারিকেন এলাকার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহাঙ্গীর। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জাহাঙ্গীর কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় নেতাকর্মীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আসলে এন্টি আওয়ামী লীগার নন। তিনিও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিময় বেফাঁস কথা হলো কি করে? তিনি একটু বেশী কথা বলেও থাকেন। যেটা কিনা আবালের মত-! ফলে সমস্যা হয়েছে এবং সেটাই কাল হয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারা হয়ে গেছে! এখন প্রশ্ন জাহাঙ্গীর যাদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করেছিলেন তারাই তার শত্রু?
যাহোক এসব বিষয় নিয়ে মেয়র বলেন, আমার সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝানো হয়েছে। ছাত্রলীগের মাধ্যমেই আমার রাজনীতি শুরু। আমাকে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে বাঁচতে দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করবেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উনি চাইলে যে কোনো সময় ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে রাজি। আমার মা আমার অবিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করেছে।তিনি বলেন, যারা ঘরে ঢুকে অডিও করে তাদের বিচার হয়নি। আমি ভুল করতে পারি, আমার ভুল হতে পারে। কিন্তু আমি কোনো পাপের সঙ্গে জড়িত নই।
সংবাদ সম্মেলনে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, আমি আওয়ামী লীগের জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য, আমার মা সমতুল্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য জীবন দিতে রাজি, তবু মিথ্যা অপবাদ নিয়ে মরতে চাই না। বিশ্বমানবতার মা, আমার মায়ের কাছে বলতে চাই- আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পুনর্বিবেচনা করুন।গত ২২ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের একটি ঘরোয়া আলোচনার রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে। এরপর গত ৩ অক্টোবর মেয়র জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। এতে তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন।
বঙ্গবন্ধু ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সভায় উপস্থিত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক একটি গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।