• সোমবার , ২১ এপ্রিল ২০২৫

বীরযোদ্ধা কাকনবিবি’র নানা আক্ষেপ?


প্রকাশিত: ১:১৪ পিএম, ২২ মার্চ ১৮ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭৪ বার

সিলেট প্রতিনিধি:   রাজাকারদের হাতে শ্লীলতাহানি,মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচরসহ সম্মুখ যুদ্ধের নানা বীরত্বগাঁথা’র স্মৃতি রেখে নাফেরার দেশে চলে গেলেন বীরযোদ্ধা কাকনবিবি kakon-bb-www.jatirkhantha.com.bd(বীরপ্রতীক)। বুধবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান।হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. দেবব্রত রায় বলেন, হাসপাতালে তিনি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল ইসলামের অধীনে ভর্তি হন এবং আইসিইউতে ডা. সব্যসাচী রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ৯৬ সালে কাঁকন বিবিকে বীরপ্রতীক উপাধি দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পত্র-পত্রিকায় তাকে বীরপ্রতীক হিসেবে বলা হলেও গেজেট এখনও প্রকাশিত হয়নি।

বাংলাদেশ স্বাধীন করার নিমিত্তে জীবনের শেষ আশা ত্যাগ করে কাঁকন বিবি বেছে নিয়েছিলেন গুপ্তচরবৃত্তি, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন কয়েকবার। তবে যুদ্ধ শেষে কোন এক অভিমানে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। স্বাধীনতার ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে সাংবাদিক রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু তাকে ভিক্ষারত অবস্থায় খুঁজে পান। গণমাধ্যমে আসেন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঁকন বিবিকে এক একর খাস জমি ও বীরপ্রতিক উপাধি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ওই জমিতেই ছোট্ট কুড়ে ঘরে বসবাস করতেন তিনি। একমাত্র মেয়ে সখিনা বিবি ও মেয়ের জামাই রফিক মিয়াকে নিয়েই ছিলো তাঁর সংসার।

kakon bibi-www.jatirkhantha.com.bd.1বেসরকারীভাবে কাঁকন বিবি প্রথম স্বীকৃতি পান ১৯৯৮ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের দেয়া সংবর্ধনায়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এককালীন অর্থসহ প্রতি মাসে তাকে সম্মানী দিত জনকণ্ঠ।কাঁকন বিবি মহান মুক্তিযুদ্ধে এক সাহসী নারীর নাম। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে বেছে নেন গুপ্তচরবৃত্তির পথ। জীবনবাজি রেখে পাকিস্তানী মিলিটারির তথ্য সংগ্রহ করে আনতেন, সরবরাহ করতেন মুক্তিবাহিনীর মধ্যে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী একাধিক মিশনে জয়ী হয় মুক্তিবাহিনী। সাহসী এই নারী সরাসরি অংশ নিয়েছেন আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বলিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দূরিনটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি সম্মুখযুদ্ধে।

এর আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বীরপ্রতীক কাকন বিবিকে গত সোমবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। বুধবার তাঁর চিকিৎসার জন্য ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তবে রাতেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। শতবর্ষী কাকন বিবি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

নতুন করে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানান।মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হবে। গত বছরের ২১ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছিলেন কাকন বিবি। কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
?????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????
কাকন বিবি ১৯৭১ সালে তিন দিনের কন্যা সন্তান সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি রাজাকারদের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হন। তিনি কেবল মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, সেই সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন।১৯৭১ এর জুনে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন কাঁকন বিবি। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাঁকে। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তখনই কাঁকন বিবি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। জুলাই মাসে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের।

মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তাঁর সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। তাঁর ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড়ের।কাকন বিবি শুরু করেন পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করার। তার সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হন।
গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি।

এবার একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারেরা তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে মৃত ভেবে অজ্ঞান কাকন বিবিকে পাকি বাহিনী ফেলে রেখে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে বালাট সাব-সেক্টরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুনরায় ফিরে যান বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর তাঁকে প্রশিক্ষণ দেন। এর পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখযুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই শুরু করেন। কাকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।