• শুক্রবার , ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ফাঁকফোকরে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে


প্রকাশিত: ৫:২৯ পিএম, ২৪ জুলাই ২২ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৩ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : ব্যাংকিংখাতে চ্যালেঞ্জ অনেক উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বাণিজ্যের আড়ালে বিভিন্ন ফাঁকফোকরে দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন লোকের দুর্নীতি আর বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতার কারণে খেলাপীঋণ হুহু করে বাড়ছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সম্প্রতি বড় ব্যবসায়ীদের বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি অফিসের সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিংখাতে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ছে। ঋণের সুদের সীমার মতো ডলারেরও সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। যা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। দেশে এতো আমদানি হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে কি আসলে হচ্ছে? তার আউটপুট কোথায়? বিভিন্নভাবে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এরফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে বড় সমস্যা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার, ব্যাংক ও রেগুলেটর। স্থানীয় সরকার বলতে কিছু নেই। তাই সামষ্টিকভাবে খুব সহজে সংকট থেকে কেটে উঠা সম্ভব নয়। কারণ ব্যাংকিং খাত জাতীয় জীবনে ভালোভাবে অবস্থান করলেও ঋণ পুন:তফসিলিকরণ বেড়েই যাচ্ছে। বর্তমানে সুশাসন বড় সমস্যা। বাংলাদেশ ব্যাংককে বাইরে থেকে অর্থাৎ বিএবি, এবিবি ও এফবিসিসিআই থেকে বিভিন্ন ব্যাপারে চাপানো হচ্ছে সিদ্ধান্ত। অথচ আমাকে তৎকালিন কেবিনেট সচিবও কিছু চাপানোর চেষ্টা করলেও তা পারেনি। তাই যেভাবে হোক আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। ঋণ রি-সিডিউলের ক্ষেত্রে শুধূ বড় ঋণীরা সুযোগ পাবে আর ছোটরা পাবে না তা হবে না। মাঝারি ও ক্ষুদ্র ঋণীদের শাস্তি দেওয়া হবে, তা হবে না। উল্টো পথে গেছে। তাই বিবেচনা করতে হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ফাঁকফোকরে দেশে থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। তা অবশ্যই বন্ধ কতে হবে। একই সঙ্গে বাইরের অর্থ ফেরাতে অ্যাকশনে যেতে হবে সরকারকে। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ হিসাব চাওয়ার অধিকার জনগণের আছে। সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষজ্ঞরা সব সময় খারাপ কিছু বলে না। ভালো অনেক কিছু বলে থাকে। তা আমলে নিতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষ হিসেবে মানুষকে পাত্তা দিতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণের সুদের সীমা নির্ধারণ করাই বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ সংকুচিত হয়েছে। গত জুলাই থেকে মে মাসে বেসরকারি ক্ষেত্রে মাত্র ১২ শতাংশ ঋণ গেছে। যেখানে সরকারের কাছে গেছে ২৭ শতাংশের বেশি। তাই ঋণের সুদের সীমারেখা বেঁধে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক তা বিবেচনা করা দরকার।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এটা প্রকৃত আমদানি না। পরিমাণের দিক থেকে বাড়েনি। অর্থের দিক থেকে বেড়েছে। এই আমদানি কতটুকু জেনুইন তাও বিবেচনার বিষয়। কারণ অর্থপাচার সিংহভাগ ট্রেডের মাধ্যমে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমদানি যেভাবে বাড়ছে রপ্তানি হিসেবে বাড়ছে না রেমিটেন্সও বাড়ছে না আড়াই শতাংশ দিয়ে কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তাও দেখতে হবে কারণ রেমিটেন্স বাড়লে ডলারের সংকট কিছুটা কমবে। তাই রেমিটেন্স আরো বাড়াতে মার্কেট ডাইভারসিফিকেশনের পরিকল্পনা করতে হবে। সব মিলিয়ে দেশে সামষ্টিক পরিবেশ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তার সমাধানে জনগণকেও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কারণ ডলারের চাপ মেটাতে টাকার অভাব মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমদানির বাইরে অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাবে। তাই জনগণ যাতে উপকৃত হয় তা দেখতে হবে সরকারকে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের উপস্থাপনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।