পুলিশ কমিশনার হাতেনাতে ধরলেন ফাঁড়ি ইনচার্জের মাদককারবারী
বিশেষ প্রতিনিধ/রাজশাহী প্রতিনিধি : এবার পুলিশ কমিশনার হাতেনাতে ধরলেন ফাঁড়ি ইনচার্জের মাদককারবারী। এই মাদক কারবারী পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছে আরএমপির তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুদ রানা। এলাকাবাসীর অভিযোগ রানা পুলিশ তো নয় যেন চোরের সর্দার। সে চোরাই কারবারীতে ব্যবহার করেন চোরাই প্রাইভেটকার। সর্বক্ষণ চলেন মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী দিয়ে ব্যবসা করান। তাদের ব্যবহার করে খুচরা ব্যবসায়ীদের ধরে এনে টাকা আদায় করেন। এ যেন এক এলাহিকান্ড!
অভিযোগ জমতে জমতে এসআই মাসুদ রানার অভিযোগ যায় খোদ রাজশাহী পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক এর কাছে। এরপর সোর্স লাগিয়ে ওৎ পেতে ছিলেন তিনি। এমনি এক মূহুর্তে আজ এক মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দরদামে ব্যস্ত ছিলেন রানা। ব্যাস আর যায় কোথায়! হাতেনাতে ধরে পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক তাৎক্ষণিকভাবে এসআই মাসুদ রানাকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেন। মাসুদ রানা ক্লোজ করে নেয়া হয় পুলিশ লাইনে।
আরএমপির তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়িটি নগরীর অভিজাত এলাকা পদ্মা আবাসিকে অবস্থিত। গত দু’বছর ধরে ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন মাসুদ রানা। এতদিন ফাঁড়িটি ছিল মাদক ব্যবসায়ীদের হেফাজতখানা। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী নিয়েই কাটত মাসুদ রানার দিনরাত। অভিজাত এলাকা হওয়ায় পদ্মা আবাসিক মাদক কারবারের বড় মোকাম। এলাকায় মাদক বিক্রি ওপেন সিক্রেট। এসআই মাসুদ রানার নিয়োজিত মাদক সম্রাটরাই নিয়ন্ত্রণ করেন কারবার। দিনশেষে মাদকের টাকার ভাগ পেত রানা।
সরেজমিনে জানা যায়, আটক করা হেরোইন নিয়ে আরেক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রির দরদামও করছিলেন এস আই রানা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আরএমপি কমিশনার নিজেই হাজির হন ফাঁড়িতে। এ সময় তিনি দেখতে পান- আটক মাদক ব্যবসায়ী সোহেল ও তার পরিবারের লোকদের নিয়ে বসে দরদামে ব্যস্ত মাসুদ।
কমিশনার পুরো ঘটনা অবগত হয়ে এসআই মাসুদ রানাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। পরে মাদক ব্যবসায়ী সোহেলকে ২৫ গ্রাম হেরোইনসহ মামলা দায়ের করা হয়।কমিশনারের ফাঁড়ি অভিযানে সঙ্গে থাকা চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মুনীর বলেন, এসআই মাসুদ রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে থাকা অন্যান্য অভিযোগেরও তদন্ত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের অভিযোগে জানা গেছে, এসআই মাসুদ রানা পদ্মা আবাসিক ও আশপাশের এলাকাকে অপরাধের অভয়ারণ্য করে তোলেন। মাসুদ মাসোহারা আদায়ের সুবিধার্থে মাদক ব্যবসায়ীদের নাম-ঠিকানা ফোন নম্বর দিয়ে একটি রেজিস্টার সংরক্ষণ করতেন। এতে মাসোহারার পরিমাণ ও পরিশোধের তারিখও লিখে রাখতেন।শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা মাসোহারা পেতেন তিনি। কেউ তাকে ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসা করলে, খবর পেয়ে ধরে আনতেন ফাঁড়িতে। একবারে বকেয়াসহ পুরো মাসোহারা আদায় করে ছাড়তেন।