ডিমে ভেজাল-বগুড়ায় হ্যাচারীতে ধ্বস
বগুড়া থেকে বাবলু : ডিমে ভেজাল থাকায় বগুড়ায় হ্যাচারী শিল্প ধ্বস নামার অবস্থা হয়েছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, অনিষিক্ত ডিমের কারণে ওই ডিম থেকে কাঙ্খিত বাচ্চা না পেয়ে প্রতিনিয়তই লোকসানের মুখে পড়ছেন বগুড়ার পোল্ট্রি শিল্প মালিকরা। বাচ্চা ফোটাতে চাহিদামত উর্বর ডিম’ও পাচ্ছেন না তারা। ওদিকে রোগাক্রান্ত মুরগির বাচ্চা নিয়েও পড়ছেন বিপাকে। লোকসানের মুখে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন একের পর এক হ্যাচারি। এ অবস্থায় এ শিল্পে জড়িতরা লোকসান গুনছেন।
জানা গেছে, বগুড়া সদরের সাবগ্রামে অবস্থিত মেসার্স ভাই ভাই পোল্ট্রি ফার্ম অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোখলেছার রহমান মুক্তার গত এক মাসে তিনি জয়পুরহাটের মেসার্স নিশাত পোল্ট্রি অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক আব্দুল কাদের মোল্লার কাছ থেকে ডিম কেনেন।
প্রতিটি ১১ থেকে ১৩ টাকা মূল্যে ৫৪ হাজার ডিম বাচ্চা ফোটানোর জন্য কেনেন তিনি। এরমধ্যে ২৪ হাজার ডিম থেকে কোন বাচ্চা ফোটানো যায়নি। বাকী ৩০ হাজার ডিমের মধ্যে শতকরা ৬৫ থেকে ৬৮ ভাগ ডিমের বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়েছে। যেখানে ৮৫ থেকে ৮৮ ভাগ ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়া যায়। এতে তিনি কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এমন খবর পেয়ে বগুড়া সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেলিম হোসেন শেখ ও জেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সাইদুল ইসলাম ভাই ভাই পোল্ট্রি ফার্ম এন্ড হ্যাচারি লিমিটেডে বাচ্চা না ফোটা ডিম পরীক্ষা করেন।পরীক্ষার পর কর্মকর্তারা জানালেন, ওই ফার্মে যেসব ডিম রয়েছে তার ৭০ ভাগ ডিম অনিষিক্ত। যেগুলো থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব নয়। বাচ্চা ফোটানোর জন্য নিষিক্ত ডিম প্রায় একই সাইজের হয়ে থাকে। এ ফার্মে ডিমগুলো বিভিন্ন সাইজের।
ডিম সরবরাহকারি জয়পুরহাটের মেসার্স নিশাত পোল্ট্রি অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, ফার্মের মালিক ও তার প্রতিনিধি এসে ডিম বাছাই করে নিয়ে গেছেন। তাছাড়া ওই ফার্মের মালিক শুধু আমার ফার্ম থেকেই ডিম কেনে না। অন্য ফার্ম থেকেও ডিম কিনে থাকেন। তার ফার্মের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি এটা কীভাবে বোঝা যাবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এদিকে জয়পুরহাটের ডিম ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কারণে বগুড়ার পোল্ট্রি শিল্প হুমকীর মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে এসব ভেজাল ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে না পেরে জেলার বেশ কিছু হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গেছে।
বগুড়া জেলা পোল্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, জেলায় ৮৬ টি পোল্ট্রি হ্যাচারি রয়েছে যারা ইনকিউবিটরের মাধ্যমে ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা ফোটায়ে বিক্রি করেন। জেলার এসব হ্যাচারিতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১২ লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে। আর বগুড়া জেলায় বাচ্চা ফোটানোর ডিম উৎপাদন হয় প্রায় ৬ লাখ। অবশিষ্ট ডিমের চাহিদা পূরণ করা হয় অন্য জেলা থেকে ।
বগুড়া শহরতলীর বনানী এলাকার মেসার্স মডার্ণ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারি মালিক আতাউর রহমান জানান, তিনি জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের নুহুর কাছ থেকে ৬৪ হাজার ডিম ক্রয় করে মাত্র ১৫ হাজার ডিমের বাচ্চা ফোটাতে পেরেছিলেন। এ বিশাল অঙ্কের লোকসানের পর তিনি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।
একই কথা জানালেন, সাবগ্রামের শাওন সততা পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি মালিক আজিজ। তিনি জানান জামালগঞ্জের সেলিমের কাছ থেকে ১৪ হাজার ডিম কিনে শতকরা ৫০ ভাগ ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে পেরেছিলেন। এরপর থেকে তার ব্যবসায় ধস নামে।
বগুড়া জেলা পোল্ট্রি হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় অপুষ্টি ও রোগাক্রান্ত বাচ্চা এনে সরবরাহ করায় বগুড়ার হ্যাচারি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা পোল্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি নুরুল আমিন জাতিরকন্ঠকে বলেন জয়পুরহাটের কতিপয় ব্যবসায়ী না ফোটা ডিম প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করায় বগুড়ার হ্যাচারি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।