জমজ মাথা ওলা রাবেয়া রোকেয়া নতুন রুপে-
বিশেষ প্রতিনিধি / মেডিকেল রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় ২০২০ সালের ১ অগাস্ট সিএমএইচে রাবেয়া-রোকেয়া নামের জমজ মাথা ওলা শিশু দুটিকে আলাদা করতে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছিল। ওই সময় টানা ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে আলাদা করা হয় শিশু দুটিকে। এই অস্ত্রোপচারকে দেশের ইতিহাসে অনন্য বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত। আজ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে বিদায় জানানো হল ভাগ্যবান সেই জমজমাথা সেই দুই শিশুকে। সফল অস্ত্রপচার শেষে তাদের পৃথক করেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চিকিৎসকদের নিপুন চেষ্ঠায় অবশেষে বাড়ি ফিরল পাবনার মাথা জোড়া যমজ দুই শিশু রাবেয়া-রোকেয়া। রোববার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে বিদায় জানানো হয় এই দুই শিশুকে। তাদের বাসায় ফেরা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সত্যিই একটা আনন্দের দিন। আমার মনে আছে, রাবেয়া রোকেয়ার কথা যখন জানতে পারলাম, আমাকে জানালো আমার ছোট বোন রেহানা। সে পত্রিকায় এটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একা ম্যাসেজ দিল যে ‘তুমি দেখো, এরকম দুটো বাচ্চা। কি করা যায়। তাদের চিকিৎসার জন্য কিছু করা যায় কি না। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলাম এবং ডাক্তার সামন্ত লালের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। কারণ তাকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি এবং তার মধ্যে যে মানবিক গুণ আছে সেটাও আমি জানি। তাকে বলার সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করল। রাবেয়া-রোকেয়াকে ঢাকায় আনা, ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। সেই থেকে শুরু। আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত, এই যে দীর্ঘ চিকিৎসার পর রাবেয়া-রোকেয়ার সফল অস্ত্রপচার হয়েছে।
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামের শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় রাবেয়া-রোকেয়া। জন্মের সময় থেকে শিশু দুটির মাথা জোড়া ছিল। পরবর্তীতে তাদের নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরেন বাবা-মা। বিষয়টি নজরে আসলে শিশু দুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী।পরে সিঙ্গাপুর-হাঙ্গেরিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডজন খানেক অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়েছে শিশু দুটির। সবশেষ, ২০২০ সালের ১ অগাস্ট সিএমএইচে শিশু দুটিকে আলাদা করতে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার শুরু হয়। টানা ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে আলাদা হয় শিশু দুটি। এই অস্ত্রোপচারকে দেশের ইতিহাসে অনন্য বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চিকিৎসা যখন শুরু হলো তখন আমরা দেখেছি কীভাবে প্রত্যেকের ভেতর একটা আগ্রহ। সবচেয়ে ভালো লাগল, যে এখানে ডাক্তার-নার্স থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান বা অন্যান্য প্রত্যেকের একটা আলাদা সহানুভুতি ছিল। আমরা রাবেয়া রোকেয়াকে হাঙ্গেরি পাঠালাম। হাঙ্গেরির প্রাইম মিনিস্টারকে আমি ম্যাসেজ দিলাম, আর আমি যখন হাঙ্গেরিতে যাই তখনও কথা বলেছিলাম। তাকেও আমি ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনিও শতভাগ সমর্থন দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন তাদের সেখানে চিকিৎসা হয়।
তিনি বলেন, আপনারা এরই মধ্যে শুনেছেন যে ৪৮ টা অপারেশন হয়েছে যেটা চিন্তাও করা যায় না। মেডিক্যাল সায়েন্সে এ ধরনের ঘটনা খুব কম দেখা যায়। পরবর্তীতে ঠিক যখন সেপারেশনটা হবে, কোথায় হবে সেটা নিয়ে একটু কথা হচ্ছিল। বার্ন ইন্সটিটিউটে প্লাস্টিক সার্জারির আমাদের সুন্দর ব্যবস্থা আছে, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা সিএমএইচে করব।দেশেই কেন এ অপারেশন করা হলো তারও ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে করার উদ্দেশ্যটা হলো এখানে আমাদের যারা ডাক্তার বা এখানে যারা কাজ করেন তাদের একটা অভিজ্ঞতা হবে। সেভাবেই অপারেশন থিয়েটার, সবকিছু তৈরি করা হয়েছে। অত্যন্ত সাহস নিয়ে প্রত্যেকে যে কাজ করেছে বিশেষ করে হাঙ্গেরি থেকে যে ডাক্তার-নার্স তারা এখানে থেকে অপারেশন করেছে।
আর তাছাড়া ৩৬ ঘণ্টা একটানা অপারেশন করা একটা বিরাট ব্যাপার। এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সমস্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা পারদর্শী তাদের প্রত্যেককে একসঙ্গে করা হয়েছে, যাতে কোনো কিছুতেই কোনো ফাঁক না থাকে, সব কাজ যেন ঠিক মতো হয়।এ অস্ত্রোপচার দেশের জন্যও বিরাট অর্জন বলে মনে করছেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, যেখানে আমরা মুজিব বর্ষ পালন করছি, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, সেই সময় এত বড় সফল একটা অস্ত্রোপচার করে সফলতা অর্জন করা, এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জন।বক্তব্য শেষে শিশু দুটির সঙ্গে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি জানতে চান তারা কেমন আছে। জবাবে রাবেয়া জানায় তারা ভালো আছে।