• বুধবার , ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ কর্তার বাড়িতে কান্না থামছেনা


প্রকাশিত: ৯:৩৮ পিএম, ২৬ মার্চ ১৭ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫২ বার

সুনামগঞ্জ ও নোয়াখালী প্রতিনিধি  :  সিলেটে শনিবার সন্ধ্যায় দুই দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহত

 শিশুসন্তানকে নিয়ে নিহত মনিরুলের স্ত্রী পারভিন আক্তারের আহাজারি-
শিশুসন্তানকে নিয়ে নিহত মনিরুলের স্ত্রী পারভিন আক্তারের আহাজারি-

সিলেট মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সর দিপু ও জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্না থামছেনা নিহতের স্বজনদের।

প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। এঁদের মধ্যে আবু কয়সরের লাশ আজ সুনামগঞ্জে তাঁর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। তবে মনিরুলের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, লাশ এখন পথে রয়েছে। আজই লাশ পৌঁছাবে তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে।

আজ রোববার নিহত মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে স্বজন হারানোর আহাজারি দেখা যায়। কাঁদতে কাঁদতে কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁর স্ত্রী পারভিন আক্তার। তিনি বলছিলেন, ‘আমার এই মাছুম বাচ্চার কী হবে? বাবা বাবা বলে ডাকলে তাকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব? কারা আমার স্বামীকে এভাবে মেরে ফেলল। আমার স্বামীর তো কোনো অপরাধ ছিল না। কেন তাঁকে এভাবে জীবন দিতে হলো। আমি সরকারের কাছে স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের মরদেহ
বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের মরদেহ

নিহত মনিরুলের স্ত্রী পারভিনের কোলে অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখা যায় ১৭ মাস বয়সের একমাত্র শিশুপুত্র মোজাক্কেরুল ইসলাম ওরফে ফারাবীকেও। মনিরুলের মা ফিরোজা খাতুন ছেলের শোকে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে জানান স্বজনেরা। তিন বোনও ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। আত্মীয়স্বজনদের সান্ত্বনাও তাঁদের কাউকে শান্ত করতে পারছে না।

মাত্র দুই দিন আগেও যে বাড়িটি বিয়ে বাড়ির আনন্দে ভেসেছে। সেই বাড়ি এখন শোকের সাগরে ভাসছে।পারভিনের বড় ভাই আবদুল করিম বলেন, ছোট ভাই শামীমের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মনিরুল গ্রামের বাড়িতে আসেন। শুক্রবার রাতে সিলেট থেকে ফোন পেয়ে শনিবার সকাল ছয়টায় পুনরায় সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন।

বেলা তিনটার দিকে তিনি সিলেট গিয়ে পৌঁছান এবং কর্মস্থলে যোগ দেন। এরপর রাতে কর্তব্যরত অবস্থায় বোমা হামলায় নিহত হওয়ার খবর পান তাঁরা। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে মনিরুল ছিলেন ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। নোয়াখালী ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সোনাপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মনিরুল। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

২০০৩ সালে মনিরুল পুলিশের উপপরিদর্শক পদে যোগ দেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হন এবং জালালাবাদ থানায় যোগ দেন।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালে পার্শ্ববর্তী নূর পাটোয়ারীরহাট এলাকার হাজি নুরুজ্জামানের মেয়ে পারভিন আক্তারকে বিয়ে করেন মনিরুল ইসলাম। পারভিন আক্তার বলেন, ‘বিয়ের পর অনেক কষ্টের ফল আমার এই সন্তান। তাকে আমি কীভাবে বড় করব। কে আমাদের সাহায্য করবে।’

সিলেটে জঙ্গি আস্তানার পাশে বিস্ফোরণে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের মরদেহ আজ বিকেলে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়া এলাকায় তাঁর নিজ বাড়িতে আনা হয়।
প্রতিবেশী মাহবুবুর রহমান বলেন, মনিরুল পুলিশের পরিদর্শক পদে চাকরি করলেও অন্য অনেকের মতো তাঁর মধ্যে কোনো ধরনের অহংকারবোধ দেখা যেত না। ছোট ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেও বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে আড্ডা দেন। মনিরুলও ছিলেন তাঁর বাবা মরহুম নূর ইসলামের মতো সদালাপী। তাঁর বাবা মারা যান প্রায় দুই বছর আগে।

এদিকে আজ বিকেলেই চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সর দীপুর (৫০) মরদেহ বিকেলে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে আনা হয়েছে। সিলেট থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর মরদেহ সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া এলাকার বাসায় এসে পৌঁছায়। এ সময় সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর-রশীদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগেই শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ওই বাড়িতে ভিড় করেন। লাশ নিয়ে আসার পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ সুপার জানান, আজ এশার নামাজের পর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের জানাজা হবে। পরে শহরের তেঘরিয়া কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের বাবা মো. আছদ্দর আলী চৌধুরী আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।

তাঁর মা হাসনা বেগম চৌধুরী। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে কয়সর ছিলেন তৃতীয়। সুনামগঞ্জে কৃতী ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন কয়সর। পাড়ার মডার্ন ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন একসময়। স্ত্রী লোপা বেগমকে নিয়ে তিনি সিলেটেই থাকতেন। তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল বলেন, ‘অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও সৎ মানুষ ছিলেন কয়সর চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সুনামগঞ্জের মানুষ শোকাহত। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে তিনি এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন পরপারে।