• বৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

চাওয়া-পাওয়া বিলাসিতা নয়-বঙ্গমাতার আদর্শ ধারণ করুন


প্রকাশিত: ৭:০৯ পিএম, ৮ আগস্ট ২২ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : নারী সমাজকে বঙ্গমাতার জীবন আদর্শ ধারণ করে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শুধু চাওয়া-পাওয়া বিলাসিতা, এটাই জীবন না। একটা মানুষের জীবনে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আদর্শ নিয়ে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যেতে পারে। তাই দেশের নারী সমাজকে বলব, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণে সবাই কাজ করবেন।সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী পালন’ এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২২ প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রান্ত থেকে উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া, অনুষ্ঠানটি গোলাপগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত থেকে অসহায় দুঃস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করার জন্য সেলাই মিশন বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এই সেলাই মেশিন বিতরণ করে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।

এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যে পাঁচ নারী ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২২ প্রদান করা হয়। পদক প্রাপ্তরা হলেন, ‘রাজনীতির ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার মোছা. আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (যুদ্ধকালীন কমান্ডার)। প্রসঙ্গত, বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষে প্রতি-বছর আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ প্রদান করা হয়ে থাকে।

বড় মেয়ে হিসেবে বঙ্গমাতার জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কখনো সংসারিক ব্যাপারে আমার আব্বাকে কিছু চিন্তাই করতে দেননি। অর্থ্যাৎ যেহেতু আব্বা রাজনীতি করেন এবং রাজনীতির কাজটা তিনি জানতেন। আব্বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সেটা উপলব্ধি করেই তিনি সব সময় পাশে থেকে প্রেরণা দিয়ে গেছেন। কখনো একজন স্ত্রী হিসেবে কোনো দাবি তিনি করেননি। বরং আমার বাবার যা কিছু প্রয়োজন ছিল সেটা তিনিই দেখতেন।

আমার আব্বা হয়ত জানতেনও না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গমাতার সঙ্গে ধানমন্ডির একটি বাসায় বন্দী থাকার সঙ্গী ছিলেন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। সেদিন কাছ থেকে দেখা শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হল, আমার মাকেও গ্রেপ্তার করা হলো। সেখানেও কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। তখনো তার আত্মবিশ্বাস ছিল। এদেশ স্বাধীন হবেই। তিনি এই বিশ্বাসটা নিয়েই সব সময় ছিলেন এবং তার এই বিশ্বাসের জোরটাই বোধহয় আমার বাবার জন্য অনেক সহায়ক ছিল।আমার আব্বার খুব সৌভাগ্য ছিল যে, আমার মায়ের মতো একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আমার দাদা-দাদির কথাও বলব। বাবা-মা তার সংসারের বড় ছেলেকে লেখাপড়া শিখাচ্ছে সেই যুগে, আজও পাড়া গাঁ টুঙ্গিপাড়া থেকে। তাকে কোলকাতার হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছেন।

তারপর তাদের আকাঙ্ক্ষা থাকে বড় ছেলে টাকা পয়সা কামাই করে বাবা-মাকে দেবে, উল্টো আবার আব্বাকে আমার দাদা-দাদিও যেমন দিয়েছেন, আমার মাও তার টাকা পয়সা তাকেই দিতেন। আমার আব্বা যে এরকম একজন জীবনসঙ্গী বাবা-মা পেয়েছেন বলেই আমাদের সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা, দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা এটা সহজ হয়েছিল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং বঙ্গমাতার জন্য দোয়া কামনা করেন।তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে তিনি যেমন নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। নিজের জীবনটাও দিয়ে গেছেন। সবাই দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য, সেটাই আমি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমি এইটুকু বলব, আমাদের দেশের নারী সমাজ তারাও যেন এই আদর্শটা ধারণ করে। শুধু চাওয়া-পাওয়া বিলাসিতা এটাই জীবন না। একটা মানুষের জীবনে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। একটা আদর্শ নিয়ে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যেতে পারে। আমার মা তার এই মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমার বাবা যে মহৎ অর্জন করেছেন স্বাধীন বাংলাদেশ সেটা কিন্তু তিনি দিয়ে গেছেন।

দেশের নারী সমাজকে আমি এই আহ্বানই করব, এই আদর্শ নিয়ে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণে সবাই কাজ করবেন, সেটাই আমি চাই। মহিলা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল প্রত্যেকে জেলায় জেলায় নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, কারণ আমাদের বহু কর্মজীবী মহিলারা আছে তারা যেন ভালো থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা।