• বুধবার , ১৩ নভেম্বর ২০২৪

আমি বন্দী কারাগারে আছিগো মা বিপদে… জেলখানায় বিএনপি নেতাদের আর্তনাদ-


প্রকাশিত: ১:২৪ এএম, ৫ মে ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৩ বার

-Khaledaদিনা করিম.ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্তরীণ এই হাইপ্রোফাইল নেতারা এখন অনেকটাই বিষন্ন, বিমর্ষ ও রোগে বিপর্যস্ত। দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু হৃদরোগে মারা যাওয়ার ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন ওই নেতারা। পরিবার পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের এই উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন তারা। দল আর পরিবারও আটক থাকা এসব নেতাদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়েও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। রোগ-শোকের পাশাপাশি প্রচ- গরমে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন নেতারা। কারাগারে ঘনঘন লোডশেডিং হচ্ছে বলেও নেতাদের স্বজনদের সূত্র জানিয়েছে।
bnp lesder-www.jatirkhantha.com.bd
কারাগারে থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, মাহবুবুল হক নান্নু, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল মতিন প্রমুখ। ওয়ান ইলেভেন থেকে কারাগারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী নেতা গিয়াসউদ্দিন আল মামুনও। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীও কারাগারে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মাঠ পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মীর পাশাপাশি অনেক সিনিয়র নেতাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শুধু রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্যই এটা করা হয়েছে। অনেকেই কারাগারে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে আমাদের একজন নেতার মৃত্যুও হয়েছে। কারাগারে থাকা অন্য নেতা-কর্মীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন।

কাশিমপুর কারাগারে আছেন বিএনপির ক্লিন ইমেজের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনার কথা রয়েছে। ময়লার গাড়ি পোড়ানোসহ ৭৯টি মামলার আসামি হয়ে প্রায় তিন মাস ধরে কাশিমপুর কারাগার-২ এ অন্তরীণ তিনি। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়নি। ইতিমধ্যে ৩০ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুলের হৃৎপি-ের ধমনিতে দুটি ব্লক ধরা পড়েছে। যার ৮০ ভাগই অকেজো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মির্জা ফখরুলের সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম বলেন, তার স্বামী যেসব রোগে আক্রান্ত, তার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া উচিত। জামিনে মুক্তি পেলে আমরা তার উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য দেশের বাইরে পাঠাব।

সম্প্রতি মির্জা ফখরুলকে এক মামলায় জামিন দেওয়া হয়। তিন মামলায় কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না সে বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারিও করে। অবশ্য ওই তিন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায়নি পুলিশ। তবে মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সবগুলো মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খুব শিগগিরই তার জামিনে মুক্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, মির্জা ফখরুলের অবস্থা এতটাই জটিল, যে কোনো সময় ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে। তার হার্টেও তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আশঙ্কাজনকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ওজন ১৫ কেজি কমে গেছে। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। নানা রোগে শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। জামিনে মুক্তি পেলে স্যারকে বিদেশে পাঠানো হবে।’

জানা যায়, মির্জা ফখরুল উচ্চ রক্তচাপ, আইবিএস, মেরুদ-, দাঁতের সমস্যাসহ আরও বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি কাশিমপুর থেকে তাকে দুইবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালেও আনা হয়। কিন্তু সেখানেও তার সুচিকিৎসা মেলেনি। বরং কারাগার থেকে নেওয়া-আনায় শারীরিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে ছয়বার জেল খেটেছেন মির্জা ফখরুল।

এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অর্থপাচার মামলায় তাকে ২০১৪ সালের ১২ মার্চ গ্রেফতার করা হয়। তিনি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এ রয়েছেন। সম্প্রতি বাবাকে দেখে এসে ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন বলেন, বিভিন্ন কাগজপত্রের প্রমাণ দেখিয়ে বারবার জামিন চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। প্রচ- গরমেও শারীরিকভাবে তিনি ভালো নেই। কারাগারে চিকিৎসা সেবাও অপ্রতুল। আমরা তার সুচিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে উন্নত হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

নাশকতার দুই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কাশিমপুর পার্ট-১ এ বন্দী। সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় গ্রেফতার করে গয়েশ্বরকে গত ১১ জানুয়ারি আদালতে হাজির করা হয়। তাকে কয়েকদফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগেও আক্রান্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেশকিছুদিন ধরেই বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন কারাগার হয়ে তার বর্তমান ঠিকানা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। কয়েকদফা রিমান্ডে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে তাকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর টানা প্রায় ৩৬ দিন রিমান্ডে রাখা হয় রিজভীকে। তখন থেকেই তার শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি।

অবশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সময় স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজশাহী রেলস্টেশনের কাছে গুলিবিদ্ধ হন রিজভী। ওই সময় তার পেটে গুলি লাগে এবং তার দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন তিনি সেরে উঠলেও পেটে একটি সমস্যা থেকেই যায়। আজো সেই সমস্যা রয়ে গেছে।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সীতাকু-ে হরতালে গাড়ি পোড়ানোসহ নাশকতার মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-ের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তারও শারীরিক অবস্থা ভালো নেই বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এর মধ্যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে বাবরকে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে অন্তরীণ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলায় কারাগারে অন্তরীণ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু। তিনিও শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে জানা গেছে।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তারেক রহমানের বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, করফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা হয়। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।