• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে নব্য নেতারা জমির দালালি করে-ভয়ভীতি দেখান


প্রকাশিত: ২:৫১ এএম, ২৩ আগস্ট ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৮ বার

arms-2বিশেষ প্রতিবেদক: অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে নেতারা জমির দালালি করেন আর জমি কেনাবেচায় ভয়ভীতি দেখান বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন উত্তরা এলাকার বাসিন্দারা।তাঁরা জাতিরকন্ঠকে জানান, নেতারা বড় বড় ডেভলপার কোম্পানির পক্ষ নিয়ে এই অবৈধ কর্ম করেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরা এলাকায় রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০ মাসে প্রায় তিন হাজার অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এ আসনের (ঢাকা-১৮) বৈধ অস্ত্রধারীদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী এবং তাদের স্বজনরা। দলীয় পরিচয়ে এ আসনটির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়ে গেছেন। অনেক নেতাকর্মী একটি শর্ট ব্যারেল (এনপিবি পিস্তল/রিভলবার) এবং একটি লং ব্যারেল (শটগান বা রাইফেল) অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তির তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় অনেকে দুই বা এর অধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। ঢাকা মহানগরীর খিলক্ষেত, উত্তরা (পূর্ব), উত্তরা (পশ্চিম), তুরাগ থানা, উত্তর খান ও দক্ষিণ খান থানা নিয়ে গঠিত এ সংসদীয় আসনের ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড নেতাদেরও রয়েছে বৈধ অস্ত্র। এছাড়া পাতিরা, ডুমনি, তলনা, ডেলনা, কাঁচকুড়া, বরুয়া ও ভাতুরিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারাও অস্ত্রের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছেন। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে কোমরে বৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করছেন এসব নেতা। যদিও অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত এসব ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের বৈধ ব্যবসা বা সামাজিক কোন অবস্থান নেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় বাগিয়ে নিয়েছেন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতিরকন্ঠকে বলেন, একটি আসনে তিন হাজার লাইসেন্স কিভাবে দেয়া হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

armsঅনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রথম দফায় মহাজোট সরকার সরকার গঠনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম বুঝতে এক বছর সময় নেন। এরপর অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া শুরু হলে তার নির্বাচনী এলাকার নেতারা ‘লাইসেন্স’ পেতে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অনেকে অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী তিন লাখ টাকার ইনকাম ট্যাক্স এক অর্থবছরে পরিশোধ করেন।
লাইসেন্স পাওয়ার পর আবার আগের মতো ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ শুরু করেছেন। তবে আগে সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স নিয়েছেন ওই সংসদীয় আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহাজোট সরকারের দু’মেয়াদে ৬ বছর আট মাসে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এসব লাইসেন্সের বেশির ভাগই ক্ষুদ্রাস্ত্রের। অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার এ চিত্র ২০০১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও ছিল। ওই সময় লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল প্রায় আট হাজার অস্ত্রের। তখন বৈধ অস্ত্রধারীদের বড় অংশই ছিলেন বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং তাদের স্বজনরা। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আমলে অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকার নেতাদের লাইসেন্সের জন্য তদবির করেন। ওই সময় অনেক ক্ষেত্রে লাইসেন্সের তদবিরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে এমপিদের। অস্ত্রের লাইসেন্সের তদবিরের জন্য এখনও এমপিদের বসে থাকতে দেখা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫টি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। এগুলো আর পরবর্তীতে নবায়নও করা হচ্ছে না। এসব অস্ত্র দিয়েই চলছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

এর আগে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের ¶েত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার আসার পরপরই অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুতে কড়াকড়ির উদ্যোগ নেয়। তবে এখন অবস্থা যেন পাল্টে গেছে। ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যত শাখা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় ও লোকসমাগম থাকে রাজনৈতিক শাখা-৪-এ। এখান থেকেই অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার ফাইল প্রসেস হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী তা উপরে উঠে ও অনুমোদন হয়। এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে। এদিকে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে বর্তমানে বহাল থাকা নীতিমালায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রতি অর্থবছরে ইনকাম ট্যা· সিলিং তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক নতুন লাইসেন্স পাওয়ার ¶েত্রে একটানা পাঁচ বছর সমানতালে ইনকাম ট্যা· পরিশোধ করতে হবে। এর ব্যতয় হলে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হবে না। ব্যক্তির ¶েত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন আগের মতোই বাধ্যতামূলক থাকছে। তবে স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারক থেকে শুরু করে ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত কোন ব্যক্তির ¶েত্রে আয়কর দিতে হবে না। নতুন করে এসব কিছু যুক্ত করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের নীতিমালায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। ¯^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কয়টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তার প্রোফাইল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার হিসাব মিলেছে। যদিও কোন সরকারের আমলেই নীতিমালা মেনে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক তদবিরে যাকে-তাকে দেয়া হয়েছে লাইসেন্স। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাতে তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হলে এটার অপব্যবহার হওয়াটা অ¯^াভাবিক কোন ব্যাপার নয়। তাই নীতিমালা পুরোপুরি মেনে অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া উচিত।