• রোববার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪

হায়ার মামলায় হেরে হায়হায় অবস্থা-


প্রকাশিত: ৮:১১ পিএম, ৬ মার্চ ২০ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৭ বার

আন্তজার্তিক ডেস্ক রিপোর্টার : হায়ার মামলায় হেরে হায়হায় অবস্থা মাকতুমের। দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের বিরুদ্ধে অপহরণ, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া, মারধর ও প্রাণে মেরে ফেলার লাগাতার হুমকিসহ যেসব অভিযোগ তার সাবেক স্ত্রী এনেছিলেন সেগুলোকে সত্য বলে অভিহিত করেছে ব্রিটিশ হাই কোর্ট।বৃহস্পতিবার তথ্য অনুসন্ধানী সিরিজ রায়ে আদালত গত বছর দুই সন্তানকে নিয়ে দুবাই থেকে পালিয়ে আসা প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল-হুসেনের একগাদা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আট মাস আগে ব্রিটিশ হাই কোর্টে এ ‘হাই প্রোফাইল’ মামলার কার্যক্রম শুরু হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।হায়া সেসময় বন্ধুদের কাছে তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন। ধনকুবের শেখ মোহাম্মদ যুক্তরাজ্য আদালতের এ রায় যেন জনসমক্ষে প্রকাশ না হয়, সে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার আপিল প্রত্যাখ্যাত হয়।‘জনস্বার্থে হওয়া এ মামলা’ নিয়ে রায়ে আদালত বলে, “দুবাইয়ের শাসক যে আদালতের প্রতি খোলামেলা ও সৎ নন, তা প্রমাণিত হয়েছে।”

রায় প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে শেখ মোহাম্মদ বলেছেন, সরকারপ্রধান হিসেবে আমি আদালতের তথ্য অনুসন্ধানী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারিনি। যে কারণে প্রকাশিত রায় একপেশে হয়েছে।দুবাইয়ের শাসক মামলাটিকে ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ ব্যাপার বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন।গণমাধ্যমের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, তারা যেন আমার সন্তানদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে এবং তাদের যুক্তরাজ্যের জীবনে অনুপ্রবেশ না করে,বলেছেন তিনি।বিস্তৃত সাক্ষ্য প্রমাণ ও শুনানি শেষে বৃহস্পতিবারের রায়ে আদালত জানায়, তারা শেখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অন্য স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নিজের দুই মেয়েকে অপহরণ ও জোর করে দুবাই ফিরিয়ে নেয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

এদের মধ্যে শেখা শামসা ২০০০ সালে ব্রিটেনের সারি কাউন্টির পারিবারিক বাসভবন থেকে পালিয়ে যান। পরে শেখের লোকেরা তাকে ক্যামব্রিজশায়ার থেকে অপহরণ করে দুবাইতে নিয়ে যায়। তার বন্দিদশার কথা জানতে পেরে ব্রিটেনের পুলিশ দুবাইতে তদন্ত করতে চাইলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাতে অনুমতি দেয়নি।অপর মেয়ে শেখ লতিফা ২০০২ সালে বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। ধরা পড়ে যাওয়ার পর তিন বছর তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফা পালানোর চেষ্টা করেও ভারতীয় উপকূলের কাছে সমুদ্র থেকে বাবার লোকজনের হাতে ধরা পড়েন লতিফা।

বাবার নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে লতিফা যে ভিডিও বার্তা ছেড়েছিলেন, আদালত সেটিকে বিশ্বাসযোগ্য বলেও রায় দিয়েছে।প্রিন্সেস হায়া জর্দানের সাবেক রাজা হুসেনের মেয়ে। ৪৫ বছর বয়সী এই নারী একসময় অলিম্পিকে ঘোড়দৌড়ে অংশও নিয়েছিলেন।২০০৪ সালে তিনি ৭০ বছর বয়সী শেখ মোহাম্মদের ৬ষ্ঠ স্ত্রী হন। এ দম্পতির ৭ ও ১১ বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।হায়া জানান, শুরুর দিকে তিনি লতিফা ও শামসাকে নিয়ে শেখ মোহাম্মদের ভাষ্যই বিশ্বাস করেছিলেন। দুবাইয়ের শাসক তাকে বলেছিলেন, মেয়েদের উদ্ধার করা হয়েছে এবং তারা এখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিরাপদেই আছে।

২০১৯ সালের শুরুতে হায়া এ ভাষ্য নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন এবং সতীনের দুই মেয়েকে নিয়ে তার উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। ওই একই সময়ে তিনি নিজের ব্রিটিশ দেহরক্ষীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন।হায়ার অভিযোগ, মেয়েদের নিয়ে উদ্বেগের কথা জানানোর পর থেকেই শেখ মোহাম্মদের লোকজন তাকে হুমকি দিতে শুরু করেন। দুই দফায় তার বালিশে ‘সেফটি ক্যাচ’ খোলা পিস্তল পাওয়া যায়। বাড়ির বাইরের অংশে অবতরণ করা একটি হেলিকপ্টার থেকে তাকে দুর্গম মরুভূমিতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

ওই বছরের এপ্রিলে হায়া তার দুই সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। শেখ মোহাম্মদ এরপর তাকে ও তার দুই সন্তানকে অপহরণ ও জোর করে দুবাই নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিলে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।২০১৯ সালের মে মাসে শেখ মোহাম্মদ স্ত্রী হায়াকে ‘তুমি ও সন্তানরা যুক্তরাজ্যে কখনোই নিরাপদ থাকবে না’ এমন হুমকিও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।

একই সময়ে দুবাইয়ের শাসক নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক নিবন্ধ ছাপতে গণমাধ্যমের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করেন; তার প্রভাবে প্রকাশিত ওই নিবন্ধগুলোর বেশিরভাগই ছিল ‘পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’, জানিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার দেওয়া ব্রিটিশ আদালতের এ রায়কে দুবাইয়ের ধনকুবের শাসকের জন্য ‘তুমুল বিব্রতকর’ বলে অভিহিত করেছে বিবিসি।শেখ মোহাম্মদের আইনজীবীরা রায় ‘গোপন’ রাখার যে চেষ্টা করেছিল, তাও অনেককে স্তম্ভিত করেছে বলে জানিয়েছে তারা।

ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা শেখ মোহাম্মদকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম উদার শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রের পাশাপাশি দুবাইকে এশিয়ার অন্যতম ব্যবসায়িক হাব বানানোর কৃতিত্বও তাকে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতের বৃহস্পতিবারের রায়কে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গোষ্ঠী স্বাগত জানিয়েছে।