হাসিনার জাদুকরী উন্নয়ন বিফলে যাচ্ছে যাদের কারণে-
প্রিয়া রহমান : কথায় বলে ব্যবহারেই বংশের পরিচয়-কথাটা রাজনীতিতে কতটুকু খাটে? তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। মানুষের মধ্যে অনেকেই আছেন এমনভাবে কথা বলেন যে অপর মানুষের মন গলে যায়। কিন্তু আজকাল মানুষের ব্যবহারে বংশের পরিচয় মেলে না নানা কারণে। এর অনেক যৌতিক কারণও আছে। দেখা গেছে ভাল বংশের লোকরাও খারাপ আচরণ করছে! সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে কথার জাদু জানলে অনেক অসাধ্য কাজও সহজে হয়ে যায়।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশের জাদুকরী উন্নয়ন কাজ করছেন তাতে দেশবাসী তাঁর ওপর সন্তুষ্ঠ থাকলেও ভোটের বেলায় তার লোকজনের কারণে ফল মিলছে না। এর রহস্য কি? তা নিয়ে রাজনীতিকরা নানা কথা বলছেন। কথা উঠছে দলের নেতাকর্মীদের আচরণ নিয়েও।এর বাইরে রয়েছে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার এবং এর জের ধরে মানুষকে ‘জনগন’ই সকল ক্ষমতার অধিকারী এটা না ভাবা’।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের যে উন্নয়ন করেছেন তা শুধু দেশেরই নয়, বিদেশেরও কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু এই উন্নয়ন অনেক ক্ষেত্রে ম্লান হয়ে যাচ্ছে দলের নেতা-কর্মীদের কারও কারও খারাপ আচরণের কারণে।সভা-সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন, ভালো ব্যবহার না করলে মানুষ ভোটের সময় জবাব দেবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে কুমিল্লার নির্বাচনে মানুষ সেই জবাব দিয়েছে।এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভোটের ফলও আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গেছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব্ব-কোন্দলের চেয়েও মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের কারও কারও দুর্ব্যবহারের ফলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ভোটে। ব্যক্তির খারাপ আচরণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঔদ্ধত্যের মাশুল দিতে হচ্ছে সরকার ও দলকে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, লংকায় যে য়ায় সেই হয় রাবণ-এর থেকে বের হতে পারছেন না রাজনীতিকরা।দেখা গেছে, কেবল বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে যারাই ক্ষমতায় ছিলেন তাদের নেতা-কর্মীরাই কম-বেশি একই ধরণের আচরণ করেছেন। পরবর্তী সময়ে ভোটের প্রতিযোগিতায় সেসব দলকেও খেসারত দিতে হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিষয়টি ভাবনায় ফেলেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত আট বছরের শাসনামলে উন্নয়নের বিচারে বাংলাদেশ নতুন করে জেগে উঠেছে। উন্নয়নের ঢেউ কম-বেশি দেশের প্রতিটি গ্রামে লেগেছে। টিআর, কাবিখা, জিআর প্রকল্পে বরাদ্দ অতীতের যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, পুল-কালভার্টসহ গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র দলমত নির্বিশেষে সবার সামনে স্পষ্ট।
বিদ্যুত্ উত্পাদনসহ প্রতিটি খাতেই নতুন গতি পেয়েছে সামগ্রিক উন্নয়ন। বিভিন্ন খাতে সরকার শহর থেকে শুরু করে তৃণমূলে বহুমাত্রিক বরাদ্দ পাঠাচ্ছে। উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে সরকার নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে। এত উন্নয়নের পরেও কেন কেন হারবে আওয়ামী লীগ কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ? কেন আইনজীবীদের শীর্ষ দুটি সংগঠনের ফল দলের বিপক্ষে গেল ?
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, শুধু সাধারণ মানুষের সঙ্গেই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দলের কেউ কেউ দুর্ব্যবহার করছেন। শর্ত পূরণ না করেও দরপত্র ভাগিয়ে নিতে কেউ কেউ সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকিও দেন। দরপত্র পাওয়ার পর ঠিকমত কাজ না করে বিল পেতেও অনেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে রূঢ আচরণ করছেন। আর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ স্থানীয় মুরব্বি ও গণমান্য ব্যক্তিদের অশ্রদ্ধা করছেন। তাদের এই ধরনের আচরণের প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোটে।
সাধারণ মানুষ বা ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে ব্যক্তির অপরাধের প্রতিশোধ নিচ্ছেন সরকার ও দলের বিরুদ্ধে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে দলের নেতা-কর্মীদের অনেকের বাড়াবাড়ি, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের প্রতিফলনও ঘটছে ভোটের ব্যালটে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. ক. (অব.) ফারুক খান বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের কারও কারও খারাপ ব্যবহারের কারণে ভোটে আমাদেরকে খেসারত দিতে হচ্ছে। বিষয়টি দলকেও চিন্তায় ফেলেছে। তিনি এ-ও বললেন, কুমিল্লা এবং আইনজীবীদের নির্বাচনে আমাদের পরাজয়ের আরেকটি কারণ অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা অনৈক্য। কিন্তু কুমিল্লা থেকে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান ইসির অধীনে দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে।
তৃণমূলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারের উন্নয়ন তৃণমূলে ভোটারদের মন গলাতে পারছে না। দলীয় নেতা-কর্মীদের মন্দ আচরণের কারণে উন্নয়নের বাতাস বইছে না ভোটের মাঠে। স্থানীয়ভাবে নেতায়-নেতায় রাজনৈতিক আধিপত্য, স্বার্থগত দ্বন্দ্ব ও পেশিশক্তির প্রদর্শন, মানুষের উপর দমন-নিপীড়ন, মামলা-হামলার পাশাপাশি মারামারি-হানাহানির ঘটনায় সাধারণ মানুষ এক ধরনের আতঙ্কে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘শুধু সাধারণ নেতা-কর্মী নন, আমাদের কোনো কোনো সংসদ সদস্যও নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষ থেকে দূরে সরে গেছেন। বিষয়গুলো ইতোমধ্যে আমরা দলীয় সভায় মূল্যায়ন করেছি।