• মঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৪

সার্জেন্টকে পিটিয়ে পার মদ্যপ মাহির ছেলে-


প্রকাশিত: ৮:৪০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ১৯ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩৯ বার

স্টাফ রিপোর্টার : সহকারী সার্জেন্টকে পেটানো মদ্যপ মাহির ছেলের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা না নেয়ায় তোলপাড় চলছে।বনানী থানার ওসি দাবি করেছেন, ঘটনার শিকার সেই পুলিশ সার্জেন্ট কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। ফলে পার পেয়ে গেছেন  বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরীর ছেলে আরাজ বি চৌধুরী। জানা গেছে, ছেলের কান্ডে শেষমেষ মাফ চাইতে হয় বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব কে। কিন্তু এ ঘটনায় মামলা না হওয়ায় অনেকে বলেছেন, আইন হাতে তুলে নেয়ার পরও পুলিশ মামলা না নেয়ায় তারাও আইন অগ্রাহ্য করেছে। এর ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু এর খেসারত জাতি দেবে কেন?

জানা গেছে, রাজধানীর বনানীতে ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টকে মারধরের অভিযোগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর ছেলেকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে বনানী থানা পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে আটকের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।বুধবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বনানী কবরস্থানের দিক থেকে এয়ারপোর্ট রোডে বের হওয়ার সময় একটি সিএনজিকে খয়েরী রং-এর গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ২৮-০৮৩৬) ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দায়িত্ব রত পুলিশের সহকারী সার্জেন্ট মো. আলমগীর এর পায়ে আঘাত লাগে। এতে তিনি সামান্য আহত হন।
এসময় সেখানে ছিলেন দায়িত্বরত কনস্টেবল তোফায়েল ও ফজলুর।

ঘটনা সম্পর্কে আলমগীর জাতিরকন্ঠ কে বলেন, বনানী কবরস্থান সংলগ্ন সড়কে আমি বেপরোয়া গতিতে চালানো গাড়ির ভিডিও করছিলাম। তখনই ওই যুবকের (আরাজ) গাড়িটি খুব দ্রুত প্রবেশ করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।ঘটনার পর তাকে (আরাজ) গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আরাজ। তার সঙ্গে আরও এক যুবক ছিলেন। তারা গাড়ি থেকে নেমে আমাকে এবং উপস্থিত পুলিশের দুই কনস্টেবল তোফায়েল ও ফজলুকে মারধর করেন। পরিস্থিতি বুঝে নিকট দূরত্বে ডিউটিরত সিনিয়র সার্জেন্ট নাজমুল স্যারকে কল করে বিষয়টি জানালে তিনি ছুটে আসেন। এর মধ্যেই হাতাহাতি চলে।

আলমগীর বলেন, দুই যুবককেই নেশাগ্রস্ত মনে হওয়ায় আমি তাদের বলি- আপনি তো নেশাগ্রস্ত। এই কথা বলাতেই আরাজ বি চৌধুরী আমার গায়ে ফের হাত তোলেন এবং শার্টের কলার ধরে টানাটানি করেন। এক পর্যায়ে আমার শার্টের বোতাম ছিঁড়ে যায়।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করতে গেলে আরাজ চিৎকার করে বলতে থাকেন, স্টপ ভিডিও, স্টপ ভিডিও। তুমি জানো আমি কে? হু ইজ মাই ড্যাড? আমি মাহী বি চৌধুরীর ছেলে।সিনিয়র সার্জেন্ট নাজমুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আরাজ ও তার সঙ্গীকে পুলিশ বক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ বক্সের ভেতরে গিয়েও বেপরোয়া আচরণ করতে থাকেন আরাজ।আরাজ চিৎকার করে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, আমাকে টাচ করবা না। আমার বাবা আসছে। আমার বাবার সঙ্গে কথা হচ্ছে।

পরে অবস্থা বেগতিক দেখে ট্রাফিক পুলিশের অন্য সদস্যরা বনানী থানার কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলে থানা থেকে একটি পুলিশের ভ্যান এসে মাহির ছেলে ও তার সাথে থাকা বন্ধুকে আটক করে বনানী থানায় নিয়ে যায়।বনানী থানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, থানায় দেখা যায় হাসি মুখে মাতাল অবস্থায় পুলিশের সামনে বসে আছে মাহির ছেলে। একটু পর পর ইংলিশে কথা বলতে বলতে চিৎকার দিয়ে উঠছে। বার বার কয়েকজন পুলিশ সদস্য শান্ত করার চেষ্টা করলেও তাদের কথা না শুনে তাদের উপর হামলা করতে এগিয়ে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে থানার ডিউটি অফিসারের সামনেই গর গর করে বমি করে দেয়।

সূত্র জানায়, মাহি থানার ওসিকে বুঝানোর চেষ্টা করেন তার ছেলে ভুল করে ফেলেছে এ জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থী। এর পরে থানার ওসি আলমগীরকে ডেকে নেন। এর পর মাহি তার কাছে কাঁদো কাঁদো চোখে মাফ চান। সার্জেন্ট মৌখিকভাবে মাফ করে দিতে চাইলে ওসি বলেন, মাফ করতে চাইলে লিখিত দিতে হবে এর পরে সার্জেন্ট লিখিতভাবে বলেন যে তিনি মাহি বি চৌধুরীর ছেলেকে মাফ করে দিয়েছেন।এরপর ওসি নিজ কক্ষে মাহির ছেলেকে ডেকে নিয়ে সার্জেন্টের কাছে মাফ চাইতে বললে মাহির ছেলে মাফ না চেয়ে ইংলিশে গালাগাল করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে আসেন।

বের হয়েই আবারো ওসির ঘরের বারান্দায় বমি করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনা দেখে মাহি কাঁদতে কাঁদতে বলেন ‌বাবা তোমাকে কে কি খাইয়েছে আমাকে বল, তোমার পেটে কি হয়ে হয়েছে। তোমার কি কিছু হয়েছে। মাহি আরো বলতে থাকেন, আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।এরপর মাহি তার ছেলে আর ছেলের বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে বলে দ্রুত থানা থেকে বের হয়ে যায়।পরে মাহি বি চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত আছি এসব নিয়ে কথা বলার সময় এখন না বলেই ফোন কেটে দেন।পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার ছেলেকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বনানী থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাহী বি চৌধুরীর ছেলে আর তার বন্ধু অতিমাত্রায় মদ পান করেছিলেন। থানায় থাকা অবস্থাতেও তাদের মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছিল। এই অবস্থাতে কোনভাবেই গাড়ি চালানো সম্ভব না সেই সার্জেন্টের কপাল ভাল যে একটুর জন্য বেচে গেছে।বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরে আযম মিয়া বলেন, যে সার্জেন্ট ভুক্তভোগী তিনি কোন অভিযোগ না করায় ছেলেটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হয়নি। আটক হওয়া ছেলেটির গাড়ি চালানোর কোন লাইসেন্স ছিল কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারে নাই ওসি।

ওদিকে এই ঘটনা শুনার পর বনানী থানায় ছুটে আসেন রাজনীতিবিদ মাহি বি চৌধুরীর খালাতো বোন শমী কায়সারের স্বামী ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটা অনেক দুঃখজনক। আমরাও বিদেশে পড়ালেখা করেছি কিন্তু বারবার দেশে ফিরে এসেছি এবং দেশের মত করে থাকার চেষ্টা করেছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই অনেককেই দেখছি তাদের সব ভাল শুধু দেশটা ছাড়া।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহির ছেলে লন্ডনের পড়ালেখা করে। সে দেশে খুব কম থাকে। শীতের ছুটিতে দেশে বেড়াতে এসেছিল। সে বনানীর একটি অভিজাত হোটেল থেকে মদ পান করে জোরে গাড়ি চালানোর জন্য এয়ারপোর্ট রোডের দিকে যাচ্ছিল।