• মঙ্গলবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৪

লালমিয়া ফেরত দিল ২০ লাখ..


প্রকাশিত: ১২:৫৩ এএম, ১৬ নভেম্বর ১৯ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৩ বার

 

বগুড়া প্রতিনিধি : একেই বলে সততা লালমিয়া ফেরত দিল ২০ লাখ.. হাতের কাছে ২০ লাখ টাকা পেয়েও তা আত্মসাত করেননি রিকশার চালক লাল মিয়া (৫৫)। বগুড়া শহরে রিকশায় ফেলে যাওয়া প্রায় ২০ লাখ টাকাভর্তি একটি ব্যাগ মালিককে ফেরত দিয়েছেন ওই রিকশার চালক লাল মিয়া (৫৫)। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে শহরের সাতমাথা একালায় এ ঘটনা ঘটে।লালা মিয়া শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়ার মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। সততার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাকে একটি রিকশা ও মোবাইল ফোন উপহার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন টাকার মালিক ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ।

বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজামান জাতিরকন্ঠ কে জানান, আগামী রোববার লাল মিয়াকে একটি নতুন রিকশা ও একটি মোবাইল ফোন উপহার দেওয়া হবে। টাকাগুলো ফেরত দিয়ে রিকশাচালক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।সার ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবঘার দ্বীননাথ প্রসাদের ছেলে। একই এলাকায় তার প্রসাদ অ্যান্ড সন্স নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সন্তানের লেখাপড়ার জন্য তিনি বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে তিনি বাসা থেকে লাল মিয়ার (৫৫) রিকশায় ওঠেন। তার কাছে একটি ব্যাগে প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং অন্য দুটিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। তিনি রিকশা থেকে শহরের সাতমাথায় নেমে সেখান থেকে বাসে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর টের পান তার টাকার ব্যাগ রিকশায় ফেলে এসেছেন। তখন তিনি বাস থেকে নেমে বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে জানান। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান বিষটি খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন।

তদন্তে নেমে এসআই জহুরুল শহরে গোগাইল রোড এলাকার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এরপর অন্য রিকশাচালক ও ব্যবসায়ীকে দিয়ে রিকশাচালক লাল মিয়াকে শনাক্ত করেন এবং তাকে খুঁজতে থাকেন।এদিকে লাল মিয়া সিটে থাকা ব্যাগ দেখে তা খোলেন এবং ভেতরে টাকা দেখতে পান। তখন তিনি ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদকে খোঁজাখুজি করেন। না পেয়ে তিনি শহরের মালগ্রাম এলাকার ভাড়া বাসায় গিয়ে টাকার ব্যাগ রাখেন। এরপর শহরের খান্দার এলাকায় গিয়ে টাকা হারানোর মাইকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করেন। এক পর্যায়ে এসআই জহুরুল খান্দার গেলে রিকশাচালক লাল মিয়াকে দেখতে পান। তখন লাল মিয়া ব্যাগ ও টাকার বর্ণনা শোনার পর সেটি তার বাড়িতে থাকার কথা জানান।

পরে পুলিশ টাকার ব্যাগসহ রিকশাচালক লাল মিয়াকে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ লাল মিয়াকে শনাক্ত করেন। তখন এসপি আলী আশরাফ ভুঞা টাকাগুলো ওই ব্যবসায়ীকে দিয়ে দেন।ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ জানান, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিনি লাল মিয়াকে রোববার একটি নতুন রিকশা ও একটি মোবাইল ফোন কিনে দেবেন। তিনি সদর থানার ওসিকে এ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

রিকশাচালক লাল মিয়া জানান, তিনি গরীব হলেও পরের অর্থ-সম্পদের প্রতি লোভ নেই। ভাড়ার রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই ছেলে তার সঙ্গে থাকেন। রিকশায় ফেলে যাওয়া টাকাগুলো তিনি মালিককে ফেরত দিতে পেরে দায়মুক্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, ওই ব্যবসায়ী তাকে নতুন রিকশা কিনে দিতে চাওয়ায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন। এখন তাকে আর পরের ভাড়া রিকশা চালাতে হবে না। সংসারের অভাব দূর হবে।