• শুক্রবার , ১৭ মে ২০২৪

‘লন্ডন ট্রাডিশন’ বাংলাদেশী রুপকার মামুনের সাফল্য


প্রকাশিত: ৩:০৩ এএম, ৫ অক্টোবর ১৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭৪ বার

 

 Mamun-Chowdhury-www.jatirkhantha.com.bd London Tradition - Case Study শফিক আজিজি.ঢাকা:  লন্ডনের দামি তৈরী পোষাকের জগতে একটি অনন্য নাম ‘লন্ডন ট্রাডিশন’ ।এই তৈরী পোষাকের অন্যতম প্রধান রুপকার বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মামুন চৌধুরী। ‘লন্ডন ট্রাডিশন’ এ মামুন দেখিয়েছেন কিভাবে বাংলাদেশীরা বিদেশের মাটিতে নিজেদের সাফল্য দেখাচ্ছে।মামুনের সেই সাফল্য উঠে এসেছে বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায়।

বাংলাদেশের মামুন চৌধুরী লন্ডনে গিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে। চোখে স্বপ্ন থাকলেও হাতে পয়সা-কড়ি ছিল না বললেই চলে। ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক কিনে নিয়ে লন্ডনে বিক্রি করে পোশাক ব্যবসায় হাতেখড়ি মামুনের। দুই দশকের যাত্রায় লন্ডনের ইস্ট এন্ডের এই পোশাক প্রস্তুতকারক এখন ব্রিটেনের একজন সফল উদ্যোক্তা। মামুন কীভাবে ব্রিটিশদের জন্যই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠলেন সে কাহিনিই তুলে ধরেছে দ্য গার্ডিয়ান।

‘জর্জ অসবোর্ন যখন ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টর্সে বলছিলেন যে ছোট কোম্পানিগুলো ইউরোপের বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানি করা নিয়ে “বেশি ভীত থাকে”, তখন হয়তো ব্রিটিশ প্রস্তুতকারকদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে মামুন চৌধুরীর ডুফেল কোটের কাহিনি বলতে পারতেন তিনি।’ মামুন এবং তাঁর ডুফেল কোট অভিযানের কাহিনি নিয়ে প্রতিবেদনটা এভাবেই শুরু করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান।

লন্ডনের ইস্ট এন্ডের একটা ছোট কারখানাতে ডুফেল কোট বানিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করছেন মামুন। অন্য কিছু না বানিয়ে মামুন কেন ব্রিটিশ স্টাইলের ডুফেল কোট বানাতে শুরু করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দ্য গার্ডিয়ানকে মামুন বলেন, ‘আমার ধরনটাই এমন। আমি সব সময় ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করি।’ এই উদ্যোক্তা আরও জানান, ‘অন্য কেউই তখন ডুফেল কোট বানাচ্ছিল না।’

ভারী উলের তৈরি এই কোটের নামটা বেলজিয়ামের ডুফেল শহরের নাম থেকে এলেও দুনিয়াজুড়ে এই কোট ব্রিটিশ স্টাইলের শীত পোশাক হিসেবেই পরিচিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচতে এই ভারী উলের কোটই ছিল নাবিক-সৈনিকদের জনপ্রিয় উর্দি। কথিত আছে, ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল বার্নার্ড মন্টেগোমারি সে সময় সাধারণ সেনাদের অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য নিজেও এই উলের তৈরি মোটা কোট পরতেন।

অবশ্য হাল ফ্যাশনের ডুফেল কোট নাবিক-সেনাদের সেকালের উর্দির চেয়ে বহু যোজন দূরের বস্তু। লন্ডনের ঐdufel-----------তিহ্যবাহী এই কোট এখন দুনিয়ার নানা ফ্যাশন হাউসের হট-সেলার। ঐতিহ্যবাহী উটরঙা থেকে শুরু করে রক্তিম বেগুনি ও খাঁটি রক্ত লাল রং ছাড়াও আধুনিক ডুফেল কোট বানানো হয় বহু প্যাটার্নে। জাপানের মতো দেশগুলোতে কেউ ইংল্যান্ড বা ব্রিটেনের স্মারক একটা কিছু কিনতে চাইলে এমন ডুফেল কোটই হয় অনেকের পয়লা পছন্দের বস্তু।

মামুন ঠিক এ ভাবনা থেকেই তাঁর ডুফেল কোট অভিযান শুরু করেন। মামুনের ভাষায় এটি ‘ব্রিটিশত্ব বিক্রি’ করা। বাইরের দুনিয়ার ব্রিটিশ স্টাইলের শীত পোশাকের বাজারে নিজের পণ্যের জায়গা তৈরি করে নেওয়াই ছিল মামুনের লক্ষ্য। মামুন বলেন, ‘আমি সাফল্যের জন্য মরিয়া ছিলাম। ভাবতাম যদি মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মিখায়েল মার্কস পারেন তাহলে আমি কেন পারব না?’

কিন্তু ভীষণ প্রতিযোগিতা ছিল। বিশেষত মামুন যখন নিজের পোশাক কারখানা স্থাপন করতে যান তত দিনে লন্ডনের ইস্ট এন্ড থেকে অনেক প্রস্তুতকারকরাই বহু দূরে পাড়ি জমিয়েছেন। মামুন দামি ডুফেল কোট বানানোটাকেই কৌশল হিসেবে নিলেন। মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মতো বড় টেক্সটাইল কোম্পানিতে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রব হিউসনকে সঙ্গে নিয়ে ২০০২ সালে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ‘লন্ডন ট্র্যাডিশন’ নামে তাঁর ব্যবসা চালু করেন মামুন। শ খানেক অভিজ্ঞ কর্মী নিয়ে পরিচালিত কারখানায় সপ্তাহে গড়ে এক হাজার ডুফেল কোট তৈরি হয়। তাঁদের তৈরি ডুফেল কোটের সবচেয়ে কম মূল্যে ৩০০ পাউন্ড, ওপরের দিকে এক হাজার ৫০০ পাউন্ডে বিক্রি হয়।

বাংলাদেশি মামুন চৌধুরীর লন্ডন ট্র্যাডিশন এখন বছরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোট রপ্তানি করে। তাঁদের তৈরি কোটের ৯০ ভাগই রপ্তানি হয়ে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে লন্ডন ট্র্যাডিশনের বিক্রি বেড়েছে আটশো ৬৫ শতাংশ। এ বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবদান রাখায় ব্রিটেনের রানির বিশেষ পদকে ভূষিত হয়েছে মামুনের কোম্পানি লন্ডন ট্র্যাডিশন। এছাড়া, লন্ডনের সাবেক ও বর্তমান মেয়র কেন লিভিংস্টোন ও বরিস জনসন থেকে শুরু করে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবোর্নেরও প্রশংসা পেয়েছেন বাংলাদেশের মামুন চৌধুরীর এই ব্যবসায়িক উদ্যোগ।