• মঙ্গলবার , ২১ মে ২০২৪

মীর কাসেম আলীর ঔদ্ধত্য-মাননীয় বিচারকদের গালিগালাজ


প্রকাশিত: ১২:৩২ এএম, ৩ নভেম্বর ১৪ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬২ বার

 

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রোববার জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় দেন।

যুদ্ধাপরাধে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের তিন দিন পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির হরতালের মধ্যেই এ রায় এলো।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার এই সদস্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে।

এর মধ্যে একটি অভিযোগে তিন বিচারক সর্বসম্মতভাবে এবং অন্যটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।

এছাড়া অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আটটি অভিযোগে মীর কাসেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ৩৫১ পৃষ্ঠার রায়ের ১১ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার পড়ার সময় হালকা আকাশী শার্ট ও ঘিয়ে কোট পরিহিত মীর কাসেমকে শুরুতে কাঠগড়ায় বসে দৃশ্যত ফুরফুরে মেজাজে হাঁটুর ওপর আঙুল নাচাতে দেখা যায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

ফাঁসির সাজা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি বলে ওঠেন, “শয়তান.. শয়তান..।

“মিথ্যা ঘটনা… মিথ্যা সাক্ষ্য… কালো আইন… ফরমায়েশি রায়। সত্যের বিজয় হবে শীঘ্রই… শীঘ্রই।”

kkkkkkkkkddddddddddddddddddকেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। অতীত কৃতকর্মের শাস্তি সবাইকে পেতেই হবে।এখানে আদালতের রায় বিস্ময়কর নয়, বিস্ময়কর হলো এ রকম একজন প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীর আদালতকক্ষে দাঁড়িয়ে বিচারক ও আইনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারা। এ দুঃসাহস তিনি কোথা থেকে পেলেন?

 

 

 

 

 

 

 

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডটি মোটেই অস্বাভাবিক নয়। একাত্তরে তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে নৃশংসতা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল আলবদর, রাজাকার ও আলশামস বাহিনী।

যুদ্ধাপরাধে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের তিন দিন পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটির টানা হরতালের হুমকির মধ্যেই এ রায় এল।

কিন্তু অাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণার সময় মীর কাসেম আলী যেসব মন্তব্য করেছেন, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তাঁর আচরণ ছিল উচ্ছৃঙ্খল ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার সদস্য মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে ও দুটি আংশিক প্রমাণিত হয়েছে।

আংশিক প্রমাণিত দুটি অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ আটজনকে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে তিন বিচারক সর্বসম্মত প্রাণদণ্ডের রায় দিলেও ১২ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির সিদ্ধান্ত হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ের মীর কাসেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায় পড়ার পর মাননীয় বিচারকদের উদ্দেশ করে মীর কাসেম আলী ‘মিথ্যা ঘটনা’, ‘মিথ্যা সাক্ষী’, ‘কালো আইন’, ‘ফরমায়েশি রায়’ ইত্যাদি মন্তব্য করেন, যা সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননা। আদালতের রায়ে কোনো পক্ষ বিক্ষুব্ধ হলে আইনানুগভাবেই তার প্রতিবাদ জানাতে পারে। উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারে। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই আদালতকে চ্যালঞ্জ বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে না।
অথচ মীর কাসেম আলী সেই কাজটিই করেছেন। তিনি কেবল আদালত নয়, আইন, বিচারক, সাক্ষী সবার প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার খবর অনুযায়ী তিনি ‘শয়তান’ ‘শয়তান’ বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন।
এসব আচরণ ও মন্তব্যের মাধ্যমে একাত্তরের আলবদর কমান্ডার নিজের ক্লেদাক্ত চরিত্র ও বিকট চেহারাই সবার সামনে তুলে ধরলেন। আদালত তাঁর রায়ে যে মীর কাসেম আলীকে ‘বাঙালি খান’ বলে অভিহিত করেছেন, মীর কাসেম আলী স্বীয় আচরণ দিয়ে তারই সত্যতা প্রমাণ করলেন।

যুদ্ধাপরাধ আদালতে এর আগে যে ১০টি রায় হয়েছে, কোনোটিতেই এ রকম ঘটনা ঘটেনি। একটি ছাড়া বাকি সব রায়ই হয়েছে আসামিদের উপস্থিতিতে। কিন্তু তাঁদের কেউ আসামি মীর কাসেম আলীর মতো দম্ভ দেখাননি।
মীর কাসেম আলী যদি আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে না চান, যদি উচ্চ আদালতে আপিল না করেন, সেই অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু তাই বলে আদালতকক্ষে মাননীয় বিচারকদের গালিগালাজ করার অধিকার তাঁর নেই।