• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

মানিকগঞ্জে প্রাথমিক স্কুল-ক্লাস নেয় দপ্তরি-ছাত্র


প্রকাশিত: ৯:৪৩ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৪ বার

স্টাফ রিপোর্টার /মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকেন ঢাকায়। আর ক্লাস নেন সদ্য এইচএসসি পাস করা বাবু ও দপ্তরি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী, বাঁচামারা ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নে মোট ৩৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন বেহাল দশা বিরাজ করছে।কিন্তু রহস্যজনক কারণে শিক্ষা কর্মকর্তারা এর কোনো দেখভাল করছে না।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভাড়া করা শিক্ষক আর দপ্তরি দিয়ে ক্লাস চলছে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিনা ছুটিতে বাড়িতেই দিব্যি সময় কাটাচ্ছেন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা। এমনকি কালেভদ্রে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষকও। এসব অনিয়মের বিষয়ে কোনো খোঁজ নেই শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের চরগোবিন্দপুর চরের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা অনুযায়ী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষক ফাতেমা তোজ জোহরা। তবে ক্লাস নিচ্ছেন সদ্যই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ছাত্র বাবু মোল্লা। টাকার বিনিময়ে সহকারী শিক্ষক ফাতেমার হয়ে ক্লাস নেন তিনি। বাবু মোল্লা জানান, শিক্ষিকা ফাতেমা তিন মাস থেকে স্কুলে আসেন না।

তার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তিনি মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন পান। ৩১ নম্বর যমুনা চরকাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক দিলরুবা ইয়াসমিনও ক্লাস নেন না বছর হয়ে গেছে। তিনি ভাড়া করেন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র মোহাম্মদ আলীকে। আলীও কিছু দিন পর থেকেই অনুপস্থিত। এখন ভরসা দপ্তরি রহিম।

দপ্তরি আব্দুর রহিম বলেন, আমি স্কুলের আশপাশে থাকি। আমার পাঁচটা ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে। তাই শিক্ষকের নির্দেশনায় মাঝে মাঝে আমার ক্লাস নিতে হয়।৩১ নং যমুনা চরকাটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, দিলরুবা ২০২৩ সালে একদিনও আসেনি। অন্যদিকে ফাতেমা প্রায় তিন মাস থেকে আসেন না। আমি এবং দপ্তরি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে থাকি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফাতেমার দেখা মেলে জেলা সদরের কাটিগ্রামের একটি ভাড়া বাসায়। অন্যদিকে দিলরুবার মানিকগঞ্জের বাসায় থাকেন তার শ্বশুর-শাশুড়ি। আর তিনি থাকেন ঢাকায়।সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা তোজ জোহরা বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় যখন স্কুলে যেতে না পারি তখন এ কাজ করি যেন বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি স্কুলে যাওয়ার জন্যে।

শিক্ষিকা দিলরুবা ইয়াসমিনের স্বামী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দিলরুবা অসুস্থ থাকায় তাকে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে। ৫৫নং চরকাটারী শিকদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও বেহাল অবস্থা। দুপুর আড়াইটায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় স্কুল। সাংবাদিক যাওয়ার খবরে ছুটে আসেন প্রধান শিক্ষকসহ ২ জন সহকারী শিক্ষক। খুলে দেন স্কুলের তালা।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল। বেলা তিনটার সময় রাস্তা থেকে প্রধান শিক্ষক আসতে বললে আমরা পুনরায় স্কুলে আসি।৫৫নং চরকাটারী শিকদারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলের পাশেই ছিল। আপনারা আসার কারণে আমরাও আসলাম।

৮০ নং চরকাটারী করিম মোল্লার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যা কিছুটা ভিন্ন। স্কুলে ৭-৮ জন শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষকের দেখা মিলে। কিন্তু ছিলেন না প্রধান শিক্ষক। ওই শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষিকা জনাব শাহানারা স্কুলে আসেন সপ্তাহে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই দিন।

এদিকে নিয়মে থাকলেও প্রতি তিন মাসে একদিনও স্কুল পরিদর্শনে যাননি সহকারী উপজেলা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। মানিকগঞ্জ দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, তিন মাসে একবার পরিদর্শন করা পর্যাপ্ত না। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায়। আমাদের পর্যবেক্ষণ আরও বাড়ানো দরকার এবং এটার আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।মানিকগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আখতার বলেন, আমি অবশ্যই বিষয়টির সত্যতা যাচাই করব। আমার কাছে সত্যতা আসলে আমি এর জন্য পদক্ষেপ নিব।