• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

বেতন কাঠামো নিয়ে চরম অস্থির শিক্ষক সমাজ-কাল থেকে আন্দোলন


প্রকাশিত: ১:৩৪ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২২ বার

2008-টিপু সুলতান.ঢাকা: পে-স্কেল নিয়ে দেশের শিক্ষক সমাজ এখন মাঠের আন্দোলনে।প্রায় তিন মাস ধরে প্রস্তাবিত বেতনকাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। সরকার এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ না নেযায় কার মঙ্গলবার থেকে আল্দোলনে যাচ্ছেন দেশের সকল শিক্ষক সমাজ।
তাঁরা বলেছেন, বেতন-মর্যাদাসহ আমাদের দাবি মানতে হবে।
এদিকে বিভিন্ন দাবিতে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় সর্বস্তরের শিক্ষক সংগঠনগুলো কর্মসূচি দিয়েছে বা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। কাল মঙ্গলবার ও ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের ৩৭টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
প্রায় তিন মাস ধরে প্রস্তাবিত বেতনকাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাও সরকারি চাকুরের মতো গত ১ জুলাই থেকে তাঁদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ১ অক্টোবর থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রাথমিক শিক্ষকেরাও বেতন ও পদমর্যাদার প্রশ্নে অক্টোবর থেকে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশের সবচেয়ে বড় পেশাজীবী শিক্ষকেরা আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ায় অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। গত জানুয়ারি থেকে প্রায় তিন মাস বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন চলাকালে সহিংসতা ও নৃশংসতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লেখাপড়া ব্যাহত হয়। বছরের শেষভাগে পাঠ্যক্রম শেষ করার তাগিদ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে, তাই লেখাপড়ার চাপ বেড়েছে। বছরের শেষভাগে অনুষ্ঠিত হবে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মতো বড় পাবলিক পরীক্ষা। এ সময়ে শিক্ষকসংগঠনগুলোর আন্দোলন বা আন্দোলনের হুমকিতে সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও আছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণ তিনিও বুঝতে পারছেন না। তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের দাবির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে চিঠিও লিখেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগে এটি মন্ত্রিপরিষদে উঠবে।
তবে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সংগঠনগুলোর জোট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, প্রস্তাবিত বেতনকাঠামোটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বিতর্কিত। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের অবস্থান কয়েক ধাপ অবনমিত হবে। মর্যাদা রক্ষার শঙ্কা থেকেই তাঁরা এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেতন কমিশন বেতনকাঠামো ঠিক করেছে, সচিব কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এখন এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে। তাই এটা নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত এটা চূড়ান্ত কিছু নয়।
বেসরকারি শিক্ষকদের কর্মসূচি: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে ১ অক্টোবর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করবেন বেসরকারি শিক্ষকেরা। এরপরও দাবি আদায় না হলে আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষক মহাসমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি নামে বেসরকারি শিক্ষকদের একটি অংশ।
ওই সমিতি শিক্ষকদের আলাদা বেতনকাঠামো প্রণয়ন, চাকরির বয়সসীমা ৬৫-তে উন্নীতকরণসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বশীল অন্য শিক্ষক সংগঠন বা মোর্চা কর্মসূচি না দিলেও ১ জুলাই থেকে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে।
বেসরকারি কয়েকজন শিক্ষক নেতা বলেন, অতীতে যতবার বেতন স্কেল দেওয়া হয়েছে, ততবার বেসরকারি শিক্ষকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কেলভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এর আগে সব সময় বেসরকারি শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাঁরা যে জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হবেন না, এ কথা কেউ বলেনি।
প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি: প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের সরকারীকরণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোর গেজেট প্রকাশ, জরাজীর্ণ ভবন সংস্কারসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দাবি আদায়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ১ নভেম্বর থেকে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস চত্বরে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরাও এখন খুশি নন। প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু গত আগস্টের মাঝামাঝি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আপাতত নন-গেজেটেড পদমর্যাদা দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এ ধরনের উদ্যোগে প্রধান শিক্ষকেরা হতাশ হয়েছেন।