• রোববার , ১৯ মে ২০২৪

বি-বি’র ভল্টের সোনায় তেলেসমাতি!


প্রকাশিত: ৯:৪৭ পিএম, ১৭ জুলাই ১৮ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার

vvvবিশেষ প্রতিনিধি :  এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের (বি-বি) ভল্টে রক্ষিত সোনা বদলে যাওয়া নিয়ে তোলপাড় অবস্থা শুরু হয়েছে। ঘটনাটির নেপথ্যে কোনো কুচক্রি মহলের হাত রয়েছে বলে অাঁচ করছেন গোয়েন্দারা। যদিও আজ বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটা করে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শিরোনামের খবরটি সত্য নয়। তারা আরো জানায় যে, ভল্টে স্বর্ণ যেভাবে রাখা হয়েছিল সেভাবেই আছে। কোনো প্রকার হেরফের হয়নি। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে   ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি জমা রাখা হয়েছিল, পরে তা হয়ে গেছে মিশ্র বা সংকর ধাতু! ২২ ক্যারটের সোনা ১৮ ক্যারেট হয়ে গেছে। কিন্তু সোনা কীভাবে সংকর ধাতু হয়ে গেল? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের অনুসন্ধান চালায়। সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এই ভয়ংকর অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটির ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে প্রায়ই ক্ষেত্রেই এসব অনিয়মের সন্ধান পাওয়া গেছে।ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন।

পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। এর দুই বছর পরে সেখানে ভূতুড়ে কাণ্ড ধরা পড়ে। ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায় পরিদর্শন দল। এছাড়া আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রনে তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে।প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে সোনা জমা করা হলে যে রসিদ দেওয়া হয় তার সঙ্গেও জমা থাকা সোনার কোনো মিল পায়নি পরিদর্শন দল।

সেখানে দেখা গেছে সোনার অলংকার এবং সোনার বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি সোনার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার। কারণ কম ক্যারেটে নথিভুক্ত থাকায় নিলাম বা অন্য উপায়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত ক্যারেটের বিপরীতে প্রাপ্য টাকা সরকার পাবে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যারেটের তারতম্যের কারণে ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ সরকার।
এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। এই ঘটনাকে অসম্ভব এবং অকল্পনীয় বলেও দাবি করেছেন তিনি।ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের এই সক্টর কিছু নির্ধারিত মানুষের হাতে থাকে। তাই যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো আসলে ঘটনা বের হয়ে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা লজ্জার ব্যাপার।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে দেশে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে সোনা আটক করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকে। জমার পরে সেগুলো ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বর্ণকার দিয়ে পরীক্ষা করে সোনার মান নির্ধারণ করা হয়। ওই সময়ে সেখানে ব্যাংক, এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকে। মান নির্ধারণের পরে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ঠ সংস্থাকে রসিদ প্রদান করে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংককে আধা-সরকারি পত্র পাঠিয়েছেন। যাতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এনবিআর সূত্র জানায়, এনবিআর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। সেখানেই এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ভৌতিক অনিয়মের কথা প্রকাশের পরে মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে এই ঘটনাকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রবিউল হুসাইন। তিনি বলেন, ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ সত্য নয়, ভল্ট থেকে স্বর্ণ হেরফের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে এই ঘটনা নিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা একটি দুঃখজনক ঘটনা। এর সঙ্গে সুবিধাবাদি গ্রুপ জড়িত। তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে, প্রতিষ্ঠানটি মানুষের আস্থাও হারাবে।