• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বাড়িওয়ালার বুদ্ধিমত্তায় সুইসাইডার আর্জিনা-জসিমের জেএমবি মিশন ফেল


প্রকাশিত: ১২:৪৩ এএম, ১৬ মার্চ ১৭ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭১ বার

gongi-www.jatirkhantha.com.bd.1বিশেষ প্রতিনিধি  :
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর শহরে ‘জেএমবির জঙ্গিদের’ একটি আস্তানা থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ এক দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর পাশের ওয়ার্ডে আরেক বাড়ি ঘিরে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ভবন থেকে ছোড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। অভিযানে অংশ নিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন র‌্যাব ও সোয়াট সদস্যরা।

বাড়িওয়ালার কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে পৌর এলাকার নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় দোতলা সাধন কুটিরের নিচতলায় পুলিশের অভিযান শুরু হয়। সেখানে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ জসিম ও আর্জিনা নামের এক দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যে পাশের প্রেমতলা ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ার ‘ছায়ানীড়’ নামের আরেকটি দোতলা বাড়ি ঘিরে ফেলা হয় বলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (উত্তর) মসিউদ্দোল্লাহ রেজা জানান।

তিনি জাতিরকন্ঠকে বলেন, নামার বাজারের ওই বাসায় অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সুইসাইড ভেস্ট পাওয়া গেছে। পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট সেখানে কাজ করছে। প্রেমতলার বাড়িতে অভিযানে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক আহত হয়েছেন জানিয়ে মসিউদ্দোল্লাহ রেজা বলেন, ভেতরে থাকা জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে সেখানে অভিযান চলছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নামার বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল ইসলাম চৌধুরী মুরাদ বলেন, সাধন কুটিরে অভিযানের পর পুলিশের একটি দলের সঙ্গে তিনিও প্রেমতলায় আসেন। পুলিশ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পরিদর্শক মোজাম্মেল। তিনি ছায়ানীড়ের গেইটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোতলা থেকে গ্রেনেড চার্জ করে। বিস্ফোরণে পায়ে আঘাত পেয়ে তিনি পড়ে যান। পরে ওসি ইফতেখার হাসানের নেতৃত্বে আরেকটি দল এসে বাড়িটি ঘিরে ফেলে।

পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে থেকে ওই বাড়ি থেকে জঙ্গিরা মোট সাতটি গ্রেনেড ছোড়ে বলে কাউন্সিলর মুরাদ জানান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। মনে হচ্ছে বিস্ফোরকগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী। ওই বাড়িতে কয়েকটি পরিবার আটকা পড়েছে।

ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীরা জাতিরকন্ঠকে জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোয়াট সদস্যরা ওই বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেন এবং চারপাশে রেকি করা শুরু করেন। পরে ওই বাড়ি ঘিরে তীব্র আলোর ব্যবস্থা করা হয়। একটি সাদা রঙের সাঁজোয়া যানও আনা হয় সেখানে। রাত ১০ টার পর গুলির শব্দ পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন ইউসুফ।

এর আগে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাং শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ির মালিক আমাদের বলেছেন, দোতলায় তিনজন আছে। তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। আমরা তাদের ধরতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ভবনের নিচতলায় থাকা দুটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

ক্লু-ভুয়া পরিচয়পত্র

আমিরাবাদের সাধন কুটিরের মালিক সুভাষ চন্দ্র দাশ জানান, জসিম নামের এক ব্যক্তি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কাপড়ের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তার দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি ইউনিট ভাড়া নিতে চায়। ভাড়ার আলোচনা হয়ে গেলে সুভাষ পুলিশের তথ্য ফরম পূরণের জন্য ওই ব্যক্তিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতে বলেন। ওই ব্যক্তি ২ মার্চ যে এনআইডির কপি দেন, সেখানে নাম লেখা ছিল কেবল জসিম, সঙ্গে রামুর একটি ঠিকানা।

এর মধ্যে জসিম মালপত্র ও পরিবার নিয়ে ১২ মার্চ বাসায় ওঠেন। সেদিন ওই বাসায় গিয়ে ‘প্রচুর সার্কিট ও গোলাকার ধাতব বস্তু’ দেখতে পেয়ে প্রশ্ন জাগে বাড়িওয়ালা সুভাষের মনে। তার প্রশ্নের জবাবে জসিম দাবি করেন, কাপড়ের পাশাপাশি তার লাইটিংয়েরও ব্যবসা রয়েছে।

সুভাষ বলেন, পরে আমি তার কাছ থেকে সার্কিটের নমুনা নিয়ে পরিচিত এক মেকানিককে দেখাই। সে জানায়, এগুলো টাইম কার্ড।
এরপর বুধবার ওই এনআইডি নিয়ে স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করে বাড়িওয়ালা জানতে পারেন, সেটি ভুয়া।

এরপর তিনি বাড়ি ফিরে জসিমদের বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কথা কাটাকাটির মধ্যে একজোড়া বুট জুতার মধ্যে ‘পিস্তল দেখে’ চিৎকার দেন। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে জসিম ও আর্জিনাকে আটক করে এবং ওই নারীর কোমরে বিস্ফোরক রাখার বেল্ট পান বলে জানান সুভাষ। পরে পুলিশ এসে ওই দম্পতিকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রেমতলার জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায়।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, জসিম ও আর্জিনা দুজনেই জেএমবি সদস্য। ওই দম্পতির তিন মাস বয়সী একটি ছেলে রয়েছে বলে জানান সুভাষ।চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে বেশ কিছুদিন পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও সম্প্রতি কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় দুই জঙ্গিকে আটক করার পর তাদের একজনকে নিয়ে ওই রাতেই মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল এবং ৪০টি বিস্ফোরক জেল।

এরপর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।