• রোববার , ১৯ মে ২০২৪

বাসভাড়া নিয়ে রীতিমত ছিনতাইবাজী হচ্ছে!


প্রকাশিত: ৫:১৬ এএম, ১১ অক্টোবর ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৯ বার

লাবণ্য চৌধুরী:    বাসভাড়া নিয়ে রীতিমত ছিনতাইবাজী হচ্ছে! নৈরাজ্যকর অবস্থা এমন যে, বাড়তি ভাড়া না দিলে নাজেহালসহ পকেট থেকে টাকা কেড়ে নেয়ার অবস্থা সৃষ্ঠি হয়েছে  রাজধানীর গণপরিবহনে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সরকার কিলোমিটারে ১০ পয়সা ভাড়া বাড়িয়েছে। কিন্তু মালিকরা কিলোমিটারে বাড়িয়েছেন ১ টাকা পর্যন্ত।স্বল্প দূরত্বের কোনো ভাড়া মানছেন না মালিকরা। মিনিবাসে প্রেস ক্লাব থেকে ফার্মগেটের ভাড়া হওয়ার কথা ৮ টাকা। বসুমতি, নিউভিশন পরিবহনে নেওয়া হচ্ছে ১২ টাকা। গুলিস্তান থেকে আবদুল্লাহপুরগামী বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনে (৩ নম্বর বাস) আগে শাহবাগ থেকে মহাখালীর ভাড়া নেওয়া হতো ৬ টাকা। নতুন ভাড়া কার্যকরের BDbus_boarding-www.jatirkhantha.com.bdদিন থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮/১০ টাকা।

সরকারের তরফ থেকে ভাড়া নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও সরেজমিনে দেখা বাসভাড়া নিয়ন্ত্রনে কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছেনা। আগেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করতেন মালিকরা। ভাড়া বৃদ্ধির পর আরেক দফায় যথেচ্ছ ভাড়া বাড়িয়েছেন তারা।

মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটে চলে এটিসিএল পরিবহন। প্রেস ক্লাব থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত আগে নিত ১০ টাকা। অথচ ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া ছিল ৭ টাকা। আগেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩ টাকা বেশি নেওয়া হতো। গত সোমবার থেকে ৫ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে এটিসিএল। ১০ টাকার ভাড়া এখন হয়েছে ১৫ টাকা।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সরেজমিনে দেখা যায়, ১০ টাকার টিকিটের গায়ে ১৫ টাকা সিল দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা। তাই এ পথে ১ পয়সাও বাড়ার কথা নয়। তারপরও কেন দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নে এটিসিএলের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। মালিক যেভাবে টিকিট দিয়েছে, সেভাবেই বিক্রি করছি।’ প্রতিষ্ঠানটির মালিক দীপু চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। তবে বারবার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে এটিসিএল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গ্যাসের (সিএনজি) দাম বৃদ্ধিতে সরকারি সিদ্ধান্তে গত ১ অক্টোবর ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী চার জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ানো হয়। বাসে কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বাসে সর্বনিম্ন ৭ টাকা ও মিনিবাসে সর্বনিম্ন ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে সরকার।

এখনও অধিকাংশ বাসে ভাড়ার তালিকা নেই। গতকাল দুপুরে শ্যামলীর শিশুমেলা থেকে মতিঝিল রুটে চলাচলকারী রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসির বাসে উঠেও দেখা যায়, ভাড়ার তালিকা নেই। চালক জানালেন, ডিপো থেকে তালিকা দেওয়া হয়নি। সরকারি বাসেও ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।সড়ক পরিবহন সচিব এমএস সিদ্দিক বলেন,  কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

গত রোববার ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সভায় সরকার নির্ধারিত ভাড়া মেনে চলার সিদ্ধান্ত নেন মালিকরা। তবে সভায় উপস্থিত সমিতির নেতাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও বেশি ভাড়া নিচ্ছে। একই দিন ৫৪টি বাসকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) একজন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আগের দিন যে পরিবহনকে জরিমানা করা হয়েছে, পরের দিন দেখা যায়, ওই পরিবহনও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করেনি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির ‘ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপকমিটি’ দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নির্ধারিত যত টাকা বা পয়সা ভাড়া বাড়ার কথা তার চেয়ে ১০ গুণ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছেন মালিকরা। উপকমিটির ১৩টি পর্যবেক্ষক দল গত এক সপ্তাহে রাজধানীর ৫০টি রুটের ভাড়া পর্যবেক্ষণ করেছে। আজ রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে উন্মুক্ত গণশুনানি করবে উপকমিটি। উপকমিটির সমন্বয়ক ও যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আগে থেকেই মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিতেন। ভাড়া বৃদ্ধির পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে।’

বঙ্গবাজার-মানিকগঞ্জ রুটে (রুট-এ/২২৪) চলাচলকারী নূরহাজান পরিবহনে আগে ভাড়া নেওয়া হতো ৮০ টাকা। কিলোমিটারে ১০ পয়সা হিসেবে ৫৩ কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ার কথা ৫ টাকা ৩০ পয়সা। গত ৪ অক্টোবর থেকে এই পরিবহনে এক লাফে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা নিচ্ছে।

মিরপুর-১০ থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১৫ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৮ টাকা। গত শুক্রবার এনা ট্রান্সপোর্টের বাসে ভাড়া নিয়ে যাত্রী-চালকের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এই পরিবহনে মিরপুর-১০ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৮ টাকা। আগে নেওয়া হতো ১৪ টাকা। অর্থাৎ আগেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩ টাকা বেশি নিত। একাধিক যাত্রী জানান, ১ অক্টোবর থেকে আরও ৪ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে। যাত্রীরা জানান, কারওয়ান বাজার পার হলে যাত্রী যেখানেই নামুক, ভাড়া ২৮ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

গেটলক সার্ভিসের নামে এ প্রতারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। যাত্রী যেখানেই নামুক, বাসের শেষ গন্তব্যের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর-১০ রুটে চলে হিমাচল পরিবহন। এই পরিবহনে উঠলেই ভাড়া ৩০ টাকা। গুলিস্তান থেকে ফার্মগেট পর্যন্তও ৩০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। গুলিস্তান থেকে শাহবাগ ৭ টাকার ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। অথচ দূরত্ব হিসাবে গুলিস্তান থেকে মিরপুর-১০ নম্বরের ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ২৩ টাকা।

ফার্মগেট থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত ৪৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বে স্বাধীন পরিবহনে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। অথচ এই দূরত্বে কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসাবে ভাড়া হওয়ার হওয়ার কথা ৭৪ টাকা। আগে নেওয়া হতো ৮০ টাকা। আগেই বর্তমান ভাড়ার চেয়ে ৬ টাকা বেশি নেওয়া হতো। ভাড়া বৃদ্ধির পর আরও ২০ টাকা বেড়েছে। মিরপুর-১২ থেকেও মাওয়ার ভাড়া ১০০ টাকা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা থেকে রাজধানীর আসাদগেট পর্যন্ত মেঘলা পরিবহনের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। আগে ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা। ১ অক্টোবর থেকে এক লাফে ১০ টাকা বেড়েছে। অথচ দূরত্ব হিসাবে সর্বোচ্চ ৩ টাকা ভাড়া বাড়ার কথা।

মালিক সংগঠনের শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহও স্বীকার করেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, আমরা বিআরটিএকে বলে দিয়েছি যে পরিবহনই বেশি ভাড়া নেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’-