• মঙ্গলবার , ৭ মে ২০২৪

‘বাজেয়াপ্ত কর যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ’


প্রকাশিত: ২:০১ পিএম, ২৩ নভেম্বর ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭১ বার

saka-mujahid-www.jatirkhantha.com.bdবিশেষ প্রতিবেদক:  একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জোরালো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে আন্দোলন করে আসা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সাকা-মুজাহিদের অর্থ বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান জানিয়েছে।তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করলে শহীদ পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচার হবে না। নুরেমবার্গ ট্রায়ালে এভাবে দণ্ডপ্রাপ্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদাহরণ আছে। জামায়াতের নেতা ও তাদের আর্থিক খাত বাজেয়াপ্ত না করলে এ দেশে আবার জামায়াত ডালপালা তৈরি করবে। জঙ্গি তৈরি হবে। তাই তাদের অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে দুই মানবতাবিরোধী অপরাধীর সাজা শেষ হয়ে যায়নি। এখন এ অপরাধীদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে।তিনি বলেন, সাকা স্বাধীনতার পরও ৪৪ বছর বেঁচে ছিলেন। তার ফাঁসিই যথেষ্ট নয়, তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এ সম্পদ শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। সাকা ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এজেন্ট। সাকাকে বাঁচানোর জন্য সে দেশের কূটনীতিকরা মরিয়া হয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছেন ও তাকে রক্ষার ষড়যন্ত্র করেছেন। একাত্তরে পাকিস্তানের সামরিক পরাজয় হয়েছিল। কিন্তু এবার সাকার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরাজয় হলো। সাকা মনে করেছিলেন তার হাত অনেক লম্বা। কিন্তু বাংলাদেশের আইন প্রমাণ করেছে, আইনের হাত তার চেয়েও অনেক লম্বা।

জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী শাহরিয়ার কবির বলেন, শহীদ পরিবারের ৪৪ বছরের যে লাঞ্ছনা, তাদের দুঃসহ বেদনা, জীবনযুদ্ধ, ৪৪ বছরের ক্ষতিটা; পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানোর যে ক্ষতি, প্রতিদিন তাদের সে ক্ষতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে পারেননি, ঠিকমতো লেখাপড়া করাতে পারেননি। কোনো স্বাদ-আহ্লাদ মেটাতে পারেননি। অভাবে অভাবে জর্জরিত ছিল তাদের জীবন।

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ক্ষমা চাওয়ার পর এখন তার দলেরও অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। কারণ তারা রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা জঙ্গি অর্থায়নে ব্যয় করছে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে এ অর্থ ব্যয় করছে। তাই তাদের অর্থের উৎস্য বন্ধ করাসহ সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে এ থেকেই ভাতা দেওয়া সম্ভব। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে সরকারকে জনগণের রাজস্ব থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিতে হবে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা যে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, এ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারকে দিতে হবে। না হলে শহীদ পরিবারের প্রতি আমরা ন্যায়বিচার করতে পারব না। তিনি বলেন, রায়ের মধ্যেই তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের কথা থাকা উচিত ছিল। কর্নেল তাহের ও আমাদের অন্য দুই ভাইকে গোপন বিচারেও সাজার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ ছিল। অথচ সাকা-মুজাহিদের রায়ে এসব নেই।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, আমরা সার্বিকভাবে চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হোক। কারণ তারা এ টাকা-পয়সা লুটপাট করে, প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে অর্জন করেছে। এ অর্থ এখন তারা দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে ব্যবহার করছে। কাজেই তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা দরকার। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম বিভিন্ন সময়ে এ দাবিও জানিয়ে আসছে।

শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছি। মানবতাবিরোধীদের বিচারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের যাবতীয় সহায়-সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের হাতে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন অনেক ক্ষতিগ্রস্তকেই চিনি, যারা এখনও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া এসব অপরাধীর সম্পদ মৌলবাদের অর্থনীতিকে আবারও সমৃদ্ধ করবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের কারণে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপাজর্নক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক শহীদ পরিবারে অমানিশার অন্ধকার পর্যন্ত নামে। শহীদ পরিবারগুলো মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ একই সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এখন সরকারের উচিত তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে যেসব শহীদ পরিবারের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের কল্যাণে এসব অর্থ ব্যয় করা। যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করলে তারা এসব অবৈধ অর্থ জঙ্গি অর্থায়নে ব্যয় করবে। রাষ্ট্রের উচিত তাদের সব সম্পদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।