• সোমবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ফেসবুকে হীরক রাজা’ বদির গোমর ফাঁস করলেন ছাত্রলীগ নেতা জয়


প্রকাশিত: ১১:৪০ পিএম, ২২ জুন ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬১ বার

 

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্টার : কক্সবাজারের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে ‘হীরক রাজার গল্প’ লিখেছেন জেলা ছাত্রimagesলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ফেসবুক পেজে ‘এক হীরক রাজার গল্প’ শিরোনামে স্ট্যাটাস দেন তিনি।সেখানে আবদুর রহমান বদির উত্থানের গল্প উল্লেখ করে তার ভয়াল ছোবল থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর মিনতি জানিয়েছেন এ ছাত্রনেতা।

তার লেখা স্ট্যাটাসটি তুলে দেয়া হলো-

এক হীরক রাজার গল্প
এজাহার মিয়া কোম্পানি’র জন্ম মিয়ানমারে। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন রোহিঙ্গা। দেশ স্বাধীনের আগে তিনি নাফ নদীর তীরে এসে বসতি গড়েন এবং শুরু করেন স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। চোরাচালান ব্যবসার পাশাপাশি এজাহার মিয়া কোম্পানি টেকনাফ শহরে একটি হোটেল খুলে বসেন। সেই হোটেলটির নাম ছিলো ‘নিরিবিলি’।

১৯৭৮ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টেকনাফ সফরে আসলে এজাহার মিয়া কোম্পানির হোটেলে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে এজাহার কোম্পানি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং তার হাত ধরেই টেকনাফে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এজাহার মিয়া কোম্পানি ছিলেন টেকনাফ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

টেকনাফ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও তৎকালীন শীর্ষ চোরাচালানকারী এজাহার মিয়া কোম্পানি’র সম্পর্কে এই তথ্য তুলে ধরার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে আর তা হলো এই এজাহার মিয়া কোম্পানি’র সুযোগ্য পুত্রই দেশের ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি আবদুর রহমান বদি। বর্তমানে তিনি উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য।

ইশতিয়াক আহমেদ জয়ের ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসের একাংশ
তবে তার দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারী হিসেবে। বাবার হাত ধরেই পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতি দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনে হাতেখড়ি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বদি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপক চেষ্টা চালান।

পরবর্তীতে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে হেরে যান। একই বছরের ১২ জুনের নির্বাচনে বিএনপির থেকে মনোনয়ন পেলেও পরে তা ফিরিয়ে নেয়া হয়।

এরপর তিনি বিএনপির ছত্রছায়ার টেকনাফ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কয়েক বছর পর দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে তিনি গিরগিটির মতো রঙ পাল্টিয়ে যোগ দেন আওয়ামী রাজনীতিতে। বাগিয়ে নেন মনোনয়ন, বনে যান আইনপ্রণেতা।

দেশের শীর্ষ এই মাদক ব্যবসায়ী বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য অপরাধ, অরাজকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বিএনপি-জামায়াতপ্রীতির কারণে তিনি এখন ব্যাপকভাবে বিতর্কিত। ধারণা করা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই রাজনীতি ও ইয়াবা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য আবদুর রহমান বদি আশ্রয় নিয়েছেন নানা রকমের অপকৌশলের।

১. এমপি বদি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছেন, যারা নির্বাচনের সময় বদির ভোট ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে।

২. অনেকটা প্রকাশ্যেই সদ্য সমাপ্ত ইউনি নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফের ১১ টি ইউনিয়ন এর ৭টিতে বদি তার প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করেছেন এবং তার কাছের আস্থাভাজন লোকজন যারা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাদের নির্বাচিত করে এনেছেন।

৩. বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, এমপি বদি বিপুল অংকের কালো টাকা মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালেয়শিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে পাচার করেছেন।

৪. মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাথে বদির রয়েছে গোপন সম্পর্ক। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে এমপি বদি বিপুল পরিমাণ অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র তার নিজ এলাকায় প্রবেশ করিয়েছেন।

৫. লোকমুখে শোনা যায়, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলে বদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে নিজস্ব ভোট ব্যাংকের মাধ্যমে জয়লাভ করার চেষ্টা করবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা-
নেত্রী, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমার সুযোগ হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতি খুব কাছ দেখার ও বুঝার। সুযোগ হয়েছে প্রত্যক্ষ করার দলের জন্য এমপি বদি কতোটা ভয়ংকর। নিজ দলের বিরুদ্ধে সে গড়ে তুলেছে নিজস্ব দল উপদল। তার কালো টাকার প্রভাব ও হিংস্রতার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত অনেক নিরীহ সাধারণ মানুষ এবং প্রকৃত তৃণমূলের পোড়খাওয়া আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে ইয়াবার শহরে। এই লজ্জা আমরা রাখি কোথায়?

প্রিয়নেত্রী,
আমার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। তবুও নিজেকে কখনো এতিম ভাবি নাই। আমার বিশ্বাস আপনিই আমার মা, আপনিই আমার বাবা, আপনিই আমার শেষ আশ্রয়স্থল। আপনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দ্বারা আপনি নিশ্চয়ই সব জানেন এবং বোঝেন। তাই সন্তান হিসেবে মায়ের কাছে অভিযোগ আমি করতেই পারি…।

প্রাণপ্রিয় নেত্রী,
আমি একজন মুজিব রণাঙ্গনের আদর্শিক সৈনিক এবং আপনার আবেগের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে বলতে চাই- আবদুর রহমান বদির সাথে আমার ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোনো বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নেই, কখনও ছিল না। বিবেকের তাড়নায় সংগঠনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে বদির সংগঠন বিরোধী অপকর্ম আপনাকে জানানো পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করছি। আমার বিশ্বাস আপনি একটু খোঁজ নিলেই সব জানবেন।

মমতাময়ী নেত্রী,
সবশেষে আবারো বলছি- বদি নামের এই হিংস্র দানবের ছোবল থেকে বাংলাদেশের যুব ও তরুণ সমাজকে বাঁচান, বদি নামের এই মাদক সম্রাটের হাত থেকে উখিয়া টেকনাফের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে বাঁচান, বাঁচান প্রিয় পযটন শহর কক্সবাজারকে। আপনি বাদে আমাদের এই আকুতি ও কান্না আর কেই বা বুঝবে…?