• সোমবার , ৬ মে ২০২৪

প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন আসছে-১০ জেলা ঝুঁকিতে-


প্রকাশিত: ৭:১৩ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৬ বার


বিশেষ প্রতিনিধি/ লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়ে ১০ জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে আবহাওয়াবিদরা। এগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। উপকূল থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে দশ জেলার ১৫ লাখ মানুষকে।

সেই সঙ্গে সারাদেশের নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। মঙ্গলবার দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত সারাদেশের নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা নদী বন্দরে এক নম্বর ও চাঁদপুরের পরে নদীতে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত রয়েছে। কিন্তু সমুদ্র বন্দরে সংকেত বাড়ছে। চাঁদপুরের তিন নদীর মোহনা বিপদজনক হয়ে উঠেছে। একারণে আগাম সতর্কতা হিসেবে সদরঘাট থেকে চাঁদপুরসহ সব গন্তব্যে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিআইডব্লিটিএ এর উপ-পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দরের কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবটা বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরিশাল ও ভোলায় বেশি পড়ে। তাই সকাল থেকে বরিশাল-ভোলাসহ বিভাগের সব নদ-নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা জারি থাকবে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের জন্য উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরকে সাত নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় এনেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ঘোষণার পরপরই লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌরুটে জাহাজ ও লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার, সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি সংক্রান্ত সভা শেষে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের গতিপথ, গতি প্রকৃতি ও চরিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করতে পারে। তিনি বলেন, সর্বশেষ যে পর্যবেক্ষণ দেখছি এটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে। আমাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আশা করছি রাত আটটার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গার মানুষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারব। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা করতে ১০টি জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে বরিশাল ও চট্টগ্রাম মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। এর প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলের ১৫টি জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব জেলায় সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

এবার হামুনের নাম দিয়েছেন ইরানের আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। যেটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূল অভিমুখে। এ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকাল থেকে ভোলা হয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে।

ঘূর্ণিঝড়টি ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূলে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসেরও আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট মেঘমালার অগ্রভাগ এরই মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করেছে। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।